আলাউদ্দিন হত্যার বিচারের প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাবে,এ আশায় বুক বেঁধে গভীর শ্রদ্ধায় প্রিয় নেতাকে স্মরণ করি

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 194 দর্শন

 

জুন সাংবাদিকদের জন্য এক বিবর্ণ মাস। এ মাস আসলেই স্বজন হারানো বেদনায় শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করে। এমাসেই শহীদ হন আধুনিক সাতক্ষীরার অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা সাবেক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক দৈনিক পত্রদূতের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দিন।

স ম আলাউদ্দিনকে নিয়ে স্মরণ করেছেন বিশিষ্ট রাজনীতিক, সাংবাদিক, পরিবেশবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী। স ম আলাউদ্দিনকে স্মরণ করতে গিয়ে অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বলেন, ভোমরা বন্দরকে রাহুমুক্ত করতে আত্মাহুতি দিতে হয় স ম আলাউদ্দিনকে। অথচ স ম আলাউদ্দিন ছিলেন ভোমরা স্থলবন্দরের রূপকার। বন্দর করার জন্য তিনি ভারত বাংলাদেশে সমানভাবে প্রচেষ্টা চালান। পশ্চিম বাংলার সরকারের সাথে দেন দরবার করে ঘোজাডাঙ্গায় রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। বন্দরকে আধুনিক ও ব্যবসায়ীদের নিরাপদভাবে ব্যবসা করার প্রচেষ্টা ছিল তার। পরিণতিতে দেশপ্রেমিক এ মানুষটিকেও হত্যা করে সেই গোষ্ঠী। নেতা অনেকেই থাকেন। কিন্তু যোগ্য নেতা পাওয়া সব সময় হয়ে ওঠে না। যোগ্যতার গুণে যিনি সকলকে টপকে যান। সাতক্ষীরার মানুষ এরকম একজন যোগ্য নেতা পেয়েছিল, তিনি হলেন স ম আলাউদ্দিন।

সাতক্ষীরাকে একটি আধুনিক জেলা নির্মাণের পরিকল্পনা সবসময় যাকে তাড়িত করতো। রাজনৈতিক দলবাজি, গন্ডির উর্দ্ধে উঠে তিনি আজন্ম আধুনিক ও মুক্তচিন্তা চর্চার প্রত্যাশা নিয়ে এবং সাতক্ষীরাকে সঠিকভাবে তুলে ধরে জনমত গঠনের জন্য দৈনিক পত্রদূত পত্রিকা প্রকাশ করেন। বহুধা গুণের এ মানুষটি সাতক্ষীরাকে শিল্পের পথে একধাপ এগিয়ে নেওয়ার লক্ষে বিস্কুট ফ্যাক্টরি নির্মাণ করেন। আবার সাতক্ষীরার সমবায় আন্দোলনকে গন্ডিমুক্ত করতে এগিয়ে আসেন। গন্ডির মধ্যে আটকে রাখার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে পরিবর্তন আনেন।
পরিবর্তন এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার এ নেতা, অদ্বিতীয় আপোষহীন মানুষকে অকালে চলে যেতে হয় সাতক্ষীরার পরিচিত সন্ত্রাসীদের বুলেটে। গন্ডিমুক্ত সাতক্ষীরা নির্মাণের বাঁধার প্রাচীর টপকে যেতে সাহস দেখানোর অপরাধে। সাতক্ষীরাতে দীর্ঘদিন পরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল ক্ষমতায় আসায় মানুষ উৎসাহিত হয়। দীর্ঘদিনের চেপে বসা সাতক্ষীরার কালো জগৎদল পাথরকে অপসারণের আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয় মানুষের মনে। আর এ উৎসাহকে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসে স ম আলাউদ্দিন। কিন্তু সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেনি যে অপরাধী চক্র এখন ক্ষমতার খুব কাছে এবং শক্তি তাদের আগের মতই আছে। জাতীয় পর্যায়ে যে পরিবর্তনের ¯্রােত সৃষ্টি হয়েছে, সাতক্ষীরার নেতৃত্ব তার বাইরে। ফলে পরিণতি হিসেবে একজন মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক মানুষ, সন্ত্রাস মুক্ত সাতক্ষীরার স্বপ্নদ্রষ্টা, আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থাকা অবস্থায় হত্যা হলেন।
সমাজ এগুতে হলে নেতৃত্ব প্রয়োজন হয়। যে নেতৃত্ব থাকে চিন্তায় অগ্রসর, মেধায় পরিপক্ক। নিষ্ঠাবান ও দক্ষ। স ম আলাউদ্দিন ছিলেন সেরকম একজন যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ। কিন্তু দুভার্গ্যজনকভাবে সাতক্ষীরাতে সে সময় মেধাবিহীন নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরির করার কার্যক্রম চলছিল। আর মেধা সম্পন্নদের বিদায় করার তোড়জোড়। স ম আলাউদ্দিন ছিলেন এ ধারার বিপরীতে শুধু নয়, বরং সৎ যোগ্য এবং অগ্রগামী মানুষদের সামনে নিয়ে আসার ক্ষেতে দলমতের উর্দ্ধে, অগ্রগামী এবং প্রতিবাদকারী। সাতক্ষীরাকে অসৎ নেতৃত্বের কবল থেকে মুক্ত করার সাহসী এবং সংগ্রামী নেতা।
স ম আলাউদ্দিন প্রচলিত রাজনৈতিক ধারার বাইরের একজন সাহসী মানুষ ছিলেন। আর্ন্তজাতিক ও জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়ে পান্ডিত্য ছিল তার অগাধ। চেতনার দিকদিয়ে ছিলেন অগ্রগামী। ছাত্রজীবন থেকে বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। ৬৯’র গণআন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে এমপিএ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নির্বাচিত এ জনপ্রতিনিধি সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেওয়া সারা দেশ থেকে দু’জন এমপির একজন তিনি। স্বাধীনতার পর আবার যখন দেখলেন সরকারি কার্যক্রম গণমানুষের বিপক্ষে, তখন ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে সাধারণ মানুষের কাতারে এসে দাঁড়ান। আবার মৌলবাদী আগ্রাসনকে রুখতে এবং আধুনিক সাতক্ষীরা বির্নিমাণের ব্রতে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। আওয়ামী লীগে ফিরে আসায় সাতক্ষীরার রাজনীতিতে নতুন গতিসৃষ্টি হয়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অত্যন্ত কাছে চলে আসেন অল্প সময়ে। শুধুমাত্র নিষ্ঠা, সততা ও যোগ্যতার গুণে। টপকাতে থাকেন অনেককে।
দীর্ঘ সময় পরে শহীদ স ম আলাউদ্দিন হত্যার বিচারকার্য শেষ পর্যায়ে।

যদিও এ মামলার পক্ষের ব্যক্তিদের নানানভাবে নাজেহাল হতে হয়। অনেক বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় সাক্ষী ও আইনজীবীদের। এ সময় সরকারি আইন কর্মকর্তার (পিপি) দায়িত্ব একজন যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে থাকায় মামালাটি পরিণতির শেষ প্রান্তে যেতে পেরেছে বলে সকলে মনে করেন। মানুষের অনেক প্রত্যাশা এ মামলার রায়কে ঘিরে।

আমরা আশা করি সত্যের জয় হোক, শহীদ স ম আলাউদ্দিন ভাইয়ের সন্তানরা পিতা হত্যার বিচার পাক। স ম আলাউদ্দিন হত্যার বিচারের প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাবে,এ আশায় বুক বেঁধে গভীর শ্রদ্ধায় প্রিয় নেতাকে স্মরণ করি।

-পত্রদূত নেট।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন