প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পুলিশ সদস্যদের আগ্নেয়াস্ত্র, মাদকের অপব্যবহার রোধ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ওপর বিশেষ নজর দিতে বলেছেন। পাশাপাশি জনগণকে এমনভাবে সেবা দিতে বলেছেন যাতে তারা পুলিশকে তাদের জীবন রক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করতে পারে।

বাংলাদেশ পুলিশের পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সব সময় সতর্ক থাকা দরকার। আগ্নেয়াস্ত্র, মাদকের অপব্যবহার, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের ঘটনা যেন আর না ঘটতে পারে, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকালে বাংলাদেশ পুলিশের পাঁচটি বিশেষ কার্যক্রম উদ্বোধন সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখায় অবদান রাখার জন্য পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা রাখার আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযানে সফলতা অর্জন করেছে, অব্যাহতভাবে মাদক নির্মূল, সাইবার ক্রাইম/গুজব, মানি লন্ডারিং, অস্ত্র, চোরাকারবার, মানব পাচার রোধসহ নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলছে এবং এগুলো যেন আর না ঘটে সেজন্য বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কেননা দেশে একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় থাকলেই আমরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করতে পারবো।

বাংলাদেশ পুলিশের এ অনুষ্ঠানে গণভবনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পদ্মা সেতু উত্তর থানা, মুন্সীগঞ্জ, মহিলা পুলিশ বরাক প্রান্ত খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি), খুলনা, ময়মনসিংহ পুলিশ হাসপাতাল এবং পিরোজপুর জেলার পুলিশ লাইন প্রান্ত যুক্ত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে আরও জনবান্ধব হওয়ার আহবান জানিয়ে ১৯৭২ সালের ৮ মে সারদা পুলিশ একাডেমিতে জাতির পিতা প্রদত্ত ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধৃত করেন।

জাতির পিতা বলেছিলেন- ‘আপনারা জনগণের সাহায্য ও সহযোগিতায় এদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করবেন। আমি দুনিয়ার আনেক জায়গায় ঘুরেছি। গ্রেট ব্রিটেনে দেখেছি একজন সিপাহীকেও জনসাধারণ শ্রদ্ধা করে। কোন পুলিশ কর্মচারীকে দেখলে তারা আশ্রয় নেয়ার জন্য তাঁর কাছে দৌড়ে যায়। তারা মনে করে পুলিশ তাদের সহায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশেও পুলিশ বাহিনী সেভাবেই জনগণের আস্থা অর্জন করবে যেন জনগণ মনে করে যে তার জীবন রক্ষায়, মান রক্ষায় পুলিশই হচ্ছে শেষ ভরসা। কাজেই পুলিশের কাছেই তারা সেই আশ্রয়টা পাবে,সেই ভরসার স্থান হিসেবে পুলিশকে জনগণের সামনে নিজেকে সেভাবে তুলে ধরতে হবে। সেটাই আপনারা করবেন। জাতির পিতার এই নির্দেশ আপনারা মেনে চলবেন সেটাই আমি চাই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

পাঁচটি বিশেষ কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- নবস্থাপিত ‘পদ্মা সেতু (উত্তর) থানা ও পদ্মা সেতু (দক্ষিণ) থানা উদ্বোধন। বাংলাদেশ পুলিশ কতৃর্ক দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত ১২০টি গৃহ হস্তান্তর। নবনির্মিত ১২টি পুলিশ হাসপাতাল উদ্বোধন। বাংলাদেশ পৃলিশের ৬টি নারী ব্যারাক উদ্বোধন এবং অনলাইন জিডি কার্যক্রম উদ্বোধন।

প্রকল্পগুলোর ওপর একটি ভিডিও চিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। পরে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় উপকারভোগী এবং কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে মূল দায়িত্ব পালন করে থাকে বাংলাদেশ পুলিশ। দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখতে বাংলাদেশ পুলিশ অনন্য অবদান রাখছে।

তিনি বলেন, আমাদের সরকার একটি জনবান্ধব ও সেবাধর্মী পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের মেধা, বুদ্ধিমত্তা ও আন্তরিকতা দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে কমিউনিটি ও বিট পুলিশিং কার্যক্রম বেগবান করে জনবান্ধব পুলিশ গড়ে তুলতে হবে।

সিনিয়র সচিব বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

আইজিপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্ত ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেতুর নিরাপত্তাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ সকল আইনগত সেবা প্রদানের জন্য মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতু উত্তর থানা এবং শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে সংযোজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সূচিত হবে। এ পরিবর্তনের অবিচ্ছেদ্য অংশীদার হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ দেশ ও মানুষের জন্য নিরলস কাজ করে যাবে।

পুলিশ প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ প্রত্যয় বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সারাদেশে ৫২০টি গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে নির্মিত ৪০০ গৃহ ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১২০টি গৃহ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এ সকল বাড়ি পেয়ে গৃহহীন মানুষের জীবন-জীবিকায় দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটেছে।

পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা সুবিধার কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত উদ্যোগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে ২৫০ শয্যা থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দিক নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল করোনা অতিমারিকালে পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ জনগণকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় ১২টি পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশ সদস্য ছাড়াও সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ জনগণকে এসব হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ৬৪টি জেলায় নারী পুলিশ সদস্যের জন্য পৃথক ব্যারাক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০২০ সালের মধ্যে ২২টি জেলায় নারী পুলিশ সদস্যদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ব্যারাক ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর আরও ছয়টি ইউনিটে ব্যারাক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

আইজিপি বলেন, জনগণের সেবাপ্রাপ্তি সহজতর করার লক্ষ্যে অনলাইন জিডি চালু হতে যাচ্ছে। ফলে ঘরে বসেই নাগরিকগণ অনলাইনে জিডি করতে পারবেন। তিনি বলেন জনগণের বঙ্গবন্ধুর কাঙ্খিত ‘জনগণের পুলিশ’ হয়ে তাঁর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণের প্রত্যয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে অঙ্গীকারাবদ্ধ বাংলাদেশ পুলিশ।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন