বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর উচ্ছেদকৃত তীর ভূমিতে সিমানা পিলার স্থাপন, তীর রক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটি সহ আনুষংগিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে এক কর্মশালা আজ রাজধানীর পূর্বাণী হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উক্ত চারটি নদীর দখল ও দূষণরোধ এবং নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প নিয়ে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

নৌপরিবহ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ আবদুস সামাদ এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি; বিশেষ অতিথি হিসেবে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি; প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) মোঃ আবুল কালাম আজাদ এবং বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সৈয়দ আবুল মকসুদ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব-উল ইসলাম প্রকল্পটি সম্পর্কে ব্রিফ করেন। প্রকল্প পরিচালক নুরুল আলম উচ্ছেদ ও উচ্ছেদ পরবর্তি উন্নয়ন কার্যক্রমের ভিডিওচিত্র উপস্থাপন করেন। নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, নদী আমাদের মায়ের মতো। সন্তান হিসেবে নদীকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে কাজ করছেন। তাঁর নেতৃতেই বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করে গেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দেশের উন্নয়ন সুরক্ষিত হবে।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীর অবৈধ দখল থেকে নদীকে বাঁচাতে কাজ করছি। আমরা গন্তব্যে পৌঁছাতে চাই, এক্ষেত্রে কোন ধরনের সমঝোতা করবো না। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় নদী উদ্ধারে কাজ করছে। জনগন সমর্থন দিয়েছে। এ সমর্থন ধরে রাখতে চাই। আমাদের কাজ যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, মুখ থুবরে না পড়ে-সে প্রচেষ্টা থাকবে।

জনাব খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ঢাকাকে রক্ষা করব। তিনি বলেন, নদীকে রক্ষার জন্য কমিউিনিটি পুলিশ গঠন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সমন্বয়ক বলেন, নদী তীর দখল ও দূষণরোধের কাজটি অনেকটা এগিয়েছে, এ কাজটি আরেকটু দ্রুত হতে পারত। তিনি বলেন, অবৈধ দখলদারদের নরহত্যার ন্যায় শাস্তি হওয়া দরকার। সকল নদীর নব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। অবৈধ দখলরোধে তিনি সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নদ-নদী উদ্ধারে খুবই আন্তরিক। নদীগুলোকে আগের অবস্থায় ফেরাতে না পারলেও সহনীয় পর্যায়ে নিতে কাজ করছে। সরকার নদী রক্ষায় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে জনগণের প্রতি তিনি আহবান জানান। নদী উদ্ধার ও পুনর্দখলরোধে তিনি স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করারও আহবান জানান।

নৌপরিবহন সচিব বলেন, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে কার্যকর ব্যবস্থায় আনতে কাজ করছি। নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক। নদীর অবৈধ দখল ও দূষণরোধে কাজ করতে প্রধানমন্ত্রী অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, সাহস যুগিয়েছেন। তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে বিশ্বমানের নদীর কাছাকাছি নেয়ার চেষ্টা করব।

উল্লেখ্য, সাড়ে আটশত কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ উক্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে কাজ শুরু হয়েছে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক সম্প্রতি উচ্ছেদের মাধ্যমে প্রায় ১৫২ একর ভূমি উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত ভূমিতে প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পটিতে ৩,৮০৩টি সীমানা পিলার স্থাপন কাজ শুরু হয়েছে। তাছাড়া ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ১০,৮২০টি সীমানা পিলার, ৪০ কিলোমিটার ওয়াল, ১২ কিলোমিটার পাইলিং, বনায়ন, ০৩টি ইকোপার্ক, ০২টি পর্যটন বান্ধব পার্ক, ০.৩ কিলোমিটার আরসিসি সেতু, ১০৫.১২ কিলোমিটার রেলিং, ০৬টি পন্টুন, ০৬টি এস্কেভেটর, ১১টি আরসিসি জেটি, ৩৮টি স্পার্ড ও ১০০ টি আরসিসি সিড়ি সহ ৪০৯ টি বসার বেঞ্চ অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

ইতোমধ্যে ০৬টি লংবুম এস্কেভেটর এবং ০৬টি পন্টুন ক্রয় এর চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে এবং পন্টুন তৈরি এবং অন্যান্য কাজও চলমান রয়েছে।
বর্তমানে প্রকল্প বাস্তবায়ন সহ বাস্তবতার নিরীখে দেখা যাচ্ছে ঢাকা শহরের চারদিকে নদী সমূহ দূষণমুক্ত করে একটি নদী মাতৃক রাজধানীর কলেবর সৃষ্টি করতে হতে প্রকল্প আরো কিছু কার্যক্রম বৃদ্ধি করা অপরিহার্য্য। যেমন নদী খনন কাজ সহ ইতোমধ্যে প্রাক্কলিত কিছু আইটেমের পরিবর্তন হওয়ায় এবং কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় আলোচ্য প্রকল্পটি সংশোধনের আবশ্যকতা রয়েছে। তারই নিরীখে ইতোমধ্যে বিআইব্লিউটিএ কর্তৃক সংশোধিত প্রকল্প গ্রহণ করে তা প্রায় ২,৪৩০ কোটি টাকা করা হয়েছে। আলোচ্য সংশোধিত প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে ঢাকা শহরের চারিদিকে নৌপথ উন্নয়নে সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূর্ণ হবে ।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন