করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার যখন আতঙ্কে স্বজনরা স্বজনদের ছেড়ে যাচ্ছিল, সে সময় জীবনের পরোয়া না করে পুলিশ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। একে মহাকাব্যিক যুদ্ধ বলে আখ্যা দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম-বার।
তিনি বলেছেন, করোনা এক মহাকাব্যিক যুদ্ধ। ভয়াবহতার সময় পুলিশ সদস্যরা নিজেদের সুরক্ষার কথা চিন্তা না করে আগে সেবা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার অনুমোদিত করোনা ইনসিগনিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন।
করোনা ইনসিগনিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচনের পর আইজিপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ইনসিগনিয়া পরিয়ে দেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একে একে আইজিপি, অতিরিক্ত আইজি এবং পুলিশ সদস্যদের করোনা ইনসিগনিয়া পরিয়ে দেন।
আইজিপি বলেন, করোনাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশ এক মহাকাব্যিক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পুলিশকে সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশেও ফ্রন্টলাইনার হিসেবে কাজ করতে হয়েছে। করোনাকালে দেশ ও জনগণের কল্যাণে বাংলাদেশ পুলিশের ১০৭ জন গর্বিত সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজারের বেশি। আক্রান্তরা সুস্থ হয়েই দেশ ও জনগণের কল্যাণে আবার নিজেদের নিয়োজিত করেছেন।
পুলিশ প্রধান বলেন, প্রথম দিকে করোনা সংক্রমণে প্রতিদিন প্রায় ৭০০-৮০০ পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের পিপিই নেই, হ্যান্ডগ্লাভস নেই, মাস্ক নেই। তবুও আমরা জনগণের পাশে ছিলাম। এ জন্য আমাদের সদস্যদের সংক্রমণের হার বেড়ে গিয়েছিল। আমরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণকে সেবা দিয়েছি এবং পরে নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছি। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়েছি। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশ পুলিশ সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছে।
আইজিপি বলেন, বিদেশি হাসপাতালের সঙ্গে পুলিশ হাসপাতাল করোনা চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করেছে। আমরা প্রথম প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করেছি। করোনা চিকিৎসায় পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী সবাই অতিমানবীয় কাজ করেছেন। যত সহজে এ কথাগুলো বলেছি, তা করা খুব সহজ ছিল না।
করোনা ইনসিগনিয়া প্রদান প্রসঙ্গে পুলিশপ্রধান বলেন, র্যাব যখন সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করেছে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখনকার র্যাব প্রধান হিসেবে আমাকে বলেছিলেন, আপনারা এত বড় একটা কাজ করলেন, আমি আপনাদের জন্য কিছু করতে চাই। তিনি আমাদের আর্থিক অনুদান দিতে চেয়েছেন, সনদপত্র দিতে চেয়েছেন। তখন আমরা মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রস্তাব দিলাম, আমাদের একটি ইনসিগনিয়া প্রদান করেন, যাতে আমরা মর্যাদার সঙ্গে এটা পরতে পারি। পরে উনি আমাদের ইনসিগনিয়া প্রদান করেছিলেন। এবারও করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের করোনা ইনসিগনিয়া প্রদান করেছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত আইজি (এফঅ্যান্ডএল) এস এম রুহুল আমিন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত আইজি (এঅ্যান্ডআই) ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ-আল মামুন, অতিরিক্ত আইজি, ঢাকার পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে করোনায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে করোনাকালে পুলিশের অনন্য সাধারণ অবদানের ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
পুলিশ সদরসপ্তর জানায়, বৃত্তাকৃতির দেড় ইঞ্চি-পৌনে দুই ইঞ্চি ব্যাসের কোভিড-১৯ ইনসিগনিয়ায় ব্যবহৃত বাটসহ ছুরি দ্বারা করোনা ভাইরাসকে বিদ্ধ করা হয়েছে, যা অদম্য ও কার্যকরী মোকাবিলার প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ইনসিগনিয়ায় ব্যবহৃত মুষ্টিবদ্ধ হাত করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সম্মুখ যোদ্ধাদের দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রতীক।