নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার (১৪ নভেম্বর) ওই দ্বীপের আইনশৃঙ্খলা পরিদর্শন করে দলটি।

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (এডিশনাল আইজিপি) মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ, এপিবিএন ও নৌ-পুলিশের মোট ১১ জন সদস্য ছিলেন এই প্রতিনিধি দলে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেন, নৌ-পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম, নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলমগীর হোসেনসহ ঢাকার উচ্চ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকতারাও এই দলে ছিলেন।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলমগীর হোসেন জানান, ‘শনিবার সকালে এডিশনাল আইজিপি স্যারসহ পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল ভাসানচর পরিদর্শন করেছেন। ভাসানচরে বসবাসে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ রয়েছে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশ দেখাশোনা করছে। এছাড়া সেখানে পুলিশ, নৌ-এপিবিএনসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা দায়িত্ব পালন করছে। এসব বিষয়সহ পুলিশের বিভিন্ন ডেভলমেন্টের কাজের ব্যাপারে ঘুরে দেখেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

নোয়াখালী জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) দীপক জ্যোতি খীসা বলেন, উচ্চ পর্যায়ের পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার সকালে ভাসানচর পৌঁছেন, পরিদর্শন শেষে সন্ধায় ফিরে আসেন।

প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এ বিষয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্য চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, আমরা ভাসানচর পরিদর্শন করেছি। বিশেষ করে সেখানে নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশ দেখভাল করছে। ফলে সেখানে পুলিশের একটি ব্যাটালিয়ন নির্মাণ করা হবে। আরও নিরাপত্তা বাড়াতে দ্বীপ ঘুরে দেখে সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবির থেকে এক লাখের মতো রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য নিজস্ব অর্থে সেখানে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এদিকে গত সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরের আবাসন ব্যবস্থা বসবাসের উপযোগী কি না তা দেখতে উখিয়া-টেকনাফ শিবিরের দুই নারীসহ ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতাকে নিয়ে যায় সরকার। তারা ভাসানচরের আবাসন ব্যবস্থা দেখে ‘মুগ্ধ’ হলেও ফিরে এসে জানান, সেখানে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আসার জন্য আকুতি জানিয়েছেন তাদের কাছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৯ ফুট উঁচু বাঁধ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

কক্সবাজার অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন জানিয়েছিলেন, ভাসানচরকে বসবাস উপযোগী করতে ওই দ্বীপে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ রোহিঙ্গাদের জীবিকার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং সেখানে থাকা রোহিঙ্গারা ভালো আছেন।

প্রসঙ্গত, অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে গত মে মাসে বাংলাদেশে ফিরে আসা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৮৬ জন নারী, ৯৬ জন পুরুষ এবং ২৪ জন শিশু।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন