পুলিশকে জনগণের বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে- ডিএমপির মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় আইজিপি

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 27 দর্শন

 

জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে এবং অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে পুলিশকে জনগণের বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে বলে জানিয়েছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ মোঃ ময়নুল ইসলাম, এনডিসি।

শনিবার (১৬ নভেম্বর ২০২৪ খ্রি.) সকাল ১০:০০ ঘটিকায় বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম, রাজারবাগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর অক্টোবর মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন আইজিপি। মাসিক এ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ মাইনুল হাসান পিপিএম, এনডিসি।

বক্তব্যের শুরুতে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আত্মাহুতি দানকারী সকল শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনা ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। একই সাথে স্মরণ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রাণ উৎসর্গকারী ও আহত পুলিশ সদস্যদের।

আইজিপি বলেন, পুলিশ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থা। জনগণকে সেবা প্রদানই পুলিশের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সেবা দেওয়ার মাধ্যমেই জনগণের কাঙ্খিত পুলিশ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সকল পুলিশ সদস্যকে একটি টিম হিসেবে কাজ করতে হবে।

আইজিপি বলেন, অপরাধের হটস্পটগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সেখানকার নাগরিক কমিটিকে শক্তিশালী করে তাদের সাথে সমন্বয় করে অপরাধ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোন অপরাধের ঘটনা ঘটলে সেটা আড়াল করা যাবে না। প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হবে। অপরাধী যেই হোক তাকে ছাড় দেওয়া যাবে না। তবে কোন মামলায় নিরীহ ও নির্দোষ ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

ইন্টেলিজেন্স বেসড পুলিশিং ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করে আইজিপি বলেন, চুরি, ছিনতাই, কিশোর গ্যাংসহ অন্যান্য সংঘবদ্ধ অপরাধের ব্যাপারে আগে থেকেই ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করে তা প্রতিরোধ করতে হবে। অপরাধ সংঘটনের পূর্বেই অপরাধ প্রতিরোধের উপর গুরুত্বারোপ করেন আইজিপি।

আইজিপি থানার অফিসার ইনচার্জদের উদ্দেশে বলেন, থানা হলো পুলিশি সেবার কেন্দ্রবিন্দু। থানায় সেবা নিতে আসা মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। কারণ যিনি থানায় আসছেন, ধরে নিতে হবে তিনি কোন না কোন ভাবে বাদী, ভিকটিম কিংবা সাক্ষী। তাদের সাথে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে যথাযথ পুলিশি সেবা প্রদান করে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে হবে।

আইজিপি বলেন, ঢাকা শহরের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে যানজট। পূর্বের তুলনায় ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগকে ধন্যবাদ জানান আইজিপি এবং আরো উন্নতি করতে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

তিনি বলেন, পুলিশের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। সকল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত বিভিন্ন পেশাগত বিষয়ে আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

ডিএমপির মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় আইজিপি বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের বর্তমান সময়ে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং পর্যায়ক্রমে তা সমাধানের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।

সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মহানগরীতে আড়াই কোটি জনসংখ্যা রয়েছে তাদের সেবা দিতে ডিএমপি সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এই মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সম্মানিত নগরবাসীর সেবা দিতে আমাদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবস্থা ছিল, সেই পরিস্থিতি থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। আপনারা কাজ করছেন বলেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই উন্নতি হয়েছে। যে কোন পেশায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা যে কাজগুলো করি এর মধ্যেও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে যে চ্যালেঞ্জ আসবে, সেগুলো যাতে আমরা মোকাবেলা করতে পারি সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা ও চাঁদাবাজির ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য আমাদের পুলিশি তৎপরতা জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি যে সকল ঘটনা ঘটবে তার সঠিক তদন্তপূর্বক প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। অপরাধপ্রবণ স্থানগুলো চিহ্নিত করতে হবে। অপরাধপ্রবণ স্থানগুলোতে চেকপোস্ট ও টহল বাড়ানোর পাশাপাশি জনগণের সাথে সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সভায় যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোঃ ফারুক হোসেন অক্টোবর ২০২৪ মাসের সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি যেমন-ডাকাতি, দস্যুতা, চুরি, সিঁধেল চুরি, খুন, অপমৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনা, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন মামলা সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করেন।

পরে অপরাধ পর্যালোচনা সভায় অক্টোবর মাসে ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণকে পুরস্কৃত করেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ।

মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোঃ ইসরাইল হাওলাদার; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ মাসুদ করিম; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান পিপিএম-বার; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মোঃ শওকত আলী; যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণ, ডিএমপির সকল থানার অফিসার ইনচার্জগণ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন