আধুনিক পুলিশিংয়ের রূপকার, বাংলাদেশ পুলিশের আইকন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)কে অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়াম, রাজারবাগে ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম(বার) এঁর সভাপতিত্বে এ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তারা স্মৃতি চারণ করে বলেন, ৫ মে ২০১৩ হেফাজতসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের তান্ডবলীলা দমনে আপনার সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশসহ বর্হিবিশ্বে প্রসংশিত হয়েছে। সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত করে আপনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সারা দেশে ৬৯১২ টি বিট স্থাপন করে বিট পুলিশিং কার্যক্রমকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে গুলশান এবং বনানী এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে অপরাধ দমনে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন।
বক্তারা বলেন, আধুনিক ও ডিজিটাইলাইজেশন আপনার হাত ধরেই পুলিশে সূচনা হয়েছে। নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ নারী পুলিশ দ্বারা পরিচালিত পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নামে ফেসবুক পেইজ, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে কুইক রেসপন্স টিম এবং নারী-শিশু ও বয়স্কদের জন্য প্রতিটি থানায় আলাদা ডেস্ক স্থাপনে নারীরা সহজে সেবা পাচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সন্তানদের জন্য মানসম্মত শিক্ষার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জেলা পর্যায়ে স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা ও আমাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে রাজারবাগ পুলিশ বিভাগীয় হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করেছেন। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান চালু, নিয়োগ, বদলী ও পদোন্নতিতে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দুরীকরণসহ পুলিশে সার্বিক উন্নয়ণে আপনার ভূমিকা চিরদিন অমলিন হয়ে থাকবে।
বক্তারা আরও বলেন, করোনাকালীন সময়ে আপনার নেতৃত্বে পুলিশ জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে এক বিরল নজির স্থাপন করেছে, যার ফলে সকল মহলে পুলিশের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডিএমপিতে পেশা জীবনের দীর্ঘ সময়ের স্মৃতিচারণা করে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) বলেন, “ঢাকা মহানগর পুলিশের সাথে আমার একধরনের পেশাগত ও আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯০ সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরত ছিলাম। আবার ২০০০ সালে উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করি। সর্বশেষ ২০১০ সালে অক্টোবর মাসে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদান করি। আমার পেশা জীবনের দশ বছর অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলাম”।
তিনি বলেন, “আমি যখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কমিশনার হিসেবে যোগদান করি তখন ডিএমপিতে গাড়ি চুরি, ছিনতাই, মাদকের মত নানাবিধ সমস্যা ছিল। প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। সেই সময়ে যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছেন তাদের প্রত্যেকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাদের অবদান আমি স্মরণ করি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি”।
আইজিপি’র বিদায় অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “জীবনে মানুষ কত কিছু করতে পারে! স্যার, আপনি বাংলাদেশ পুলিশকে এত বেশি কিছু দিয়েছেন যার তুলনা করার দৃষ্টতা আমি রাখি না। যতদিন বাংলাদেশ পুলিশ থাকবে, ততদিন আপনার অভাব অনুভব করবে”।
তিনি বলেন, “আমরা সবসময় আপনাকে মাথার উপর বটবৃক্ষ হিসেবে পেয়েছি। ভালোবেসেছেন, আদর করেছেন, দরকার হলে ধমক দিয়েছেন কিন্তু দিনশেষে আপনি স্নেহ দিয়ে বুকে টেনে নিয়েছেন, সঠিক রাস্তা দেখিয়েছেন। শত শত মানুষের আশীর্বাদ পাওয়ার যে ক্ষেত্র আপনি তৈরি করেছেন, সেটি যদি পুলিশ ধরে রাখতে পারে তাহলে সামনে আরো এগিয়ে যাবে”।
মানুষের কর্ম জীবনে একটি বাহিনীকে কত ভাবে উপকৃত করা যায় সেটি আপনি করে দেখিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন ডিএমপি কমিশনার।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ মুনিবুর রহমান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম(বার); যু্গ্ম পুলিশ কমিশনারগণসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ ও পুলিশ সদস্যরা আইজিপির দীর্ঘ কর্মজীবনের উপর স্মৃতিচারণ করে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) এর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের উপর একটি প্রামণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।