ভাস্কর্য ও স্বাধীনতাবিরোধী দুষ্কৃতকারীদের পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে ঠেকাবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

তিনি বলেন, আমাদের সামনে ২০২১ ও ২০৪১ যে দুটি ভিশন ছিল, তা কৌশলে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের বাংলাদেশের স্বার্থেই আমাদের রুখতে হবে। পুলিশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে এটি মোকাবিলা করবেন।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। এ দেশের যে কয়টি গর্বের জায়গা আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্যের রচয়িতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজকে প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে মাইলের বেশি পেছনে ফেলে দিয়েছে। এই অহংকার আমাদের বিজয়ের অহংকার। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অহংকার।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, পাক হানাদার বাহিনী পরাজয়ের আগ মুহূর্তে এ জাতি যাতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য জাতির শ্রেষ্ঠ হত্যার নীলনকশা প্রণোয়ন করেছিল আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১২ তারিখ। সেই পরিকল্পনায় ছিল রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীও। তারা সম্মিলিতভাবে পরিকল্পনাটি প্রণয়ন করেছিল এবং ১৪ ডিসেম্বর এটি বাস্তবায়ন করেছিল।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে হামলাকারীরা সেই অপশক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে যারা আঘাত হেনেছে, যারা হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে, তার প্রতিকৃতি ভেঙে ফেলার জন্য নানাভাবে পাঁয়তারা করছে, তাদের সবার ব্যাকগ্রাউন্ড খুঁজে দেখেন, ১৯৭১-৭৫ সালে তাদের কী ভূমিকা ছিল? এই ঘৃণ্য শত্রুদের বারবার বাঙালি পরাজিত করেছে। আগামী দিনেও তাদের পরাজিত করবে।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন, স্বাধীনতা একটি, সার্বভৌমত্ব একটি, বাঙালির হৃদয়ও একটি। এটিকে সবার অন্তরে ধারণ করতে হবে, আমরা করছি।’

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ। তিনি বলেন, দেশের অস্তিত্ব যারা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন, তাদের এমন দুঃসাহস না করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা সারাদেশে ১০ লাখের অধিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী একসঙ্গে আছি। এই দুঃসাহস যারা করবেন তাদের কালো হাত ভেঙে দেয়া হবে।

এ বি এম আজাদ আরও বলেন, আপনারা যারা সেই দুঃসাহস করছেন তাদের বলছি, আজ আপনারা আমাদের প্রতিবাদ মঞ্চে এনেছেন। আমাদের রাস্তায় নামাবেন না। রাস্তায় নামলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না।

সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বন্দর পর্ষদের সদস্য জাফর আলম, জেলা দায়রা জজ মো. ইমাইল হোসেন, শেখ আসফাকুর রহমান, বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের সদস্য ও চা বোর্ড কর্মকর্তা নাজনিন কবির, এলজিইডি কর্মকর্তা অশিষ কুমার বড়ুয়া, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী সবুক্তগীন, বাংলাদেশ আনসারের জেলা কমান্ডেন্ট বিকাশ চন্দ্র দাশ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী সবুক্তগীন সামশুল আলম, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওম প্রকাশনন্দী, বিসিএস কৃষিবিদ ক্যাডারদের পক্ষে মো. আখতারুজ্জামান ও জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আবু নাঈম প্রমুখ।

এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও র‌্যালি করেন চট্টগ্রামের ১০০ বিচারক। সকাল সাড়ে ১০টায় নগরের দামপাড়া এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে একটি প্রতিবাদ র‌্যালি দামপাড়া থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন