প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ভয়ে ভীত নই। মানুষ মরণশীল। যখন জন্মেছি মরতে একদিন হবেই। করোনায় মরি, গুলি খেয়ে মরি, বোমা খেয়ে মরি, অসুস্থ হয়ে মরি বা কথা বলতে বলতে মরে যেতে পারি। কাজেই মৃত্যু যেখানে অবধারিত, মৃত্যুকে তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি ভয় পাইনি কখনো, পাবও না। আমি তো এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসি নাই। আমি তো জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতেই এসেছি।

বুধবার (১০ জুন) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের ৮ম অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার ওপর আনিত শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন। এর আগে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রধানমন্ত্রীকে ঘরে থেকে সংসদ চালানোর পরামর্শ দিলে তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী কথাগুলো বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখন দেশে ফিরে আসি সেই বাংলাদেশ যেখানে আমার বাবাকে হত্যা করেছে আমার মা, এমনকি ছোট্ট ভাই শিশু রাসেলও রক্ষা পায়নি। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর স্ত্রী মারা গেছেন। সাহানার আবদুল্লাহর শরীরে ১৫ আগস্টের ৩টা বুলেট। আমাদের পরিবারের বহুজন বুলেটবিদ্ধ। সেই খুনিদের তখন বিচার হয়নি। তাদের ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। তারা ছিল ক্ষমতায়, যুদ্ধাপরাধী তারা তখন ক্ষমতায়, ওই অবস্থায় দেশে ফিরে এসেছি। আমি যদি ভীত হতাম হয়তো আর জীবনে আসতে পারতাম না। কিন্তু আমি তো ভয় পাইনি। আল্লাহ জীবন দিয়েছে আল্লাহ একদিন নিয়ে যাবে এটাই আমি বিশ্বাস করি।

সংসদ নেতা বলেন, আল্লাহ মানুষকে কিছু কাজ দেয়, সেই কাজটুকু করতে হবে। যতদিন রাব্বুল আলামীন লিখিত কাজটা আমার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেছে। সেই টুকু যতক্ষণ শেষ না হবে ততক্ষণ হয়তো আমি কাজ করে যাব। যখন সময় শেষ হয়ে যাবে আমিও চলে যাব। এনিয়ে চিন্তার কিছু নাই। সংসদে বাজেট দেওয়া এই দুর্যোগের সময় অনেক দেশ দিতে পারছে না। আমি বলেছি না একদিকে করোনা মোকাবিলা করব। পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনটা যাতে চলে তারা যেন কষ্ট না পায় তাদের জন্য যা করণীয় সেটা আমি করে যাব। আমি তো এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসি নাই। আমি তো জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতেই এসেছি। কাজেই এটা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভয়ের কি আছে? সেটাই মনে করি। চলুন সবাই মিলে আল্লাহর কাছে দোয়া করি এই করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানব জাতি যেন রক্ষা পায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ। তবে যারা নিয়মিত চাকরি করছে তাদের কথা আলাদা। এর বাইরে কিছু লোক থাকে যারা দিন আনি দিন খায় বা ছোট খাটো কাজ করে খেত। ছোট খাটো ব্যবসা করে খেত তারা প্রত্যেকে কর্মহীন হয়ে পড়ে। প্রতিটি মানুষের খবর নিয়ে নিয়ে তাদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছানো বাড়িতে কিছু টাকার ব্যবস্থা করা। এমনকি বিভিন্ন এতিমখানা থেকে শুরু করে মসজিদ, বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এমনকি রিকশার পেছনে যারা আর্ট করে অথবা সাংস্কৃতিক কর্মী বা সাংবাদিক প্রত্যেককে সরকারিভাবে কিছু ও আমাদের কল্যাণ তহবিল থেকে যাদের দরকার সকলকে খুঁজে খুঁজে বের করে সাহায্য দিয়েছি।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই তথ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছি যারা কাজ করে আর্টিস্ট বা শিল্পী তাদের অনেকেই হয়তো চেনে কিন্তু শিল্পীদের পেছনে সহযোগী যে হাতগুলি তাদের কথা কেউ ভাবে না। অবশ্য এটি আমার নিজের না, আমার ছোট বোন রেহানা সেই এগুলো খুঁজে খুঁজে বলেছে যারা শিল্পীদের সহযোগী তারা সাহায্য পাবে না কেন? রিকশাগুলোর পেছনে যে পেইন্টিং করে এটাও রেহানার পরামর্শ। ঠিক এই ভাবে কিছু কিছু জিনিস আছে মানুষের নজরে আসে না। সমাজে দৃষ্টির অগোচরে থেকে যায়, অগোচরে থেকে যাওয়া বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের কষ্ট তাদের দুঃখটাও যাতে একটু লাঘব করা যায় সেটুক আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। যে তাদের কাছে কিছু পৌঁছে দেওয়ার। তাদের সহযোগিতা করার। সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা। প্রত্যেক জেলায় আলাদা ফান্ড দিয়ে রেখেছি যেন একটা মানুষ না খেয়ে কষ্ট না পায়। প্রত্যেকে যেন সহযোগিতা পায় সেই ব্যবস্থা করেছি। এটা নিয়ম মাফিক না বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা আক্রান্ত মানুষ যখন মারা যাচ্ছিল তখন পরিবারের কেউ কাছে আসছিল না তাদের দাফন করতে। তখন আমাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষের ভেতরে মানবিক গুণাবলী আছে। যেখানে নিজের আপনজন ফেলে যায় সেখানে আমাদের নিজের দলের নেতাকর্মী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এই যে মানবিকতা তাদের ভেতরে। এটার জন্যই আমি খুব আশাবাদী।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন