যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। করোনার দুই বছর পর দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে আনন্দের এই উৎসব উদযাপন শুরু করেন।

এক মাস সিয়াম সাধনার পর মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভের আশায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের লাখো-কোটি মুসল্লি মঙ্গলবার সকালে ঈদগাহ, মসজিদ ও খোলা মাঠে সামিয়ানার নিচে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বঙ্গভবনের দরবার হলে ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরিবারের সদস্য ও বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে রাষ্ট্রীয় বাসভবনে ঈদের নামাজ আদায় করেন তিনি। এরপর দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করা হয়। রাষ্ট্রপতি পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান।

সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের লাখো মানুষ উৎসব আমেজে সেখানে নামাজ আদায় করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক তত্বাবধানে ঈদের প্রধান জামাতে ইমামের দায়িত্ব পালন করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

জাতীয় ঈদগাহে প্রধান ঈদ জামাতে নারী ও বিদেশী কূটনীতিকদের জন্য নামাজ আদায়ে বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। মুসুল্লিদের জন্য ওযু, খাবার পানি ও মোবাইল টয়লেটেরও ব্যবস্থা ছিল। গরমের জন্য গোটা ঈদগাহ জুড়ে রাখা সাতশর বেশি বৈদ্যুতিক পাখা।

জাতীয় ঈদগাহে সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানে নেওয়া হয় তিন স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রধান এ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকে র‌্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা ঈদগাহ ময়দানে সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন।

ঈদগাহের সকল প্রবেশ পথ এবং ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নামাজের স্থানসহ ঈদগাহ মাঠের গোটা প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। মুসল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশের আগে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশীর পর আর্চওয়ে দিয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে হয়।

করোনা মহামারি কাটিয়ে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এবার মসজিদের পাশাপাশি খোলা মাঠেও ঈদ জামাতের আয়োজন করে। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে ৫টি করে মোট মোট ২৭০টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

রাজধানীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। এখানে এবারও ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টায়, এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয় শেষ ঈদ জামাত।

জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমানের ইমামতিতে প্রথম জামাত সকাল ৭টা অনুষ্ঠিত হয়। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. ইসহাক।

জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভীর ইমামতিতে দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টা অনুষ্ঠিত হয়। মুকাব্বির ছিলেন জাতীয় মসজিদের সাবেক মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. আতাউর রহমান।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারীর ইমামতিতে তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেয মো. নাছির উল্লাহ।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হকের ইমামতিতে চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। মুকাব্বির ছিলেন জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. শহিদ উল্লাহ।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহিউদ্দিন কাসেমের ইমামতিতে পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল পৌনে ১১টায়। মুকাব্বির ছিলেন জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. রুহুল আমিন। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা জাতীয় মসজিদে ঈদের জামাতে অংশ নেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মসজিদের চারপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। মসজিদে প্রবেশ গেটগুলোতে তল্লাশি করে মুসল্লিদের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়েছে। প্রবেশ গেটগুলোতে বসানো হয় আর্চওয়ে। দৃশ্যমান টহল ছাড়াও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টায় ঈদের জামাত ও খুতবা শেষে মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সংসদ সচিবালয় মসজিদের খতিব ইমাম ক্বারী আবু রায়হান।

সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, সরকারি প্রতিষ্ঠান কম





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন