পেশাগত পরিচিতির পাশাপাশি লেখালেখিতে এবার লেখকের খাতায় নাম লেখালেন চলতি দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম। অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার প্রথম লেখা স্মৃতি গদ্য ‘পীড়নে পীড়িত জীবন’। শব্দশৈলীর প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন হিমেল হক।
লেখালেখি অবশ্য আগে থেকেই করতেন তিনি। তবে বই আকারে ‘পীড়নে পীড়িত জীবন’তার প্রথম লেখা স্মৃতি গদ্য।
‘পীড়নে পীড়িত জীবন’ গ্রন্থটি চিরায়ত বাংলার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য সন্তানের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে মা-বাবার আত্মত্যাগ ও উৎকণ্ঠার সচিত্র স্বরূপ। লেখক শৈশবস্মৃতিকে অবলম্বন করে অন্বেষণ করতে চান সামাজিক মানুষ-জীবনের বাঁচার রসদ। পারিবারিক অনুশাসন, আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও পেশাগত জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অন্বিত সামাজিক জীবনবোধের অনন্য প্রতিফলন ঘটেছে তার অতন্দ্র লেখনীতে।
পেশাগত বিচিত্র অভিজ্ঞতার আলোকে এ গ্রন্থে চিত্রিত হয়েছে খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করা হলি আর্টিজানের প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত ব্যবস্থাপনা, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ভ্রমণ ও কর্মপ্রবাহ। সম্প্রতি করোনাভাইরাস মহামারিতে আক্রান্ত সুপ্রিয় সহকর্মীদের মৃত্যুবরণ তাকে প্রবলভাবে বিচলিত করেছে। যে কারণে তার গভীর শোক ও মর্মপীড়াও ছাপ রেখেছে এই গ্রন্থে।
এটি তার প্রথম গ্রন্থ। সুদীর্ঘ পেশাগত জীবনে জননিরাপত্তা বিধান, আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা ও সন্ত্রাস দমনের বিশেষায়িত ব্যবস্থা গ্রহণের একজন অগ্রসৈনিক হিসেবে অভিজ্ঞতালব্ধ নিবন্ধসমূহ এই গ্রন্থে প্রাঞ্জলরূপে বিধৃত হওয়ায় গ্রন্থটি বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পাবে বলে সবার প্রত্যাশা।
নিজের বই সম্পর্কে লেখক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি লেখক নই, একজন পাঠক মাত্র। সময় পেলেই পড়ি। অবশ্য মাঝে মধ্যে ফেসবুকে টুকটাক লিখি। নিজের জন্যই লিখি। বড়জোর, আমাকে ফেসবুক লেখক বলা যায়। বেশ কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী, সহকর্মী, বন্ধু ও স্বজনদের চাপ ছিল প্রকাশনায় যেতে। আমি বরাবরই রিলাকটেন্ট ছিলাম। বই লেখার মতো বিদ্যা কিংবা পারঙ্গমতা কোনটাই আমার নেই। কিন্তু স্নেহভাজন সংবাদকর্মী ও লেখক জামশেদ নাজিমের চাপে এবং ‘শব্দশৈলী’ প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী ইফতেখার আমিনের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত ‘অনুরোধে ঢেঁকি গিলেই’ ফেললাম। তবে ছাপার অক্ষরে বইটি হাতে পেয়ে মনে মনে পুলক অনুভব করিনি তা কিন্তু নয়।’
‘পুলিশের ব্যক্তি জীবনের আকাঙ্ক্ষার পদোন্নতি, পোস্টিং পেশাগত পাওয়া না পাওয়ার হিসেবে মানসিকভাবে যে পীড়া থাকে তা এই বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। একজন পুলিশ সদস্য এই বইটি পড়ে পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাদারিত্বের অবস্থানে অনেক কষ্ট ও হতাশা ভুলতে পারবেন।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশের নবগঠিত কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল ইসলামের জন্ম ১৯৭০ সালের ১৫ জুন। তিনি নর্থামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্রিটিশ আইনে স্নাতক। তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে এএসপি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি গোয়েন্দা শাখায় নয় বছর এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়া তিনি সিটিটিসির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কর্মকর্তা।
কর্মজীবনে স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পেয়েছেন।