হলি আর্টিজেন হামলার পর বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ালেও জঙ্গি হুমকি উড়িয়ে দিচ্ছেন না পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।

তিনি বলেছেন, “বিশ্ব থেকে জঙ্গিবাদ একেবারে নিশ্চিহ্ন না হলে এদেশ থেকেও নিশ্চিহ্ন হবে না।”

রোববার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটেরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেন, “হলি আর্টিজানের পরে আমরা ঘুরে দাঁড়ালেও হুমকি এখনও যায়নি। কারণ বিশ্বে এটা (জঙ্গিবাদ) এখনও রয়েছে।”

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামী চিন্তাবিদরা ‘অজানা কারণে’ কথা বলতে চায় না বলেও মন্তব্য করেন পুলিশ প্রধান।

“জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির ইসলামী চিন্তাবিদ, মাওলানা ও ধর্মীয় নেতা যারা আছেন; তাদেরকে কথা বলতে হবে। কারণ বিশ্বব্যাপী ইসলামিক চিন্তাবিদদের কোনঠাসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

আইজিপি বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন প্রচুর ইসলামিক ভিডিও দেখা যায়; যেখানে কোনো মডারেটর নেই।

অর্থাৎ কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক না- তা বোঝা মুশকিল। কারণ ইউটিউবে ও সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনো মডারেটর নেই। অনেক বিভ্রান্তিকর তথ্য ভাইরাল হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে ধর্মীয় নেতাদের কথা বলতে হবে “

ছয় বছর আগের হোলি আর্টিজান হামলার পরের পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, “আমাদের দেশের আ্যম্বাসিগুলো (ঢাকায় বিভিন্ন দূতাবাস) পরিবার ছাড়া আ্যম্বাসি ঘোষণা করা হলো। এরপর প্রতি সপ্তাহে ঘোষণা আসতে থাকলো বাংলাদেশে কারা কারা আসতে পারবে না।

বিমানের মাধ্যমে তখন অনেক দেশ কার্গো বন্ধ করে দিয়েছিল। যদি না আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ও মিডিয়ার মাধ্যমে হ্যান্ডেল না করতে পারতাম, তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যেত।”

তিনি বলেন, “ইসলাম ধর্মকে অপবাদ দিয়ে বলা হয়- এই ধর্মটাই হচ্ছে জঙ্গি… সারা বিশ্বে গত ৪০ বছর ধরে এ ধরনের প্রচারণা চলছে।”

কোরআন শরীফের ১৬৪টি আয়াতের ‘অপব্যাখ্যা’ দিয়ে তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়ানো হয় জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, “১৬৪ টি আয়াতের ব্যাখ্যা আমরা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) দিলে হবে? এর ব্যাখ্যা বিভিন্ন আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদদের দিতে হবে।

ইসলামি চিন্তাবিদরা এসব নিয়ে কথা বলেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কেন বলেন না, জানি না। চুপ করে থাকলেতো হবে না।”

শান্তির ধর্ম ইসলামকে নিয়ে কেউ যেন জঙ্গির অপবাদ দিতে না পারে, সেজন্য ইসলামী চিন্তাবিদদের সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।


তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে একটি জঙ্গির দেশ বানানোর প্রচেষ্টা দেখেছি। হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া ঈদগাহ হামলার ঘটনাও দেখেছি, কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হয়েছে।

“সব প্রচেষ্টা ছিল এই দেশকে জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে পরিচিত করা। প্রধানমন্ত্রী দক্ষ হাতে ও দক্ষ নেতৃত্বে জঙ্গি দমন করেছেন। তা নাহলে আজ আমরা হারিয়ে যেতাম এবং জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে পরিচিত হতো “

আশাবাদ ব্যক্ত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এই দেশের মানুষ ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ নয়।”

‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সেখানে শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রধান ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, এই বই পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

বইটি ইংরেজি ও আরবি ভাষায় অনুবাদ করারও অনুরোধ জানান তিনি।

এটিইউর প্রধান মো. কামরুল আহসান বলেন, ২০১৭ সালে দেশব্যাপী জঙ্গি মোকাবিলায় পুলিশের বিশেষ ইউনিট আ্যন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) গঠিত হয়।

“আমাদেরর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করি, অভিযান পরিচালনা করি, সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা তদন্ত করি; জঙ্গি অর্থায়ন, সাইবার ক্রাইমসহ জঙ্গিবাদ বিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করি।

জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে গিয়ে যা কিছু প্রয়োজন সেগুলো করে থাকি। এটিউকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী করে তুলতে আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আ্যন্টি টেররিজম ইউনিটকে বিশ্ব মানের সন্ত্রাস ও জঙ্গি মোকাবিলায় সক্ষম হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা চলছি জানিয়ে তিনি বলেন, “এ লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে ও সেনাবাহিনী থেকেও আমাদের সদস্যরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে।”





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন