আগামীকাল বুধবার (২৭ নভেম্বর) বহুল আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এ মামলার রায় ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। রায়কে কেন্দ্র করে আদালত পাড়ায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

বুধবার(২৭ নভেম্বর) সকাল ৮ টা থেকে সেখানে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া রায়কে কেন্দ্র করে সারাদেশেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

এই মামলার রায়কে কেন্দ্র করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।

তিনি বলেছেন, আগামীকাল হলি আর্টিসান মামলার রায় ঘোষিত হবে। আমি মনে করি, আমাদের জন্য এটা একটা মাইলফলক। হলি আর্টিসানের দুঃখজনক ঘটনায়, যে সমস্ত নিরীহ সাধারণ মানুষ বিনা কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন, আমি নিহত মানুষগুলোর আত্মার মাগফেরাত ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

মঙ্গলবার(২৬ নভেম্বর) দুপুরে র‌্যাব সদর দফতরে হলি আর্টিসান হামলার রায় সামনে রেখে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হন র‌্যাব ডিজি। সেখানেই এসব কথা জানান তিনি।

র‌্যাব ডিজি বলেন, হলি আর্টিসানের ঘটনা দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে তা দেশের মানুষের কল্পনার মতো ছিল না। তারপরও এই ঘটনাটি ঘটেছে।

তিনি আরও বলেন, হলি আর্টিসানের ঘটনার পর থেকে আমরা এখন পর্যন্ত ৮০৯কে গ্রেফতার করেছি। র‌্যাব ফোর্সেস এর পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে থেকে কখনো দৃষ্টি সরাইনি। এমন কোনো সপ্তাহ নেই যে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাইনি। কোথাও না কোথাও জঙ্গি অপারেশন করেছে।

২০১৬ সালের পহেলা জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত ২৫ জঙ্গি গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অভিযান প্রতিনিয়ত অব্যাহত রয়েছে, শুধুমাত্র অভিযান নয়, আমরা বহুমুখি কাজ করছি আপনারা জানেন। আমরা লক্ষ লক্ষ বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড স্থাপন করেছি লিফলেট, স্টিকার বিতরণ করেছি। জঙ্গিরা যেসব কথাবার্তা বলে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে, কোরআনের যে সমস্ত আয়াতের অপব্যাখ্যা করে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সে সমস্ত কুরআনের আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা কি তা জানাতে আমরা কাউন্টার ন্যারেটিভ বের করেছি।

আমরা জঙ্গিবাদবিরোধী অ্যাপস, বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে। এসব আমাদের বহুমুখি তৎপরতার অংশ। তবে আত্মতুষ্টির কোনো কারণ নেই কারণ বৈশ্বিকভাবে জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ পরাস্ত হওয়া পর্যন্ত, পৃথিবীতে, এদেশে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি থেকেই যাবে।

র‌্যাব ডিজি বলেন, আমাদের দেশ শান্তিপ্রিয় দেশ। এদেশের মানুষ মারামারি-খুনোখুনি পছন্দ করে না এবং জঙ্গিবাদ ও আমাদের দেশে পুরোপুরি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। কারণ এ দেশের মানুষ এগুলো সমর্থন করে না। তারপরও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং ক্রমাগতভাবে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।

আগামীকাল হলি আর্টিসান হামলা মামলার রায়। যারা অন্যায় করেছে, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা, খুন করেছে তাদের সঠিক বিচার হবে বলে আমি মনে করি। দৃষ্টান্তমূলক রায় আসবে। যে সমস্ত পরিবার ন্যায় বিচার পাওয়ার উপযোগী তারা সেটা পাবেন বলেও আমি মনে করি। ভবিষ্যতে এই ধরনের অপকর্ম থেকে অপরাধীরা বিরত থাকবেন বলেও আশা করি।

ধারাবাহিক অভিযানের কারণে জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা গেছে কিন্তু তাদের যা দর্শন সেটাকে ভেঙে দেয়া যায়নি। এক্ষেত্রে কী ধরনের কর্মকৌশল র‌্যাবের রয়েছে জানতে চাইলে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, এক্ষেত্রে কর্মকৌশল হচ্ছে জনসচেতনতা, ডিরেডিক্যালাইজেশন। রেডিক্যালাইজেশন স্টপ করা। সামাজিক পুনর্বাসন করা, কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা। এগুলো দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। র‌্যাব কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরির কাজ করছে। যারা জঙ্গিবাদে মোটিভেট হয়েছেন, তাদের সামাজিকভাবে পারিবারিকভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ডিমোটিভেট করতে হবে।

রায় সামনে রেখে নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, হলি আর্টিসান হামলার মামলার ঘটনায় নিম্ন আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব। আগামীকাল রায় সামনে রেখে আজ থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রায় ঘোষণার পর পর্যন্ত এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। যদি প্রয়োজন মনে করি যে কয়দিন নিরাপত্তা জোরদার রাখা দরকার সে কয়দিনই রাখা হবে। আর শুধুমাত্র স্পেশাল অ্যালার্ট না, এর বাইরে সব সময় সতর্ক অবস্থায় থাকে। যাতে করে জঙ্গিবাদীরা ধ্বংসাত্মক কিছু করতে না পারে। সেজন্য আমরা সবসময় খেয়াল রাখি। আমাদের প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়নে জঙ্গিবিরোধী সেল রয়েছে। আমাদের সেলগুলো ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা কাজে বিশ্বাস করি, আমাদের যেহেতু লেট ডাউন স্ট্রাটেজি নেই, অনেক দেশে আছে, কিন্তু আমাদের দেশে নেই। একেবারে যে কিছুই নেই, তা কিন্তু নয়। প্রধানমন্ত্রীর শূন্য সহিষ্ণু নীতি আছে। এটাতো একটা স্ট্র্যাটেজি, ডিক্লেয়ার পলিসি। ব্রিটেনে হয়তো লেট ডাউন পলিসি আছে, আমাদের নেই। কিন্তু তাদের তো কনস্টিটিউশন নেই, আমাদের তো আছে। তার মানে তো ব্রিটেন অচল নয়, আসলে একেক দেশের একেক ধরনের পলিসি। প্রত্যেকটি দেশ ইউনিক। আমার দেশের সংস্কৃতি আমাদের সমাজ আমার অর্থনীতির সব মিলিয়ে হচ্ছে আমার দেশের পলিসি নির্ধারিত হবে। কপি পেস্ট দিয়ে এসব কথা হয় না। যারা এই ধরনের কথাবার্তা বলেন তারা কপি-পেস্ট থেকে বলেন।

আমাদের দেশে এন্টিটেররিজম, মানি লন্ডারিং আইন, আইসিটি আইন আছে। সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষণার বাইরেও প্রথাগত কৌশল রয়েছে। আমাদের মতো করে কার্যকর পলিসি আমাদের রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে আমরা প্রচুর সফলতা পেয়েছি। আমাদের কর্মকৌশল আমাদের ফল দিয়েছে। আমাদের যে সমন্বয় নেই তা কিন্তু নয়, আমাদের সমন্বয় রয়েছে। সমন্বয় মেকানিজম রয়েছে।

হলি আর্টিজান হামলার ব্যাপারে র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্যের ঘাটতি ছিল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, আমরা প্রতি মাসে অনেক ঘটনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করি, কিন্তু সেগুলো সামনে আসে না। আপনি শতভাগ সফল হবেন তা কিন্তু নয়, ১০০ ঘটনার মধ্যে ৯৯টিতে সফল হলো। কিন্তু একটিমাত্র ঘটনায় সফল হতে পারলো না বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ব্যর্থ বলা যায় না। এটা বলা নিষ্ঠুর হবে। আমি মনে করি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। বাংলাদেশের আমরা এখন যে পরিস্থিতিতে আছি, সেখানে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর যথেষ্ট অর্জন ও সফলতা রয়েছে।

জঙ্গি হামলার ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে কি না জানতে চাইলে র‌্যাব ডিজি বলেন, এটা বাংলাদেশের বিষয় নয়, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের বিষয়। বিশ্বের সকল দেশের মাধ্যমে জঙ্গিবাদকে সমূলে পরাস্ত ও বিনষ্ট না করা পর্যন্ত জঙ্গিবাদের ঝুঁকি থাকবে। সুতরাং সকল দেশের আইনশৃংখলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাকে মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। আমরা এক্ষেত্রে পুরোপুরি সচেতন ও সতর্ক।

তিনি আরও বলেন, জঙ্গিরা প্রতিনিয়ত মার খাচ্ছে, ধরা পড়ছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত তারা কর্মকৌশলও পরিবর্তন করছে। বাংলাদেশে জঙ্গিরা এখন কাজ করছে সেলভিত্তিক। ২/৩ জন মিলে সেল তৈরি করছে। যখনই তাদের সম্পর্কে তথ্য মিলছে গ্রেফতার করা হচ্ছে, নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। তাদের যা ক্যাপাসিটি আছে, তার চেয়ে বেশি আন্তরিকতা, নিষ্টা দায়িত্ব কর্তব্য থেকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে জঙ্গিবাদ বিরোধী কাজ করে যাচ্ছে র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন