দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন শুধু বাড়ছেই। সোমবার সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এটি এ যাবতকালে সর্বোচ্চ শনাক্ত। মৃত্যুর সংখ্যাও দৈনিক দু’শোর ঘর অতিক্রম করেছে। সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের উপরে। কঠোর বিধিনিষেধ চললেও তা করোনা পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে এটা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এই অবস্থায় করোনার প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার।
মাঝে বেশ কিছু দিন করোনার টিকাদান বন্ধ থাকলেও এবার জোরেশোরে শুরু হচ্ছে এই কার্যক্রম। ইতিমধ্যে সোমবার থেকে চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা সারাদেশে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মডার্নার টিকা দেয়া শুরু হবে।
এতদিন টিকা নেয়ার সর্বনিম্ন বয়স ছিল ৪০ বছর। সম্প্রতি তা পাঁচ বছর কমিয়ে ৩৫ বছর করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেওয়ার ব্যাপারে জোর দিচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, টিকা দেওয়ার পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শামসুল হক নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেছেন, এই মুহূর্তে সরকারের হাতে যে টিকার যোগান রয়েছে, তা দিয়ে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। এরপর থেকে নিয়মিত ভিত্তিতে টিকা আসতে থাকবে।
কোথায় কোন টিকা প্রয়োগ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক বলেছেন, দেশের সব ক’টি সিটি করপোরেশন এলাকায় দেয়া হবে মডার্নার টিকা। কারণ হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘যেহেতু মডার্না টিকাটি তাপমাত্রা সংবেদনশীল। সে কারণে টিকা সংরক্ষণ ও প্রদানের সুবিধার্থে সিটি করপোরেশন এলাকায় মর্ডানা টিকা দেয়া হবে।’
কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া ফাইজারের টিকা এই মুহূর্তে ঢাকার মোট সাতটি কেন্দ্রে দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে চারটি মেডিকেল কলেজ এবং তিনটি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। যেহেতু ফাইজারের টিকার পরিমাণ এক লাখ, ফলে মজুদ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই সাতটি কেন্দ্রে ফাইজারের টিকার কার্যক্রম চলবে। এরপর এসব কেন্দ্রে মডার্নার টিকা দেয়া শুরু হবে। আর চীন থেকে পাওয়া সিনোফার্মের টিকা দেয়া হবে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে।
টিকার জন্য নিবন্ধন যেভাবে
করোনার টিকা নিতে আগ্রহীদের নিবন্ধন করতে হবে ‘সুরক্ষা’ নামক ওয়েব পোর্টালে (www.surokkha.gov.bd)। কম্পিউটারের পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপল প্লে স্টোর থেকেও সুরক্ষা মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করেও করা যাবে নিবন্ধন। সেখানে গিয়ে ‘নিবন্ধন’ বাটনে ক্লিক করে প্রথমে ধরন নির্বাচন করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর, জন্মতারিখ (এনআইডি অনুযায়ী) দিতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে নিবন্ধন করা যাবে না। ৩৫ বছরের কম বয়সীরা নিবন্ধন করতে পারবে না।
তথ্যগুলো ঠিকমতো দিলে বাংলায় ও ইংরেজিতে নাম দেখাবে। এরপর মোবাইল নম্বর দিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি রোগ বা কো-মরবিডিটি থাকলে সেটা বলতে হবে। টিকা গ্রহণকারীর পেশা এবং কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত কি না, সেটি বলতে হবে।
সবশেষে টিকা গ্রহণকারীর বর্তমান ঠিকানা ও কোন কেন্দ্রে টিকা নিতে ইচ্ছুক, সেটি দিলেই নিবন্ধন সম্পন্ন হয়ে যাবে।
প্রথমে টিকা কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল বা অ্যাপের ‘টিকা কার্ড সংগ্রহ’ বাটনে ক্লিক করে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্মতারিখ দিয়ে ‘যাচাই করুন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর নিবন্ধনের সময় দেওয়া মুঠোফোনের নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে ওটিপি (ওভার দ্য ফোন) কোড দিয়ে ‘ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড’ বাটনে ক্লিক করলে টিকা কার্ড ডাউনলোড হবে।
এসএমএসের মাধ্যমে পাওয়া টিকা গ্রহণের তারিখে নির্দিষ্ট টিকাকেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিত হয়ে টিকা নেওয়া যাবে। এ সময় টিকা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। কোভিড-১৯ টিকার দুটি ডোজ নেয়ার পর সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল থেকে টিকা সনদ সংগ্রহ করা যাবে।
গত জানুয়ারির শেষের দিকে ব্রিটেনের তৈরি এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয় দেশে। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে ওই টিকা দিয়ে শুরু হয় গণটিকাদান কার্যক্রম। কিন্তু ভারত চুক্তি অনুযায়ী সময় মতো বাংলাদেশকে টিকা না দেয়ায় এই কার্যক্রম বাধার মুখে পড়ে এবং ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
সরকার নতুন করে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশ থেকে টিকা আনার ব্যাপারে চেষ্টা শুরু করে। ইতিমধ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের টিকা আসায় আবার শুরু হয়েছে গণটিকাদান কর্মসূচি। চলতি মাসেই রাশিয়ার টিকা পাওয়া যাবে বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। টিকা আসা অব্যাহত থাকলে নতুন করে শুরু হওয়া গণটিকাদান কর্মসূচি আর বাধাগ্রস্ত হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।