রাজধানীর বিমানবন্দর থানা এলাকায় ডাকাতিসহ হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত প্রধান অভিযুক্তসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-সজল, মূসা, বাচ্চু, সজীব, মুন্না ও সিদ্দিক। এ সময় তাদের হেফাজত হতে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি পিকআপ গাড়ি ও চাকু এবং লুন্ঠনকৃত ৭ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
১৯ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার রাত ৯.৩০ টায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (২০ জানুয়ারি, ২০২১) বেলা ১১ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বিপিএম–বার।
তিনি বলেন, রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পাইকারি সবজির আড়ত বসে। স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীরা উক্ত আড়ত থেকে সবজি ক্রয় করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে। একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল সাধারণত রাত ১১টা বা ১২ টার পর হতে একটি ভাড়া করা পিকআপ নিয়ে ডাকাতির উদ্দেশ্যে বের হয়। ডাকাত দল আড়তে আসা স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে। টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের আড়তে নেয়ার উদ্দেশ্যে সুকৌশলে তাদের গাড়িতে তোলে। গাড়িতে তোলার পর যাত্রীবেশে থাকা ডাকাতদলের সদস্যরা ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর চলন্ত গাড়ি থেকে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ঘটনার দিন (২৮ ডিসেম্বর, ২০২০) আপন মিয়া ও তার সঙ্গী নজরুল ইসলাম প্রতিদিনের ন্যায় দক্ষিণখাঁন তার বাসা হতে কারওয়ান বাজারের উদ্দেশ্যে বের হয়। বিমানবন্দর থানার কাওলা ফুটওভার ব্রীজের পূর্ব পাশে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। অজ্ঞাতনামা ডাকাতরা পিকআপ ভ্যানযোগে এসে কারওয়ান বাজার যাবে মর্মে যাত্রী ওঠায়। ভিকটিমদ্বয় উক্ত কারওয়ান বাজারগামী পিকআপে উঠে বসে। পিকআপে ওঠার সাথে সাথে পিকআপের পিছনে যাত্রীবেশে বসে থাকা ডাকাতরা তাদের টাকাসহ মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে চলন্ত গাড়ি হতে ভিকটিমকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় ভিকটিম আপন মিয়া মারা যায়। উক্ত বিষয়ে বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা রুজু হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলাটি তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ মামলার ঘটনা তদন্তে অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করে গোয়েন্দা বিভাগ। এরপর অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, রাজধানীতে দিনের বেলা পিকআপ ও ট্রাক চলাচল করে না, রাতে চলাচল করে। তাই রাজধানীর দিন ও রাতের চিত্র ভিন্ন। স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীরা এমন ঘটনার সম্মুখীন হলেও সাধারণত থানায় কোন অভিযোগ জানায় না। তাই এ ঘটনাগুলো পুলিশের অজানাই থেকে যায়। এমন ঘটনার শিকার হলে পুলিশকে অবহিত করার জন্য সকলকে অনুরোধ জানান পুলিশের এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা আব্দুল্লাহপুর থেকে কারওয়ান বাজার, রামপুরা থেকে যাত্রাবাড়ী ও যাত্রাবাড়ী থেকে ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় পিকআপযোগে ডাকাতি করে। উক্ত পিকআপের সামনের সিটে তিনজন বসে এবং বাকীরা যাত্রী বেশে পিকআপের পিছনে থাকে। ঢাকা মহানগরীর যেসব এলাকায় মাছ, ফলমূল ও সবজির পাইকারি আড়ত বসে, সেখানে যারা মালামাল ক্রয় করতে যায় তাদেরকে তারা টার্গেট করে পিকআপের যাত্রী হিসেবে উঠায়। ঘটনার দিন তারা ভিকটিমদ্বয়কে কারওয়ান বাজার নেয়ার উদ্দেশ্যে সুকৌশলে পিকআপ ভ্যানে তোলে। গাড়িতে উঠার পর গ্রেফতারকৃত মূসা ও রফিক ভিকটিকমদ্বয়ের বুকে চাকু ধরে। পিকআপের সামনে বসা গ্রেফতারকৃত সজল পিছনে চলে আসে এবং ভিকটিমদের কাছে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যরা ভিকটিমকে পিকআপ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তারা সপ্তাহে একাধিক দিন ডাকাতির জন্য বের হয়। প্রতিদিন তারা কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটায়।
ডিএমপি নিউজ।