বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন, শাক সব্জি, ডিম, মাছ, অন্যান্য প্রচলিত মালামাল যা পার্সেল হিসেবে বহনযোগ্য, তা যেন সহজে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন, সেজন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে বিশেষ পার্সেল ট্রেন চালুর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের রেলযোগাযোগের এটি একটি নতুন সংযোজন। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় চালু করা হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড -১৯ এর প্রেক্ষিতে লকডাউন অবস্থায় কৃষকের উৎপাদিত পণ্য, শাক-সবজি, খাদ্য ও পচনশীল সামগ্রী পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে এই স্পেশাল পার্সেল ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেয়।

পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকামূখী বিশেষ পার্সেল ট্রেন চলাচল উদ্বোধন উপলক্ষে আজ বিকালে (শনিবার বিকাল চারটায়) রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন একথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, শাক সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহণের জন্য বিদেশ থেকে অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যান আমদানি করা হচ্ছে। সব লাগেজ শীতাতোপ নিয়ন্ত্রিত এসব মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাক, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা যাবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাতে কয়েকটি রুটে পার্সেল ট্রেন চালু করা হয়েছে। তিনি পঞ্চগড় থেকেও পণ্য পরিবহনে তাগিদ দেয়ায় ব্যবসায়ীদের সাথে সংশ্লিষ্টরা আলোচনা করে পঞ্চগড় থেকে চালু করা হলো। নির্ধারিত যে কোন স্টেশন থেকে পার্সেল বুক করা যাবে। এটি পঞ্চগড় থেকে যাত্রা শুরু করে কয়েকটি স্টেশনের পণ্য নিয়ে ঢাকায় পৌঁছবে।

সোমবার দুপুরে রংপুর বিভাগের প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সংগে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড় প্রান্তে উপস্থিত থাকা রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। একই সাথে তিনি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে শুধু লাগেজ ভ্যানে পরিবহন উপযোগী পণ্য নয় অন্যান্য পণ্য পরিবহনেও রেলকে ব্যাপক ব্যাবহারের পরামর্শ দেন।
মন্ত্রী বলেন, কৃষকদের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই সুবিধা নিতে তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানান। এতে করে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল নিশ্চিত হবে।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে গণপরিবহণ বন্ধ। আমাদের যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো বন্ধ রেখেছি। কিন্তু পণ্যবাহী ট্রেন পর্যায়ক্রমে চালু করা হচ্ছে। এখন থেকে আমরা টমেটো, পিঁয়াজ, রসুন, আদাসহ সমস্ত কিছু এই স্পেশাল পার্সেল ট্রেনে পরিবহণের ব্যবস্থা নিয়েছি। যাতে দেশের কোথাও নিত্যপণ্যের সংকট না হয়।

মন্ত্রী বলেন,আমাদের পঞ্চগড় থেকে টমেটো, তরমুজসহ বিভিন্ন শাকসবজি পরিবহণে ট্রাকের থেকে ট্রেনের ভাড়া বেশির বিষয়টি ঢাকায় ফিরে আলোচনা করে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, করোনায় সারা বিশে^ আড়াই লাখের মত মানুষ মারা গেছে। এর মধ্যে উন্নত দেশগুলোতেই বেশি করে মারা গেছে। স্বাস্থ নির্দেশনা মেনে চলতে হবে যেন করোনা ছড়িয়ে না পড়ে। রোগটা এমন যে আমরা নিজেরাই বহন করি। কাজেই স্বাস্থ বিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সরকার লকডাউনসহ নানান সর্তকর্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। করোনার মধ্যে আমরা আবার মহাবিপদে পড়ে গেছি। এই বিপদের দিনে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চলের সহকারী চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল আওয়াল জানান, পণ্যবাহী বিশেষ এই ট্রেনটি উভয় পথে রুহিয়া, ঠাকুরগাঁও, পীরগঞ্জ, সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ি, বিরামপুর, জয়পুরহাট, আক্কেলপুর, সান্তাহার, আহসানগঞ্জ, নলডাঙ্গারহাট, নাটোর, মুলাডুলি, লাহিড়ীমোহনপুর এবং তেজগাঁও রেল স্টেশনে মালামাল উঠানো ও নামানোর জন্য যাত্রা বিরতি করবে। কোন যাত্রী পরিবহণ করা হবে না। পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে শনি সোম ও বুধবার বেলা একটায় ছেড়ে রাত দুইটায় ঢাকায় পৌঁছবে। আবার ঢাকা থেকে রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার রাত চারটায় ছেড়ে বিকাল পাঁচটায় পঞ্চগড় পৌঁছবে। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার পঞ্চগড় থেকে এবং শনিবার ঢাকা থেকে ট্রেনটির চলাচল বন্ধ থাকবে। পর্যাপ্ত বুকিং সাপেক্ষে স্পেশাল এই ট্রেনটি চলাচল করবে।

প্রথম দিনে ব্যবসায়ীদের বিনামূল্যে পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় প্রায় ৫০ টন টমেটো ও শুকনো মরিচ ঢাকায় পাঠানোর সুযোগ দেওয়া হয়।
এ সময় পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. মজাহারুল হক প্রধান, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট, বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট ডিভিশনের ম্যানেজার তাপস কুমার দাশ, ডিভিশনাল ম্যানেজার (ট্রাফিক) স্নেহাশীষ দাশ গুপ্ত,ডিভিশনাল প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন ও স্টেশন মাস্টার মোশারফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন