সুদীর্ঘ ৩৩ বছরের চাকরি জীবনের ইতি টেনে অবসরজনিত ছুটিতে যাচ্ছেন সদ্য বিদায়ী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম-বার। আজ শনিবার (২৯ অক্টোবর ২০২২) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে দায়িত্ব হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে শেষ হয় তাঁর দীর্ঘ চাকরি জীবনের কর্মযজ্ঞ। একই সময়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৫তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, পিপিএম। তিনি বিদায়ী কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম-বার এর স্থলাভিষিক্ত হলেন।
বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম-বার কে আনুষ্ঠানিকভাবে রীতি অনুযায়ী পুলিশ সদস্যরা ফুলের রশি দিয়ে গাড়ি টেনে বিদায় জানান। কমিশনারের বিদায়ের সময় ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণসহ বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন। এর আগে বিদায়ী কমিশনারকে বিদায়ী সালাম প্রদান করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সুসজ্জিত একটি চৌকস দল।
গত রবিবার (২৩ অক্টোবর ২০২২) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মোঃ হারুন-অর-রশীদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, পিপিএম কে ডিএমপি’র কমিশনার হিসেবে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
খন্দকার গোলাম ফারুক ১৯৯১ সালে ২০ জানুয়ারি ১২ তম বিসিএস এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে কর্মজীবন শুরু করেন। সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে প্রথমে বগুড়ার ৪-এপিবিএন পরে সিএমপি চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি জেলা ও ডিএমপি, ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পদোন্নতিক্রমে তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (কনফিডেন্সিয়াল), ঠাকুরগাঁও, কিশোরগঞ্জ, ঝালকাঠি, জামালপুর এবং ময়মনসিংহ জেলায় পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে ডিএমপি ও ঢাকা রেঞ্জ পুলিশে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ডিএমপিতে অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক), রংপুর রেঞ্জ ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদা, রাজশাহীর অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন। সর্বশেষ পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জনগণের প্রতি তার অসাধারণ এবং অনুকরণীয় সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০৬ সালে এবং ২০১৮ সালে দু’বার বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম-সেবা) অর্জন করেন। ২০১৫ সালে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) লাভ করেন। তিনি ২০১৯ সালে আইজিপি এক্সাম্পলারি গুড সার্ভিস ব্যাজও প্রাপ্ত হন।

এছাড়াও তিনি, ২০১৪ সালে “ইন্টারপোল এবং ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন ইন্টারন্যাশনাল ল এনফোর্সমেন্ট ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিম্পোজিয়াম” এবং নেপালে অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ প্রশিক্ষণসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, তুরস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাস্ট্রসহ অনেক দেশ সফর করেছেন। তিনি ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত অ্যাঙ্গোলায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেন।
খন্দকার গোলাম ফারুক বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে আইকনিক সিনিয়র অফিসারদের একজন। অপরাধ ও সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তার অপরিসীম অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ঢাকা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (কৃষি) বিষয়ে অনার্স এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
তিনি ১৯৬৪ সালের ১লা অক্টোবর টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর থানার ঘাটানদি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৃত খন্দকার হায়দার আলী ও মাতা মোসাম্মৎ ফাতেমা বেগম। তিনি তিন কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা।