২য় রমজানের ফজিলত

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 136 দর্শন

 

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হচ্ছে রোজা। ইতিহাসে পাওয়া যায় আদি মানব সর্বপ্রথম নবী হযরত আদম (আ:) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী হযরত মুহম্মদ (সা:) পর্যন্ত সব নবী রাসুলগণই রোজা পালন করেছেন। শুধুমাত্র শেষ নবীর উম্মত আমাদের ওপরই ফরজ হয়নি, পূর্ববর্তী নবী রাসুলদের সময়ও রোজা ফরজ করা হয়েছিল। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন- ‘হে ঈমানদারগণ তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যেন তোমরা খোদাভীতি অর্জন করতে পারো’ (সূরা আল-বাকারা আয়াত ১৮৩)।

আজ মাহে রমজানের ২য় দিবস। রমজানের প্রথম দশদিন রহমতের হিসাবে পরিগণিত। নবী করিম (সা.) মাহে রমজানকে রহমত, বরকত ও কল্যাণের মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর বিশেষ রহমতে পরিপূর্ণ। ঝরণাধারার মতো আল্লাহর আশিষধারা রোজাদারদের অন্তররাজ্যে লোকদৃষ্টির অলক্ষ্যে বর্ষিত হতে থাকে। রমজান মাস এমন একটি মাস, যার প্রথম ১০ দিন রহমতে পরিপূর্ণ, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মাগফিরাতে পরিপূর্ণ এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নামের শাস্তি থেকে নাজাত ও মুক্তির জন্য নির্ধারিত।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘এটি এমন একটি মাস, যার প্রথম ভাগে আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগে গুনাহের মাগফিরাত এবং শেষ ভাগে দোজখের আগুন থেকে মুক্তিলাভ রয়েছে।’ (মিশকাত)

রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মুমিন বান্দারা আত্মিকভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। তাই আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসে তাঁর রহমতের দরজা অবারিত করে দেন। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসে আমার উম্মতকে পাঁচটি বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা আমার পূর্ববর্তী কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। ১. রমজানের প্রথম রাতে আল্লাহ তাদের দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন, আর আল্লাহ যার দিকে দৃষ্টি দেন, তাকে কখনো শাস্তি প্রদান করেন না। ২. সন্ধ্যার সময় তাদের মুখ থেকে যে গন্ধ বের হয়, তা আল্লাহর কাছে মেশ্কের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। ৩. প্রত্যেক দিনে ও রাতে ফেরেশতারা রোজাদারদের জন্য দোয়া করেন। ৪. আল্লাহ তাআলা তাঁর বেহেশতকে বলেন, ‘তুমি আমার বান্দার জন্য সুসজ্জিত ও প্রস্তুত হও! আমার বান্দারা অচিরেই দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে অব্যাহতি পেয়ে আমার বাড়িতে ও আমার সম্মানজনক আশ্রয়ে এসে বিশ্রাম নেবে।’ ৫. রমজানের শেষ রাতে আল্লাহ তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেন।’ এক ব্যক্তি বলল, ‘এটা কি লাইলাতুল কদর?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘না, তুমি দেখোনি শ্রমিকেরা যখন কাজ শেষ করে, তখনই পারিশ্রমিক পায়?’ (বায়হাকী)

বান্দার কৃত অপরাধগুলো ক্ষমা করার জন্য পরম করুণাময় আল্লাহ রমজান মাসকে বিশেষ রহমত হিসেবে প্রতিবছর পাঠিয়ে দেন, যাতে তারা স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করে ধন্য হতে পারে। যারা অপরিণামদর্শী, তারা এসবের খুব একটা গুরুত্ব দেয় না, বিভিন্ন অজুহাতে রোজা রাখে না, অশালীনতা, বেহায়াপনা ও প্রকাশ্যে পানাহার করে- এসব অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ঘৃণ্য কাজ।

মুসলমানরা মাহে রমজানকে নিজের জীবন নিষ্পাপ পুণ্যময় করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। তাই দেখা যায়, মুসলিম সমাজের ঘরে ঘরে রমজানের সমাদর, রমজানের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার বিভিন্ন আয়োজন, এ মাসের মাহাত্ম্য, ফযিলত ও বরকত অর্জনের জন্য নানা আমল ও কর্মসূচি। সোনালি যুগের মুসলমানরা এ মাসকে যথাযথ ভাবগম্ভীর পরিবেশে অতিবাহিত করার জন্য রজব মাস থেকে প্রস্তুতি নিতেন এবং তাঁরা রজব থেকে মাহে রমজান পর্যন্ত পুণ্য অর্জনের যে অবারিত ধারা প্রবাহিত হয় তা পাওয়ার জন্য খোদাতায়ালার কাছে ফরিয়াদ করতেন ।

রমজানুল মোবারক উপলক্ষে কুরআন ও হাদিসে যে সব বাণী এসেছে তা সত্যিই একজন মুমিনকে সৎ  জীবন রচনার এক দুর্দমনীয় প্রতিযোগিতায় উদ্বেলিত করে তোলে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তার পবিত্র আখেরি কালাম কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন : শাহরু রামাদানাল লাযী উনযিলা ফীহিল কুরআন, হুদাললিন্নাসি ওয়া বায়্যিনাত…।’ অর্থাৎ ‘রমজান মাস হলো সেই মাস- যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসে রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্যদিনে গণনা পূর্ণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না- যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হিদায়াত দান করার দরুন আল্লাহতায়ালার মাহাত্ম্য বর্ণনা কর, (আর) যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’

এর পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে : ‘আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে আমার ব্যাপারে; বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে তাদের প্রার্থনা কবুল করে নিয়ে থাকি, যখন (তারা) আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য, যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে। -(সূরা বাকারাঃ ১৮৫,১৮৬)।

উপরোক্ত আয়াত দুটোর প্রথমটিতে রমজান মাসকে অন্য এগারোটি মাস থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যে তুলে ধরা হয়েছে এবং এ মাসকে কুরআনের মাস হিসেবে আখ্যায়িত করে এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট করণীয় বিবৃত হয়েছে। এ মাসকে প্রকৃত হিদায়াত ও পথপ্রাপ্তির মোক্ষম মৌসুম বলেও এখানে ইশারা করা হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহতায়ালার দরবারে আলীশানে ইবাদত বন্দেগি ও প্রার্থনার গুরুত্ব এবং এসব ব্যাপারে আন্তরিক বিশ্বাসের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

আয়াতের মর্মার্থ দ্বারা বোঝা যায়, রমজান মুসলিম জিন্দেগিতে একটি ট্রেনিং পিরিয়ড এবং এ থেকে ফায়দামন্দ হওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রচন্ড ইখলাস, আন্তরিকতা ও সুষ্ঠু পরিবেশ।

হাদিস শরীফেও বারবার এ মাসকে প্রথম থেকেই অনুধাবন ও সদ্ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে কোরআন হাদিসের আলোকে মাহে রমজানকে গ্রহণ করার এবং এর বরকত লাভের জন্য পরিবেশ প্রতিবেশ কাজে লাগানোর তাওফিক দিন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন