কামিনী মোহন সেন ও সুচিত্রা রানী সেন দম্পতির ১০ সন্তান। তাদের নয় সন্তান চাকরি পাননি। ১০ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট কেয়া রানী সেন পঞ্চগড় জেলায় কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে চাকরি পেয়েছেন। ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়া যায় এটা তার মাথায় ছিল না। কিন্তু সত্যি সত্যি ১০০ টাকায় পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি পেয়ে অবাক হয়েছেন কেয়া। মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি পেয়ে পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ কেয়া। তার বাড়ি বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের বৈরাতি সেনপাড়া গ্রামে।

কেয়া বলেন, অভাবের সংসার। পরিবারের কোনও ভাইবোনের চাকরি হয়নি। কিন্তু আমি ১০০ টাকা খরচ করে সরকারি চাকরি পেয়েছি। এতে আমি খুবই আনন্দিত। পরিবারের কেউই বিষয়টি বিশ্বাস করতে চায়নি। কিন্তু ঘুষ ছাড়া চাকরি এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছে পঞ্চগড়ের পুলিশ প্রশাসন।

পঞ্চগড় পুলিশ লাইনে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। মাঠপর্যায়ে এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে জেলায় ২১ জনকে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। অবশ্য আরও পাঁচ জনকে অপেক্ষমাণ হিসেবে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ কোটায় ১০ জন, নারী কোটায় তিন জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পাঁচ জন, এতিম কোটায় দুজন ও পুলিশ পোষ্য কোটায় একজন।

ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে রংপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর চাকরিপ্রার্থী, নেতা, মধ্যস্বত্বভোগী ও দালালদের দৌড়াদৌড়ি তেমনটা ছিল না। দালালদের প্রতি জেলা পুলিশের নজরদারি ছিল বেশ। কোনও রকম ঘুষ ও নেতাদের তদবির মাথায় না নিয়ে এ নিয়োগ সম্পন্ন করেছে পুলিশ।

চাকরিপ্রাপ্ত কেয়া রানী সেন, রহিমা আক্তার সুমি, উম্মে হাবিবা, জাহাঙ্গীর আলম মুসা, সৌরভ চন্দ্র বর্মন, হযরত আলী জানান, মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে যে পুলিশে চাকরি পাওয়া যায়, তা প্রমাণিত হয়েছে। টাকা ছাড়া চাকরি পেয়ে আমরা অভিভূত।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, সরকার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনায় কোনও রকম তদবির, ঘুষ ছাড়া নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। তদবির এলেও কাজ হয়নি। পুলিশের চাকরিতে টাকা লাগে, এই ধারণা আর কখনও সত্য হবে না। এই ব্যবস্থায় জনগণের কাছে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

জানা গেছে, পঞ্চগড়ে কনস্টেবল পদে চাকরিতে কোটাও মানা হয়েছে দৃঢ়ভাবে। ২১ শূন্যপদের বিপরীতে অনলাইনে আবেদন পড়ে কয়েক হাজার। সেখান থেকে বাছাই করে প্রাথমিকভাবে ৮৪৮ জনকে নির্বাচিত করা হয়। শারীরিক পরীক্ষা শেষে ২৮৩ জনকে ডাকা হয় লিখিত পরীক্ষার জন্য। লিখিত পরীক্ষা শেষে ৬৩ জন মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সেখান থেকে ২১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন