ভূমি সচিব পরিচয় দিয়ে সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজকে হুমকিদাতা সেই ভূয়া সচিবকে রোববার মানবতাবাদী বিচারক শেখ মফিজুর রহমান তাঁরই আদালতে জামিনে মুক্তির আদেশ দিয়ে মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন , ক্রোধান্বিত না হয়ে অপরাধিকে ক্ষমা করে ধৈয্যশীল হওয়ার বিরল দৃষ্টান্ত।
জামিনের আদেশ শুনে আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত আসামী গোবিন্দ কুমার মন্ডল কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘স্যার আমি ক্ষমা চাচ্ছি, জীবনে আর কখনও এ ধরনের কাজ করবো না।’
এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবী, আইনজীবী সহকারী ও বিচার প্রার্থী সকলে গোবিন্দ মন্ডলের এহেন কাজের জন্য তিরষ্কার করলে বিচারক শেখ মফিজুর রহমান উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, “ভুল তো মানুষেই করে, আর গোবিন্দও তো একজন মানুষ, সে যখন বলছে, না বুঝে ভুল করে ফেলেছে, সেক্ষেত্রে আর কিইবা করার আছে।’”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভূমি সচিব পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে, সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানকে একটি বিশেষ মামলায় তাদের পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য শ্যামনগরের যাদবপুর গ্রামের মনোরনঞ্জন মন্ডলের ছেলে গোবিন্দ কুমার মন্ডল (৩৫) তদবীর করেন। শুধু তাই নয়, রায় পক্ষে দিতে না পারলে এলাকার উন্নয়নের জন্য দুই লক্ষ টাকা চাঁদাও দাবী করেন ভূয়া সচিব গোবিন্দ কুমার মন্ডল।
উক্ত ঘটনা চ্যালেঞ্জ করে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এর পক্ষে আদালতের নাজির আব্দুল কাদের বাদী হয়ে গত ৩০ নভেম্বর সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এবং পুলিশ মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে হুমককিদাতা গোবিন্দ কুমার মন্ডলের মোবাইল ফোন ট্রাকিং করে তাকে গ্রেপ্তার করেন।
এরপর শুরু হয় ভূয়া সচিব গোবিন্দ মন্ডলের হাজত বাসের পালা। সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির কোন সদস্য তার (গোবিন্দ) পক্ষে যেমন ওকালতি করেননি, তেমনি জঘন্য ওই অপরাধের জন্য গোবিন্দ মন্ডলের পরিবারের পক্ষ থেকেও জামিন ধরার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এক পর্যায়ে মানবতাবাদী সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান জেল খানায় খোঁজ-খবর নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল এইড এর মাধ্যমে জামিন ধরার জন্য পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে প্যানেল আইনজীবী এড. খায়রুল বদিউজ্জামানকে গোবিন্দ মন্ডলের জামিন ধরার জন্য। নিয়োগ দেওয়া হয়,।
অবশেষে রোববার নিজ আদালতে শুনানী শেষে পিপি এড. আব্দুল লতিফসহ উপস্থিত আইনজীবীদের ঘোর বিরোধিতা সত্বেও গোবিন্দ মন্ডলের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান।