পুলিশ বাহিনীকে সেবা ও আস্থার এক সম্মিলিত উচ্চারণ উল্লেখ করে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, নারীর সাহসী ও সক্রিয় ভূমিকা দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে ও নারী-শিশুর নিরাপত্তাবোধ তৈরিসহ মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যদের প্রতি অধিক জনপ্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ১১টায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনের অডিটরিয়মে ‘নারী পুলিশের গৌরবময় যাত্রা ও অর্জন ১৯৭৪-২০২২’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আইজিপি জানান, পুলিশে এখন ১৫ হাজার ৫৬১ জন নারী সদস্য আছেন।বর্তমানে পুলিশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী সদস্য। এটি শুধু একটি সংখ্যা নয়, এটি জনবান্ধব পুলিশিং।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের উন্নয়নে নারীদের সমান অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের আবশ্যকতা উপলব্ধি করেই ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশে প্রথম ১৪ নারী সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে এক নবযাত্রার সূচনা করেছিলেন। পরবর্তীতে জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসুরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৯৯৯ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে পুলিশে নারী সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বর্তমানে মোট পুলিশ সদস্যের শতকরা ৮ দশমিক ১৯ ভাগ।
পুলিশ প্রধান বলেন, ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে প্রথম মুন্সীগঞ্জ জেলায় একজন নারী পুলিশ সুপারকে পদায়ন করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে রাঙামাটি, চাঁদপুর, নরসিংদী, ঝালকাঠি, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ জেলায় নারী পুলিশ সুপার পদায়িত হয়েছিল। বর্তমানে দুটি জেলায় (নড়াইল, গোপালগঞ্জ) নারী পুলিশ সুপার কর্মরত আছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) ২০০৮ সালের ২১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক পদযাত্রা শুরু করে। নারী পুলিশের দক্ষতা ও পারদর্শিতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়ায় সবাইকে একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্তির মাধ্যমে পেশাদারিত্ব অর্জন ও নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও নেতৃত্বের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে বিপিডব্লিউএন। আজ এই বার্ষিক সম্মেলনে প্রদর্শিত ডকুমেন্টারিতে বিপিডব্লিউএন ও বাংলাদেশের নারী পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে যে চিত্র তুলে ধরেছে তা আমাদের গর্বিত করেছে।
বাংলাদেশের পুলিশের কনস্টেবল থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার সব পুলিশ সদস্যের মধ্যে ‘জেন্ডার রেসপন্সিভ পুলিশিং’ অনলাইন মডিউল কার্যকর হলে এসডিজি’র (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অন্যতম লক্ষ্য জেন্ডার পাথক্য ও সচেতনতা আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইজিপি।
দুই দিন ব্যাপী বিপিডব্লিউএন এর বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলন-২০২২ এ বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব, নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, ড্রেস রুলস ও ক্যারিয়ার প্ল্যান; সাইবার অপরাধ: কেস এ্যানালাইসিস নারীর জন্য সচেতনতা সৃষ্টি, সংবেদনশীল সেবা প্রদান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার উন্নয়ন; মাঠ পর্যায়ের পুলিশিং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয়; নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও রূপকল্প ২০৪১; নারীর ক্ষমতায়নে প্রাইভেট ও পাবলিক ওনারশিপ এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রেক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশ; জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে নারী পুলিশের অবদান ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষায় করণীয়; স্বাস্থ্য সচেতনতা ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হবে।
এতে পাঁচ নারী পুলিশ সদস্যকে কাজের স্বীকৃতি হিসাবে অ্যাওয়াড প্রদান করা হয়েছে। তারা হলেন- এপিবিএন ১১ এর অধিনায়ক সেলিম, উপ পরিদর্শক রোজিনা আক্তার, সার্জেন্ট রোকসনা খাতুন, সহকারী পুলিশ পরিদর্শক ময়না ও কনেস্টেবল রূপা।
বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) সভাপতি ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি (প্রটেকশন অ্যান্ড প্রটোকল) আমেনা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান প্রমুখ।