গুলশানের হলি আর্টিজানে দেশের ইতিহাসে বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার ঘটনার মাধ্যমে বড় রকমের ধাক্কা দিয়েছিল নব্য জেএমবি। ধর্মান্ধতায় ডুবে থাকা উগ্রপন্থিরা ‘জিতে’ যাচ্ছে এমন শোরগোল উঠেছিল চারপাশে। কিন্তু জঙ্গি দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভিত্তিতে নানামুখী বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ঠিকই বিশ্বে জঙ্গি দমনে ‘রোল মডেল’ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে সতের কোটির বাংলাদেশ।

কিন্তু হলি আর্টিজানের সেই নৃশংসতার পর বিশ্ব পরিমন্ডলে কেমন ঠেকেছিল বাংলাদেশের অবস্থান? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরিয়ে বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টার জেরে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের তাবৎ জ্ঞানের ফেরিওয়ালা ও নৈরাশ্যবাদীদের জবরদস্তিপূর্বক বাণী চিরন্তনীও শোনতে হয়েছে দেশকে।

নিজের একাধিক বক্তব্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই এই বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ। ধর্মান্ধ উগ্রপন্থীদের বদ মতলব হাসিলের অপচেষ্টা রুখে দিয়ে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদকে হার মানিয়ে কঠিন পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে-বুদ্ধির সঙ্গে যুক্তি আর ঋদ্ধ জ্ঞানের মেলবন্ধন ঘটিয়ে চোখ বরাবর আঙুল রেখে সেই বিষয়টিই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন ইউরোপের দেশ জার্মানিতেও।

২০১৯ সালের মার্চ মাসে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত সেই ওয়ার্কশপে তৎকালীন র‌্যাব প্রধান ড.বেনজীর আহমেদের একটি বিচক্ষণ সিদ্ধান্তেই রীতিমতো ‘কুপোকাত’ হয়েছিলেন লাল-সবুজের চাদরে মুড়ানো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নিয়ে অতিমাত্রায় উৎসাহিত বৈশ্বিক সেই জ্ঞানী মহারাজরা!

সেদিন প্রযুক্তিবান্ধব, আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী একজন বেনজীর আহমেদ বদলে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন ওদের মানসজগত। লজ্জায় ‘থ’ মেরেছিলেন সেইসব বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠারা! বর্তমান বিশ্বের জটিল এক বাস্তবতা জঙ্গিবাদ ও টেরোরিজমকে কোণঠাসা করতে তাঁর প্রত্যয়দীপ্ত অবিনাশী উচ্চারণ বাহ্বা কুড়িয়েছিল আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও।

আজও মনের হীরক দ্যুতিতে উজ্জ্বল প্রায় দুই বছর আগের স্বর্ণালী সেই ঘটনাপ্রবাহ এবার নিজের জবানীতেই উপস্থাপন করেছেন গত এক যুগে পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে বুক চিতিয়ে নেতৃত্ব দেওয়া বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ।

মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আর্মি গলফ ক্লাবে র‌্যাবের আয়োজনে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রের টিজার প্রকাশ অনুষ্ঠানে সেই গল্পের সারসংক্ষেপ প্রচারণার আলোতে নিয়ে এসেছেন পুলিশের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকর দিক নির্দেশনায় ধীর, বাস্তবধর্মী এবং পদ্ধতিগত নানা কাজের মধ্যে দিয়ে জঙ্গিবাদের শেকড়-বাকড় উপড়ে ফেলার দৃঢ় মানসিকতায় একেবারেই অসম্ভবকে সম্ভব করে নিজের নেতৃত্বের মুন্সীয়ানার প্রমাণ রাখা ড.বেনজীর আহমেদ স্মৃতির প্রকোষ্ঠে জমে থাকা ওই গল্পের ধারাপাত বর্ণনা করেন এভাবে-‘২০১৬ সালে যখন হালি আর্টিজানে অ্যাটাক হলো তখন সবাই বলেছে বাংলাদেশ এখান থেকে বের হতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ’র অসীম রহমতে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এবং দেশবাসীর সমর্থনে আমরা আগেও যেরকম জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সফল হয়েছি, ২০১৬ সালের অ্যাটাকের পরেও সফল হয়েছি।

কিন্তু যেটা সমস্যা হলো-২০১৬ সালের পর থেকে ২০১৭ সাল, ২০১৮ সালের প্রথম পর্যন্ত বিদেশে গেলেই আমাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হতো। বিদেশ থেকে কেউ আসলেই আমাদের শুধু জ্ঞান দেয়। কী হবে, এখান থেকে বের হতে হবে, কীভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে হবে।

তখন আমরা র‌্যাবের একটি স্পেশাল ফোর্স তৈরি করি। এই স্পেশাল ফোর্সের ওপরে আমরা ১৫ মিনিটের ছোট একটি ডকুমেন্ট্রি করি। এরপর আমি ২০১৯ সালের মার্চ মাসে জার্মানিতে একটি ওয়ার্কশপে যাই। সেই ওয়ার্কশপে গেলে আমাকে দেখে অনেকেই কথাবার্তা বলার চেষ্টা করছিল। আমাকে জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করছিল।

এরপর যখন আমার কথা বলার টার্ম আসলো, তখন হোয়াইট উই আর ডুয়িং ব্যাক ইন বাংলাদেশ, এটা বুঝানোর জন্য যখন আমি আমার ১৫ মিনিটের ডকুমেন্ট্রিটিকে পর্দায় দেখিয়েছি। তারা চিন্তাও করে নাই আমরা এ ধরণের কিছু একটি করতে পারবো। ওই কনফারেন্সে সবাই ডকুমেন্ট্রি নিয়ে কথা বলেছে।’

ড.বেনজীর আহমেদের এই বক্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করেন অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সাংবাদিকদের  সঙ্গে আলাপে তারা বলেন, ‘নিজের মেধা ও প্রজ্ঞার অপূর্ব সমন্বয়ের মাধ্যমে হলি আর্টিজানের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি পেরিয়ে অপশক্তি রুখে দেওয়ার মাধ্যমে দেশকে ভয়াল জঙ্গিবাদের উত্থানমঞ্চ বানানোর ষড়যন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে সফল হয়েছেন ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)।

দেশকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার কুমতলবেরও যবনিকাপাত ঘটিয়ে ছেড়েছেন। আত্মতৃপ্তির অবকাশের চিরায়ত প্রথায় না হেঁটে ধর্মান্ধ অপশক্তিকে ‘লাল ঘোড়া দাবড়ে দিয়ে’ বিশ্বে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের কঠোর অবস্থান নিশ্চিতের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন ধর্মান্ধ চরমপন্থী গোষ্ঠীকে আক্ষরিক অর্থে নির্মূলের উদাহরণ কেবল বাংলাদেশই।’





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন