পুলিশ কনস্টেবলে বিনা পয়সায় নিয়োগ পেয়ে খুশি মেধাবীরা ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নিলেন নড়াইলের পুলিশ সুপার।
বিকেলে ফলাফল ঘোষণা করা হবে-একথা জেনে আগে থেকেই একবুক আশা নিয়ে পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে দাঁড়িয়ে আছেন ফলপ্রার্থী নবীন ছেলে-মেয়েরা। সবার চোখে-মুখে বিনয়ী ভাব। মাঝে-মধ্যে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছেন তারা। আরেক পাশে বসে আছেন তাদের অভিভাবকেরা। চূড়ান্ত ভাবে কারা হচ্ছেন পুলিশের নবীন সদস্য সেই ফলাফল শোনার অপেক্ষায় সবাই।
কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হলো অপেক্ষার প্রহর। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) ঘোষণা করেন চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচিতদের নামের তালিকা। এ সময় সবার মুখে হাসি ফুটে উঠে। আবার অনেকের চোখে ঝরেছে আনন্দাশ্রু। বাছাইপর্বে টিকে থাকা ৬২৪ জনের মধ্যে অবশেষে ২০ জন নড়াইল জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরি পেলেন। এর মধ্যে ছয়জন মেয়ে ও ১৪ জন ছেলে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০ জনের মধ্যে পুলিশ পোষ্য কোটায় এক, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তিন ও সাধারণ ভাবে ১৬ জন।
নির্বাচিত মধ্যে নড়াইল পৌরসভার বেতবাড়িয়ার সুপ্তিকণা বিশ্বাস, সদরের শিমুলিয়া গ্রামের ফাতেমা, মাইজপাড়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের হাসিবুল ইসলাম হাসিব, লোহাগড়া উপজেলার ছত্রহাজারী গ্রামের আনিয়া খাতুন, মঙ্গলহাটার মাহফুজ শেখসহ অন্যরা জানান, কোনো প্রকার ঘুষ ও তদবির ছাড়াই তারা কনস্টেবল পদে চাকুরি পেয়েছেন। ব্যাংক ড্রাফটের ১০০ ও আবেদন ফরমের তিন টাকা ছাড়া কোনো টাকা লাগেনি তাদের। এজন্য নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান নবীন পুলিশ সদস্যরা। তারা বলেন, ঘুষ, দুর্নীতির উর্ধে থেকে দেশের জন্য কাজ করতে চাই। জনগণের বন্ধু হতে চাই। এটাই আমাদের শপথ।
ফলাফল ঘোষণার পর নির্বাচিত ২০জন ও তাদের অভিভাবকদের ফুলেল শুভেচ্ছা এবং মিষ্টিমুখ করান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। ফলাফল ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন, খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম, নড়াইলের পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাহিদা আক্তার চৌধুরী সুমিসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদে চাকুরি হয়েছে। আইজিপি স্যারের দু’জন প্রতিনিধিসহ আরো দু’জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিয়োগ পরীক্ষায় সার্বিক সহযোগিতা করেন। গত ২৯ জুন থেকে নড়াইলে কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) শেষ হয়েছে। চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচিতদের মধ্যে শহরের রূপগঞ্জ বাজারের রুটির দোকানি সমির বিশ্বাসের মেয়ে সুপ্তিকণা বিশ্বাস রয়েছে। অন্যদিকে বরাশুলা এলাকার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে কনস্টেবল পদে চাকুরিপ্রাপ্ত সাকিবুর রহমানের মা ভ্যান চালিয়ে বাড়ি বাড়ি এবং হাটবাজারে সবজি বিক্রি করে তিন সন্তানের সংসার চালান। এছাড়া অনেক গরিব পরিবারের যোগ্য ও মেধাবী ছেলে-মেয়ের চাকুরি হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই বিএ সম্মান শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। এদিকে, কারোর পক্ষ থেকে কোনো প্রকার ঘুষ লেনদেন বা তদবির যাতে না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি ছিল।
এজন্য নিয়োগ পরীক্ষার আগে থেকেই ঘুষ লেনদেন বন্ধে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, মসজিদে মসজিদে প্রচারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। এমনকি অভিনব কায়দায় জার্সির মধ্যে করে আমাকে (জসিম উদ্দিন) সাত লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার অপচেষ্টায় নূরুল ইসলাম (৫৫) নামে একব্যক্তিকে গত ২৭ জুন রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করেছি। নড়াইল সদরের তুলারামপুর ইউনিয়নের চাঁচড়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে নূরুল ইসলাম তার ভাতিজা দিপু হোসেনকে কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য সাত লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার অপচেষ্টা করেন। তিনি আরো বলেন, চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত ২০ জনের বাইরে কয়েকজনকে রাখা হয়েছে অপেক্ষমাণ তালিকায়। কারণ চূড়ান্তদের মধ্যে যদি কেউ মেডিক্যাল পরীক্ষায় বাদ যায়, তাহলে তাদের (অপেক্ষমাণ) অগ্রাধিকার দেয়া হবে। শনিবার (৬ জুলাই) মেডিক্যাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।