ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-২, গাজীপুর পুলিশ লাইনস্ পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 376 দর্শন

 

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম  ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সকল ইউনিটসমূহ (আইপি-১ হতে আইপি-৬) এর কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে পরিদর্শন এর অংশ হিসেবে গতকাল ০২/০৬/২০২১ খ্রি. বুধবার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-২, গাজীপুর পুলিশ লাইনস্ পরিদর্শন করেন৷

এ সময় অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিএম  কে স্বাগত এবং ফুলেল শুভেচ্ছা  ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-২, গাজীপুর এর পুলিশ সুপার  মোঃ সিদ্দিকুর রহমান এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-সদস্যগণ৷

এরপর তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-২, গাজীপুর কর্তৃক আয়োজিত বিশেষ কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। কল্যাণ সভায় ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যগণ তাদের মতামত ব্যক্ত করেন৷

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-২, গাজীপুর এর পুলিশ সুপার  মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত আইজিপি  মোঃ শফিকুল ইসলাম স্যার আমাদের সবার প্রিয় এবং সু-পরিচিত। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে করণীয় কী তা স্যার জানেন এবং সেই মোতাবেক মানুষের প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে থাকেন। বর্তমান সময়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শিল্প মালিক, শিল্প উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক ভাই-বোন সবার ভালবাসা ও আস্থা অর্জন করেছে। মালিক এবং শ্রমিক সবাই শিল্প পুলিশের সাহায্য পেয়ে থাকে।”
তিনি আরও জানান, মহামারী সময়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য এবং ফ্যাক্টরির উৎপাদন কর্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছে। যার ফলে তিনিসহ অত্র ইউনিটের ৭১ (একাত্তর) জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল।

অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিএম  বলেন, তিনি গত ২৫/০৫/২০২১ খ্রি. তারিখ যোগদান করেন। তিনি এর আগে রেঞ্জ ডিআইজি, বরিশাল এবং কমিশনার, আরএমপি, রাজশাহী’তে কর্মরত ছিলেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং পুলিশ সুপার, হিসেবে গাজীপুর থাকাকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “গাজীপুরের রাস্তার পাশে মাত্র কয়েকটি বাজার ছিল। চারপাশে ধান চাষ হত। গাজীপুরের রাস্তাঘাট সবই তার পরিচিত। মাত্র দশ বছর হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠনের পর থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরে উৎপাদন ব্যবস্থা বৃদ্ধিসহ কর্ম বান্ধব পরিবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তৃতীয় পক্ষের কোন ব্যক্তিদের ইন্ধনে যেন মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যে কোন ধরনের ভুল বোঝাবুঝি না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

গার্মেন্টসগুলো যেন তাদের উৎপাদন কাজ সঠিকভাবে করতে পারে সেই জন্য কাজ করে যেতে হবে। শিল্প পুলিশের হস্তক্ষেপের কারণে শিল্প সেক্টরের সার্বিক উন্নয়ন ঘটেছে । ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ এর দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পোস্টিং হলে ভালভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। ভালো জায়গায় পোস্টিং হয়েছে মনে করতে হবে। অগ্রীম এবং সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। অগ্রীম তথ্য সংগ্রহ করতে পারলে আমরা ভাল করতে পারব। সাংবাদিক ভাইদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহসহ অন্যান্য সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রেহের ব্যবস্থা করতে হবে। ছোট ঘটনা থেকে বড় ঘটনার যেন সূত্রপাত না ঘটতে পারে সেই জন্য বেশি বেশি অগ্রীম তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

যেমন-একজন শ্রমিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে সেখান থেকে বড় ধরনের শ্রমিক অসন্তোষ হতে পারে। উদাহরণস্বরুপ, আমাদের মহিলা শ্রমিক ধর্ষণের শিকার হলে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ভিকটিম’কে সাপোর্ট করাসহ ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করে সকল আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। ফ্যাক্টরির বেতন-বোনাস সংক্রান্ত অগ্রীম তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তৃতীয়পক্ষ দ্বারা গার্মেন্টস সেক্টরে যেন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ইন্ধনদাতাকে সনাক্ত করতে হবে। আমরা যদি সনাক্ত করতে না পারি তাহলে শ্রমিক অসন্তোষ বেড়ে যাবে। আর যদি সনাক্ত করতে পারি তাহলে শ্রমিক অসন্তোষ অনেকাংশে কমে যাবে। দেশ সেবা করার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। এখানে কনস্টবলের দায়িত্বও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পাঞ্চলের আইন শৃঙ্খলা ভাল রাখতে পারলে কাজের অর্ডার বাড়বে। দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি ঘটবে। বিদেশের মাটিতেও বাংলাদেশের শিল্পের গুণগত মানের প্রসার ঘটবে। গাড়ি বা যানবাহন না থাকার অজুহাতে আমাদের কার্যক্রমে বিঘ্ন করা যাবে না। এই মহামারী করোনাকালে সবার যৌথ কার্যক্রমে আমাদের শিল্পে উৎপাদন কর্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের দায়িত্ব বিশেষায়িত। আমাদেরকে ইনফরমেশন বেজড কাজ করতে হবে। বল প্রয়োগ করতে হলে আইন মেনে বল প্রয়োগ করতে হবে। সময় মতো শ্রমিকরা যাতে বেতন-বোনাস পায় সেই জন্য শিল্প মালিকদের অনুরোধ করতে হবে।”

বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, তিনি নিজেকে কখনো বড় অফিসার মনে করেন না। আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পারলে এবং থাকলে সেটাই বড় পাওয়া। উৎপাদন কাজ স্বভাবিক থাকুক এবং মালিক, শ্রমিক সবাই সমান থাকুক এটাই চাওয়া৷ মধ্যস্ততাকারী হিসেবে আমাদের যে দায়িত্ব আমরা তা যথাযথভাবে পালন করব। মন থেকে আমরা কাজ করব। জেলার পুলিশ সুপার, ওসিরা যেভাবে কাজ করে আমরাও এখানে সেইভাবে কাজ করব। সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ যেন সঠিকভাবে করতে পারি তার জন্য আমরা আন্তরিক থাকব। ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌছে যাবে। আমারা সবাই সেই মোতাবেক কাজ করব।”
এই বলে অতিরিক্ত আইজিপি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

এরপর দুপুর ১২:১৫ মিনিটের সময় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-২, গাজীপুরের পুলিশ অফিস সম্মেলন কক্ষে শিল্প মালিকদের সাথে মতবিনিময় সভা শুরু হয়। এ সময় গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ এর পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুুুল কবির, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ)  ইলত্যুৎ, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার  এস এম শফিউল্লাহ, বিপিএম উপস্থিত ছিলেন৷

উক্ত মত বিনিময় সভায় ইস্ট ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিঃ, প্যাট্রিয়ট ইকো এ্যাপারেলস্ লিঃ, টিভলী এ্যাপারেলস লিঃ, ম্যাট্রিক্স সোয়েটার লিঃ, আদর কম্পোজিট লিঃ, টি ডিজাইন নীটওয়্যার লিঃ, আম্বার কটন মিলস লিঃ, ওসিন স্পিনিং মিলস লিঃ, টেক্স টেক কোম্পানী লিঃ, ভি এন্ড আর ফ্যাশনস্ লিঃ, লাস্তাবুর এ্যাপারেলস লিঃ এবং স্টাইলিস গার্মেন্টস লিঃ এর মালিক ও প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন ফ্যাক্টরির মালিক এবং প্রতিনিধিগণ তাদের বক্তব্যে জানান যে, বর্তমান সময়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের যেকোন প্রয়োজনে আহবান করা মাত্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। তারা আরও বলেন, “শিল্প সেক্টরে মালিক এবং শ্রমিক যেই দোষী হোক না সবাইকে আইনের আওতায় আনার বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে অর্থাৎ ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহা উৎসবগুলোতে পূর্ব থেকেই যদি সরকারি সিদ্ধান্ত আসে তাহলে শ্রমিক অসন্তোষ বহুলাংশে কমে যাবে।”

স্টাইলিস্ট গার্মেন্টস লিমিটেড এর মালিক  মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ইন্টেলিজেন্স এর জনবল আরো বৃদ্ধি করতে হবে যেন যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনার অগ্রীম তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।”

আম্বার কটন মিলস লিমিটেড এর মালিক জনাব মোঃ আবুল কাশেম তার বক্তব্যে বলেন, “কোন কারণ ছাড়াই ফ্যাক্টরিতে অসন্তোষের সৃষ্টি হয় যার ফলে পণ্য উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে। তিনি বলেন, “শ্রমিক
অসন্তোষের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

অতিরিক্ত আইজিপি  বলেন, “ফ্যাক্টরির মালিক, শ্রমিক উভয়পক্ষ যদি নিজেদের মধ্যে কাউন্সিলিং করে তাহলে শ্রমিক অসন্তোষ অনেকাংশে কমে যায়।” তিনি আরো বলেন, “বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ সংগঠনগুলো সঠিকভাবে মালিক এবং শ্রমিকদের নিয়ে কাউন্সিলিং করলে শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিক অসন্তোষ কমে যাবে। শিল্প পুলিশ জনগণ তথা মালিক ও শ্রমিকদের সেবা করার একটি বড় প্লাটফর্ম৷ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রতিটি সদস্য শিল্পের উৎপাদনের পরিবেশ সচল রাখার জন্য কাজ করতে ওয়াদাবদ্ধ এবং সেই মোতাবেক আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

অতঃপর  অতিরিক্ত আইজিপি  সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবং সবার সু-স্বাস্থ্য কামনা করে মত বিনিময় সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন