বাবা কে নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের আবেগময় স্টাটাস

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 196 দর্শন

 

সাতক্ষীরা জেলার বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল এক আবেগময় স্টাটাস দিয়েছেন। বুধবার সন্ধা ৭ টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক তাঁর ব্যক্তিগত ফেইজবুক Mostafa kamal আইডিতে বাবা কে নিয়ে এক আবেগঘন স্টাটাস আপলোড করেন।নিচে জেলা প্রশাসকের সেই স্টাটাসটি হুবাহু তুলে ধরা হলো–

“মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি আব্বা শতায়ু লাভ করুন এবং সুস্থ ও নিরাপদ জীবন যাপন করুন ।শুধু বাবা দিবস নয় প্রতিদিন স্মরণ করি আমাদের সকলকে পড়া লেখা শিখিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে ও সুযোগ্য ভালো মানুষ হিসে বে গড়ে তুলতে আব্বার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা এবং নামাজ শেষে আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য অন্তর থেকে দোয়া করার মুহূর্তগুলো । শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি আব্বার পরোপকারী মানসিকতার । পরম শত্রুর বিপদে ও তিনি তার পাশে দাঁড়ান ।যারা তাঁকে আঘাত করেছে তিনি কখনো তাদের প্রত্যাঘাত করেননি । অত্যন্ত পরিশ্রমী ও মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করতে ভালোবাসনে এবং আমাদের ও সবসময় সে ভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন এবং এখনও সে পরামর্শ দিয়ে চলেছেন । আব্বা রাগী স্বভাবের হলেও মনটা খুবই নরম । কারো উপরই বেশি সময় রাগ ধরে রাখতে পারেন না । আমরা আব্বা কে খুব ভয় পেতাম ।আব্বা সরকারি চাকরি করতেন। আমরা গ্রামের বাড়িতে থাকতাম ।আব্বা চাকরি সূত্রে ঢাকা বা অন্য কর্মস্থলে থাকতে ন। মাসে একবার বা দুবার বাড়ীতে আসতেন।যখনই আসতেন আমাদের জন্য বিভিন্ন স্থানের প্রসিদ্ধ মিষ্টি ও মৌসুমী ফল নিয়ে আসতেন।এখনো তার স্বাদ ও গন্ধ অনুভব করি।আব্বা বাড়িতে আসার পরে মসজিদে ফজরের নামাজ পড়িয়ে আমাদের প্রত্যেককে বাসি পেটে দুই থেকে তিন গ্লাস পানি খাইয়ে নদীর পাড়ে হাঁটাতে নিয়ে যেতেন।আর ঐ শিশু বয়স থেকেই ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে দিলেন । ইংরেজি গ্রামারের মৌলিক বিষয় আমরা আব্বার কাছেই শিখেছি । পথে ঘাটে বাজারে সব জায়গায় আব্বা আমাদের ইংরেজি শেখাতেন। কড়া শাসন ব্যবস্থা ছিল । বাইরে যেতে ভয়ে থাকতাম ।কিন্তু ঘরের বাইরেই ছিল আমার প্রাণ। আব্বা আসার পরে প্রথমে জানতে চেষ্টা করতাম আব্বা কয়দিন বাড়িতে থাকবেন।বেশী দিন শুনলে মনটা দমে যেতো। তখন ট্রেন ছিল চলাচলের অন্যতম বাহন। ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যখন ট্রেন ইষ্টিশনে আব্বাকে এগিয়ে দিতে রওনা হতাম পথে বার বার বলতাম জোরে চলেন ট্রেনের হুইসল শোনা যাচ্ছে । আব্বা না মাঝে মাঝেই ট্রেন ফেল করতেন আর তখন আমার মনেও হালকা বিষাদের ছায়া দেখতাম । কারণ স্বাধীনতা ভালোবাসতাম এখন ও ভালোবাসি। আব্বা থাকা মানেই অবাধ স্বাধীনতাবিহীন জীবন ।চুল কাটার বিষয়টি আব্বা নিজেই দেখভাল করতেন। । নরসুন্দরকে বলে দিতেন চুল ছোট করে কাটতে, বলতেন আর্মি কাট দিতে । এখনো চুল কাটাতে গেলে এ কথা স্মরণ করি এবং আমাদের সব ভাই এর চুল আজও একই ধারা বহন করছে । আমি ছোট চুলে স্বস্তি পাই। আব্বা যখন বাড়িতে আসতেন আমরা আব্বার সাথে বাজারে যেতাম। আমরা সবাই চটের ব্যাগ নিয়ে আব্বার সাথে সাথে সারা বাজার ঘুরতাম ।অনেক মানুষের সাথে আব্বা কুশল বিনিময় করতেন । ভালো লাগতো তবে মাঝে মাঝে বিরক্ত ও হতাম। মাছের প্রতি আব্বার দুর্বলতা অনিঃশেষ । হরেক রকমের মাছ কিনতে পছন্দ করতেন ।খুব যাচাই করে দামাদামি করে সবকিছু কিনতে আব্বা পছন্দ করেন । মুদি মনোহারির জন্য নির্দিষ্ট দোকান ঠিক করা ছিল । যা বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময়ে আব্বাকে পরিবর্তন করতে দেখেছি ।এমনই একটি দোকানে আমারা যেতামযার মালিক ছিলেন কুদ্দুস ভাই ।যিনি পরবর্তী সময়ে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন ।ঐ সময় কুদ্দুস ভাই ইত্তেফাক পত্রিকার এজেন্ট ছিলেন। আব্বা দোকানিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকা বলতেন আর আমি খবরের কাগজের পাতায় পাতায় চোখ বুলাতাম গভীর আগ্রহ ও কৌতুহল নিয়ে। । ঐ দোকানে তখন খুব জমজমাট ব্যবসা ছিল ।অনেক ক্রেতার সমাহার ছিল । ফলে আমাদের চাহিত তালিকানুসারে যোগান পেতে সময় লাগতো । আব্বা দোকানে নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে আন্তরিক কথোপকথন চালিয়ে যেতেন। বুঝতাম অধিকাংশ মানুষই আবার পরিচিত।তখন বিস্মিত হয়েছি এত মানুষকে আব্বা কিভাবে চিনেন । এদিকে খবরের কাগজের সব খবর না পড়া পর্যন্ত আমি উঠতে চাইতাম না। আব্বা হয়তো বিষয়টি আমার অগোচরে খেয়াল করেছিলেন । আমার যতদূর মনে পড়ে আব্বা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন বাড়িতে খবরের কাগজ রাখতে চাই কিনা। এরপর থেকেই আমাদের বাড়িতে খবরের কাগজের প্রচলন ।আমি ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই খবরের কাগজ হাতে পেতে চাই । হাতে না পাওয়া পর্যন্ত অস্থিরতায় ভুগতে থাকি। তবে করোনা কালে প্রিন্ট কপি পড়িনা। এই তো সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়ার আগের দিন পর্যন্ত খবরের কাগজের বিল আব্বার টাকায় পরিশোধ করেছি । শুরু হয়েছিল সম্ভবত ১৯৮২ সাল থেকে । সেবার বিশ্বকাপ ফুটবলে পাউলো রসির খুব নাম ফুটেছিল । যতদূর মনে পড়ে ইটালি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ।
আব্বা আজ ৮০ পেরিয়ে সহধর্মিণী, ১১জন ছেলে মেয়ে , ছেলে বৌ , মেয়ে জামাই ও নাতি পুতির এক বিশাল উদ্যানের সুশোভিত ছায়া দানকারী বটগাছ । আজীবন তিনি সন্তানদেরই যেন সম্পদ হিসেবে দেখতে পায় এবং নশ্বর পৃথিবীর অন্য কিছু যেন তাঁর জীবনের সুখ শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিনষ্ট করতে না পারে সব সময় সেই প্রার্থনা করি ।
ধারাবাহিকভাবে লিখে যাবো আব্বাকে নিয়ে থাকবে পারিপার্শ্বিক বিষয়াবলী।”

লেখক: এসএম মোস্তফা কামাল,বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন