করোনা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমে ওঠেছে। ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থী-ক্রেতা বাড়লেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে।

এদিন সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসে সর্বস্তরের জনতা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সে স্রোত মিলিত হয়েছে গ্রন্থমেলায়।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে লোকারণ্য হয়ে ওঠে।
একুশের শোকগাঁথা নিয়ে পাঞ্জাবি, বর্ণমালায় শাড়ি, মুখে রং-তুলিতে ‘মহান শহীদ দিবস অমর হোক’ লিখে ছোট ছোট গ্রুপ হয়ে মেলা ঘুরে দেখছেন তারা।

বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ নান্দনিক স্টলগুলোর সামনে ছবি তোলার জন্য ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মেলার পরিসর বাড়ায় প্রথমদিকে লোকজনের সমাগম হলেও সেটি সেভাবে পরিলক্ষিত হয়নি।

একুশে ফেব্রুয়ারির বিশেষ দিনে এতই দর্শনার্থী-পাঠক আসায় সব প্রকাশনীতে কম-বেশি ভিড়। ব্যাপক লোকের সমাগম হলেও মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি অনেককে উপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তবে প্রবেশের সময় সবাই মাস্ক পরিধান করে প্রবেশ করেছেন।
অবসর প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী জানালেন, মেলায় আজকে সবচেয়ে বেশি পাঠক আসছে। বই বিক্রিও ভালো হচ্ছে। মেলার অন্যদিন গল্প-উপন্যাস চাহিদা বেশি থাকলেও আজকে ভাষা সম্পর্কিত বইয়ের আগ্রহ ছিল বেশি।

ভাষাচিত্র প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আল আমিন  কে বলেন, আজকে আমাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে। একুশে ফেব্রুয়ারির কারণে দর্শনার্থী যেমন আসছে তেমনি পাঠকও আসছে। যারা এক-দুটি করে বই কিনে ফিরছেন।

একুশে বাংলা প্রকাশন থেকে ইতিহাসবিদ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের ভাষা আন্দোলন, অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বইটি দেখছিলেন স্কুলশিক্ষক আবদুর রাজ্জাক। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, স্যারের লেখা বরাবরই মৌলিক। আজকে যেহেতু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সে কারণে প্রাসঙ্গিক এ বইটা দেখছি।

ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের সেলস এক্সিকিউটিভ নুরুল ইসলাম  বলেন, আমাদের মৌলিক বইগুলোর বেশি চাহিদা। ‘পলিটিক্যাল পার্টিস ইন ইন্ডিয়া’ বইটি বেশি বিক্রি হচ্ছে।

মেলার সপ্তম দিনে বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা ২০২২। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ফিরে দেখা: আমাদের ভাষা আন্দোলন শীর্ষক অমর একুশে বক্তৃতা ২০২২ প্রদান করেন কবি আসাদ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

স্বাগত বক্তব্যে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, আমাদের একুশ এখন সারা বিশ্বের। একুশের ৭০ বছর আমাদের জাতিসত্তার উৎসমূলে নতুন করে দৃষ্টিপাত এবং ভাষা-সংস্কৃতি ও জাতিতাত্ত্বিক নিবিড় আত্মঅন্বেষায় উদ্বুদ্ধ করে।

প্রাবন্ধিক কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, অমর একুশের ৭০ বছর পূর্ণ হল আজ। তবে বাঙালির ভাষা আন্দোলন কেবল ৭০ বছরের বিষয় নয়, হাজার বছর ধরে বাঙালি আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকারের জন্য লড়াই করে এসেছে। এ লড়াই কেবল সাংস্কৃতিক লড়াই ছিল না, এ লড়াই ছিল অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং অবশ্যই রাজনৈতিক।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের মূলে ছিল পূর্ববাংলার সংগ্রামী জনগণের লড়াকু ভূমিকা। তারা এ আন্দোলনকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিণতিতে নিয়ে গেছে এবং কালক্রমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়কে আসন্ন করেছে।

সভাপতির বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, অমর একুশের ৭০ বছর পূর্তি বাঙালি জাতির জন্য পরম গৌরবের বিষয়। ভাষা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।

আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন, ইমদাদুল হক মিলন ও আনিসুল হক।

আজকের অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাকিদ হায়দার, বিমল গুহ ও সাবেক সিনিয়র সচিব নৌপরিবহন মন্ত্রনালয় ও এসডিএফ চেয়ারপার্সন মো:  আবদুস সামাদ( কবি ফারুক)।তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর স্মরণে তাঁর লেখা তোমার সেই কালো চশমা কবিতাটি আবৃতি করেন।

আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী দেওয়ান সাইদুল হাসান, জয়ন্ত রায় ও শাহাদৎ হোসেন নিপু। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’। নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যশিল্পী সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পা ও ফরহাদ আহমেদ শামীম। সংগীত পরিবেশন করেন মহাদেব চন্দ্র ঘোষ, কল্যাণী ঘোষ, স্বর্ণময়ী মণ্ডল, তাজুল ইমাম ও আরিফ রহমান। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল (তবলা), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কি-বোর্ড), মো. আরিফ কোরাইশী (গিটার) ও মো. ফারুক (অক্টোপ্যাড)।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন