বন্ধ এ মনের দুয়ার দিয়েছি খুলে
——————————————-
১৯৮৩ সালে এস,এস,সি পাশের পর পিতৃহীন পরিবারে নানাবিধ কারণে লেখাপড়া বন্ধ থাকে ১৯৯৮ পর্যন্ত। এই ১৫ বছরে জীবন তরী ভেসে চলে একরকম লক্ষ্যহীনভাবে।তবে ১৯৯৩ এ বিয়ের পর ১৯৯৭ তে আমার মনের আকাশ আলো করে আসে আমার একমাত্র কন্যা পারিজাত। তার এই নামকরন করি তার জন্মের ১৭ বছর পূর্বে। অবাক হচ্ছেন তো? একটু খুলে বলি? আমি তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। বিদ্যুৎ বিহীন, TV বিহীন গ্রাম -গঞ্জে বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল যাত্রাপালা। তখনকার খ্যাতিমান নাট্যকার রঞ্জন দেবনাথ বিরচিত এক যাত্রা পালা ( বইটার নাম ভুলে গেছি) শুনতে যাই পাশের গ্রামে। নায়িকার নাম ছিল পারিজাত। নামটা মনে ধরে যায়। বাড়িতে এসে অভিধান ঘেটে অর্থ দেখে অবাক হয়ে যাই – এটি একটি ফুল যা স্বর্গোদ্যানে ফোটে! ঐ কিশোর বয়সে ( যখন বিয়ে, সংসার,বাবা হওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে কোন ধারনাই স্পষ্ট নয়) কেন জানিনা মনে হলো – ” আমিও তো আর এক রঞ্জন। ঈশ্বর যদি কোনদিন আমার দ্বারা কোন কন্যা সৃষ্টি করে তার নাম এটাই রাখব।” এই ভাবনাটা ১৭ বছর গোপনই রেখেছিলাম। যাহোক পারিজাত এলো। তারপরই আমার জীবন ধারা আস্তে আস্তে Ancient Mariner এর মতো বদলে যেতে থাকল। ১৯৯৮ সালে লোকাল কলেজে HSC তে ভর্তি হলাম। ২০০০ এ পাশ করে কিছুটা কৌতূহল বশে DU admission test দিলাম। merit position হলো 362. ইংরেজি অংশে 20 out of 25 হওয়ায় English (hons) এ ভর্তি হলাম। এবার জীবন আরও কঠিন হলো। কিন্তু ভাল বলতে এটুকু হলো যে আমার রোজগারে সুবিধা হলো। জগন্নাথ হলে উঠলাম। এক সময়ে ২০০৪-৫ এর মাষ্টার্স কোর্স ২০০৮ এ শেষ হলো। সরকারি চাকুরীর বয়স তো ভর্তির সময়েই পেরিয়ে গেছে। স্কুল ও কলেজ নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে একটা বেসরকারি কলেজের অপেক্ষায় থাকলাম। অতপর ২০১০ এ বর্তমান কলেজে যোগদান করলাম। যেন কূল খুঁজে পেলাম। হাই স্কুলে যাদের সাথে পড়েছি আর অনার্সে যাদের সাথে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে এদের মধ্যে প্রায় একটা প্রজন্মের ব্যবধান। পরের দলটি কেবল বয়সেই আমার থেকে ছোট। আর সবকিছুতে তারা বড়। অনার্স – মাস্টার্স শেষ হবার দুবছরের মধ্যেই অন্তত ৬০ জন ঢা.বি. সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, BCS(admin, police, ans, tax, foreign,education), bank senior officer ইত্যাদি হাই প্রোফাইল পেশায় যোগদান করে। এদের মধ্যে অন্তত ৩০/৩৫ জনের সাথে রয়েছে আমার ঘনিষ্ট যোগাযোগ। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন অফিসার ( যে বর্তমানে উচ্চতর ডিগ্রী ও প্রশিক্ষণ অর্জনের জন্য জাপানে অবস্থান করছে) রয়েছে যে সার্বিক অর্থে এতটাই উন্নত মানুষ যে যেকেউ তাকে Icon মনে করতে পারে। এমনই আর একজন (মেয়ে) রয়েছে যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব। দুইজন ঢাবি শিক্ষক (মেয়ে), ৩/৪ জনঅন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ( মেয়ে), একজন ans cadre, একজন গোপালগন্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, একজন tax cadre, বেশ কয়েকজন bankers & education cadre রয়েছে যাদের কথা অবশ্যই বলতে হয়। এরা সবাই এমন আচরণ করে যেন আমার নিজের ছোট ভাই-বোন। বর্তমানে আমি অত্যন্ত সুখি মানুষ। আমার সুখানুভূতির এরা একটা অনুসংগ। আমার কিশোর বয়সের বন্ধুদের মধ্যে দুজন আছে যাদের একজন BCS education cadre ( associate professor of Bangla)।ওরে বাবা! সে এটুকুর ঠেলায়ই রীতিমত দূরত্ব রক্ষা করে চলে। অপরজন ঠিক বিপরীত ধর্মী। সে phd করা কবি ও সাহিত্যিক। বর্তমানে বাংলা একাডেমীর অতি উচ্চ পদে আসীন। খুবই friendly. এছাড়াও রয়েছে সুখানুভূতির শেষ ( চলমান) পর্ব। আমার পারিজাত ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় মানবিক থেকে যখন ঢাবিতে মেধাক্রম ১২৫ ( selected at IR) এবং জবিতে ৪০( চল্লিশ) ( selected at Law) তখন ঢাবি এর ইংরেজি বিভাগের সুপ্রসিদ্ধ শিক্ষক ( বয়সে আমার ছোট হলেও আমার নিজেরও শিক্ষক) বিজয় লাল বসু বললেন, ” Ranjan da, Parijat should be admitted into DU. otherwise at some day nobody will believe that she had such a brilliant score.” He also said, ” you are successful as a man and as a father as well. ” সফলতার কিছুই হয়নি তবুও তার অনুপ্রেরণা মূলক উক্তির জন্য তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। পারিজাত অবশ্য নিজে তার বাবার কথা বলতে গিয়ে দুপা এগিয়ে তিনপা পিছিয়ে আসে। সে এই ভেবে বিব্রত বোধ করে যে লোকেরা হয়তো ভাববে, ” BA( hons), MA in English অথচ বেসরকারি কলেজে!” পাঠকবর্গ, আমার নিজের লড়াই করার বয়স ছিল না। তাই আপনাদের কাছে দোয়া ও আশির্বাদ চাই সে যেন বড় মানুষ হতে পারে। ধূলিকনার মতো ক্ষুদ্র এই মানুষটার লেখা পড়ে যারা ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিলেন তাদেরকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই।

লেখক:  রঞ্জন বিশ্বাস, লেকচারার,কাশিয়ানি এমএ খালেক কলেজ।     





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন