ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় দুর্যোগের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় জেলার ৮৮৭টির অধিক আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে ও ৭১৮ স্কুল-কলেজ বিকল্প আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া ৪১৬ মেট্রিক টন চাল, ১০ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ নগদ টাকা ও ৫ হাজার সিপিপি সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় ৮৮৭টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে আশাশুনি উপজেলায় ১৬ টি আশ্রয় কেন্দ্র ও বিকল্প হিসেবে ৯০টি, দেবহাটা উপজেলায় ১৫টি আশ্রয় কেন্দ্র ও বিকল্প হিসেবে ৮৮টি, কলারোয়ায় ২টি আশ্রয় কেন্দ্র ও বিকল্প হিসেবে ১৫০টি, কালিগঞ্জে ১০টি আশ্রয় কেন্দ্র ও বিকল্প হিসেবে ৯৯টি, সাতক্ষীরা সদরে ২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র ও বিকল্প হিসেবে ১৩১টি, শ্যামনগরে ৮৭টি আশ্রয় কেন্দ্র ও বিকল্প হিসেবে ৯৪টি এবং তালা উপজেলায় ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র ও বিকল্প হিসেবে ৯০টি স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০জন ধারণা ক্ষমতা রয়েছে।

এছাড়া সাতক্ষীরা আশাশুনি, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাধ পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে পযাপ্ত জি ও বালুর বস্তা প্রস্তুতসহ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন।
১১ মে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের ঝড়ের পূর্বেই মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জেলায় ও উপজেলায় প্রস্তুতি সভা করছেন। একই সাথে প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিকেল টিম প্রস্তুতকরণ, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও খাওয়ার পানি মজুদ রাখা, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাধ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শ্যামনগর উপজেলায় ২ হাজার ৯৮০ জন এবং আশাশুনি উপজেলায় ১ হাজার ২০ জন সিপিপি-র উপজেল স্বেচ্ছাসেবক এবং রেডক্রিসেন্ট ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনকে সার্বক্ষণিকা প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় বাজার কমিটির সহায়তায় পর্যায় শুকনা খাবারের সম্পূর্ণ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, জেরিকেন, ওয়াটার টিটমেন্ট প্লান্ট এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের পূর্ব প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে। দুর্যোগকালীন সহযোগী সংস্থাগুলোকে জরুরী ভিত্তিতে শুকনা ও অন্যান্য খাবার, বিশুদ্ধপানি স্যানিটেশানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী প্রস্তুত রাখা এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের সংগে সমন্বয় করে দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণ এবং উদ্ধার কার্যক্রমসহ নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছেব। ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার পূর্বে প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, নিশু ও গর্ববতী নারীসহ ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করতে হবে এবং শিশু ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা গ্রহণ করতে হবে।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে উচ্চারকারী নৌযান স্প্রীডবোট, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইঞ্জিনচালিত নৌকা/ট্রলার এবং স্থলযান প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
এছাড়া সকল উপজেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স টিমের ঝড়ের পরে রাস্তায় গাছ পড়লে তা অপসারণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কর্মী বাহিনীসহ প্রস্তুত রাখতে হবে প্রয়োজনে পুলিশ ও আনসার বিভাগের সহযোগিতা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া কলারোয়া, তালা ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলা হতে যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয় জনবল শ্যামনগর উপজেলায় সাময়িকভাবে মোতায়েন করতে হবে। করাত কলের শ্রমিকসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখতে হবে। দুর্যোগ সংঘটিত হলে দুর্যোগের পর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকার দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রধানের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

অপরদিকে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান পিপিএম ঘূর্নীঝড় মোখা মোকাবেলায় জেলার আটটি থানার অফিসার ইনচার্জ দের প্রয়োজনীয় দিক দির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে শ্যামনগর থানা ও আশাশুনি থানা পুলিশ কে বেশি তৎপর থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার।পুলিশ সুপার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ বিগত প্রাকৃতিক দূর্যোগে যেভাবে বানভাসি মানুষ কে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে এনেছিলো, রাস্তায় পড়ে থাকা গাছপালা অপসারণ করেছিলো, ঠিক একই ভাবে ঘূর্ণীঝড়  মোখা র হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে আন্তরিক ভাবে কাজ করবে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ।

সাতক্ষীরা জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা আবুল বাসেত জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় ৮৮৭ সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এছাড়া ৪১৬ মেট্রিক টন চাল, ১০ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ নগদ টাকা ও ৫ হাজার সিপিপি সদস্য প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।