রাজশাহী জেলা পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, মাদক এবং প্রায় এক কোটি টাকাসহ তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। আজ ৭ জুলাই ২০২১ তারিখ ভোররাত তিনটার পর বাঘা থানার আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলীর বাড়ি থেকে এসব অবৈধ মালামালসহ মেয়র মুক্তারের স্ত্রী মোছাম্মদ জেসমিন আক্তার (৪০), মেয়র মুক্তারের দুই ভাতিজা সোহান (২৫) পিতা-নবাব আলী এবং শান্ত (২৩) পিতা-সামিরুলকে আটক করা হয়।

গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে মুক্তার আলী মদ্যপ অবস্থায় তার দলবল নিয়ে আড়ানী পৌরসভার জয়বাংলা মোড়ে বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ, বাগাতিপাড়া, নাটোরের সহকারী অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন মজনুর বাড়ি সংলগ্ন ওষুধের দোকানে গিয়ে হট্টগোল শুরু করে। মেয়র ও তার দলবলের ভয়ে মজনু বাড়ির ভিতরে চলে গেলে মেয়র ও তার সহযোগীরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে মজনুকে মারপিট শুরু করে। মজনুর কলেজ পড়–য়া ছেলে এবং স্কুল শিক্ষক স্ত্রী মজনুকে রক্ষা করতে এলে মেয়র তাদেরকেও মারপিট করে আহত করে।

উল্লেখ্য যে মজনু গত পৌর নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষ নিয়ে মেয়রের বিরোধী শিবিরে নির্বাচনে কাজ করেছিল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গত রাতেই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মেয়র মুক্তার আলী (৪৫), পিতা-মৃত নইম উদ্দিন, স্থায়ী ঠিকানা ঃ গ্রাম-পিয়াদাপাড়া, উপজেলা/থানা-বাঘা, জেলা-রাজশাহী, বাংলাদেশ ২. মোঃ আঙ্কুর(৩২), পিতা-মোঃ সোহরাব আলী ওরফে মন্টু ু(সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান) স্থায়ী ঠিকানা ঃ গ্রাম-চক সিংগা, উপজেলা/থানা-বাঘা, জেলা-রাজশাহী, বাংলাদেশ দ্বয়ের নাম উল্লেখ করে এবং ৩/৪ জন অজ্ঞাতনামা দিয়ে মামলা করেন। মামলা নম্বর ৭ তারিখ ৭/৭/২০২১।

মামলা দায়েরের পর রাজশাহীর  পুলিশ সুপার  এ বি এম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) এঁর নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মোঃ আশরাফুল আলম এবং সহকারী পুলিশ সুপার ডিএসবি (চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল আহমেদ এর নেতৃত্বে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলামসহ বাঘা থানার একটি চৌকস দল মেয়র ও তার সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালায়। অভিযানের এক পর্যায়ে মেয়রের সন্ধানে তার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হলে সেখান থেকে নিম্নলিখিত অবৈধ অস্ত্র, গুলি, মাদক, নগদ টাকা এবং মেয়রের স্বাক্ষর করা চেক উদ্ধার করা হয়।

১। একটি ৭.৬৫ অটোমেটিক বিদেশি পিস্তল।
২। ৭.৬৫ পিস্তলের ০৪টি ম্যাগজিন।
৩। ৭.৬৫ পিস্তলের ১৭ রাউÐ তাজা গুলি।
৪। ৭.৬৫ পিস্তলের ৪টি গুলির খোসা।
৫। একটি ওয়ান শুটার গান।
৬। একটি দেশি তৈরি বন্দুক।
৭। একটি এয়ার রাইফেল।
৮। শটগানের ২৬ রাউন্ড গুলি।
৯। ১০ গ্রাম গাঁজা।
১০। ৭ পুরিয়া হেরোইন।
১১। ২০পিস ইয়াবা।
১২। ১৮ লক্ষ টাকার স্বাক্ষর করা চেক এবং নগদ ৯৪ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা।

মেয়র পালিয়ে গেলেও তার বাড়ি থেকে তার স্ত্রীসহ উপরে বর্ণিত তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। মেয়রের বাড়িতে পাওয়া কোন অস্ত্রেরই লাইসেন্স ছিল না এবং উদ্ধারকৃত টাকার কোন জবাব তারা দিতে না পারায় জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করে আনান হয়।

এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

উল্লেখ্য, উপরোক্ত ঘটনার বিষয়ে অদ্য ০৭-৭-২০২১ তারিখ দুপুর ১২.৩০ টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার)  সংবাদ সম্মেলন করেন।

সেখানে আরো উপস্থিত ছিল রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মোঃ আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সনাতন চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ ইফতে খায়ের আলম, সহকারী পুলিশ সুপার, (গোদাগাড়ী সার্কেল) মোঃ আসাদুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার, (ডিএসবি ও চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল আহমেদ এবং বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নজরুল ইসলাম।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন