করোনাসংক্রান্ত দুটি মহামারি এখন একসঙ্গে চলছে—একটা ভাইরাসের, আরেকটা গুজবের। এই পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি চলাকালে যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অথবা অন্য কোনোভাবে গুজব, বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য ছড়ানো না হয় সেদিকে সতর্ক থাকার জন্য জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলো সরকার।
পাশাপাশি পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম(বার) গুজব রটনাকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তবে তার পরেও থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থেমে নেই গুজব।
এমন পরিস্থিতিতে মাঠে নেমেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ। তারা খুঁজছে ২৫০ জন ফেসবুক ইউজারকে। যারা করোনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চালিয়েছে গুজব। এই ২৫০জন ভাইরাসের সংক্রমণ, মৃত্যু, পুলিশের পুরোনো ছবিতে ফটোশপের মাধ্যমে মাস্ক লাগিয়ে মানুষকে পেটানোর মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর কাজে জড়িত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে, মঙ্গলবার(৩১ মার্চ) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা সারা দেশের গুজব নিয়ে কাজ করছি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে গত চার সপ্তাহে ১২ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ৩০ জনের ফেইসবুক আইডি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ১৫ জনকে আটকের পর কাউন্সেলিং করিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া এখনো গুজব ছড়াচ্ছে এমন আড়াই শ ফেইসবুক আইডির ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। নেত্রনিউজসহ বেশ কিছু নিউজ পোর্টালের মাধ্যমেও গুজব ছড়ানোর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাদের কর্মকাণ্ড নজরদারিতে রয়েছে।
সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মুসলমানরা করোনা ভাইরাসে মরে না, মারা যাচ্ছে অমুসলিমরা, এটি তাদের জন্যই গজব; করোনা বা ছোঁয়াচে রোগ বা সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই, ছোঁয়াচে রোগ বিশ্বাস করা হারাম, কাট্টা কুফরি ও শিরকীর অন্তর্ভুক্ত- এসব বলে গুজব ছড়াচ্ছে অনেকে। এছাড়া ইউরোপিয়ান দেশের বিভিন্ন মরদেহের ছবি আমাদের দেশের বলে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন অনেকে। পুলিশের সঙ্গে মারামারির পুরোনো ছবি ফটোশপে কারসাজি করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টাও হচ্ছে।
তারা আরও জানান, করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে- পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর এমন হুঁশিয়ারির পরও গুজবকারীরা থেমে নেই। অনলাইনে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমেও গুজব ছড়াচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। গত শনিবার এ ধরনের একটি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পরও বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব লিংক ও ভুঁইফোড় নিউজ পোর্টালে ধর্মীয় গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
ডিএমপির রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এসএম শামীম বলেন, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির উদ্দেশ্যে একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানোর কাজ করছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিলাম বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব প্রতিরোধে ডিএমপির আটটি ক্রাইম জোনের বিভিন্ন থানা-পুলিশের পাশাপাশি সারা দেশের প্রত্যেকটি জেলার সব থানার পুলিশকে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবগুলো সংস্থা গুজব বন্ধে তারা সাইবার পেট্রোলিং করছে।