করোনা পরিস্থিতিতে ঘর বন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ, তখন প্রকৃতি ফিরেছে তার আপন রুপে। মানুষের অত্যাচার কোণঠাসা পশু পাখির এখন অবাধ বিচরন। ভয়কে জয় করে তাদের এখন বিচরন সবখানে। এমন সুযোগে নিয়েই নানা জাতের পাখি কলতানে মুখর করে তুলেছে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের জলাশয়। হাজার হাজার পাতি সরালি, বক, পানকৌড়ি, মাছ রাঙ্গাসহ নানা জাতের পাখি। পাখি রক্ষায় নানা উদ্যোগও নিয়েছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত পিপিএম (বার)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়া শহরে গত ১০ বছরে বড় বড় যেসব জলায়শগুলো ছিল তার বেশির ভাগ ভরাট হয়েছে। অবশিষ্ট আছে হাতে গোনা কয়েকটি জলাশয়। তার মধ্যে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের মধ্যে আছে বড় কয়েকটি জলাশয়। করোনা পরিস্থিতি শুরু হতেই জলাশয়ে দেখা মিলতে শুরু করে নানা জাতের পাখির। এরপর দিন দিন বাড়তে শুরু করে এর সংখ্যাও। অবশ্য পাখি নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বলছেন শহরের মধ্যে কোন জলাশয়ে এমন দৃশ্য গত ৩০ বছর মধ্যে দেখা যায়নি। বেশ কয়েকমাস ধরে পাতি সরালি, পানকৌড়ি, বকসহ নানা জাতের পাখি এ জলাশয়ে খেলছে।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সুত্রে জানাগেছে, নিরাপত্তা নিয়েও কোন ভাবনা নেই পাখিগুলোর। সারাদিন জলাশয়ের পুকুরে কখনো সাঁতার কাটছে। আবার ঝাঁক ধরে উড়ছে কখনো। ভোর থেকে শুরু করে সারাদিন পুকুরে পানিতে সময় কাটে তাদের। সন্ধ্যা হতে উড়ে যায় খাদ্যের খোঁজে। সারা রাত বাইরে থেকে আবার আসে জলাশয়ে। আশেপাশের ঝোপ ঝাঁড়ে বাসাও করেছে, ডিম দিয়েছে। পাখিগুলোকে মেহমান হিসেবে নিয়ে তাদের রক্ষায় সব উদ্যোগ নিয়েছেন পুলিশ সুপার।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত পিপিএম (বার) জানান, করোনার কারনে মানুষ ঘরবন্দি। প্রকৃতি আর পশু-পাখি এখন স্বাধীন। তারা ভয়হীন পৃথিবীতে মনের আনন্দে ঘুরছে ইচ্ছেমত। আমার কার্যালয়ের ঠিক পিছনের জলাশয়ে নানা জাতির পাখি আবাস গেড়েছে। পাখি রক্ষায় নানা উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। তারা যাতে স্বাধীনভাবে থাকতে পারে সে জন্য জলাশয়ের আশেপাশে চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এখানে বাইরের কোন মানুষও আসতে পারে না। নিরাপদ জেনেই পাখিগুলো পুকুরে আছে। আমরাও মেহমান হিসেবে নিয়ে তাদের দেখভাল করছি।
আর পাখি বিশেষজ্ঞ এসআই সোহেল বলেন, ‘ গত ৩০ বছরের মধ্যে এ ধরনের পাখির আবাস কুষ্টিয়া শহরের কোন জলাশয়ে দেখা যায়নি। করোনা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রকৃতি রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানানও তিনি। পাতি সরালি পাখি সাধারনত এ ধরনের জলাশয়ে সারাদিন থাকতে পছন্দ করে। তারা আশেপাশের ঝোপঝাড়ে বাসা করে ডিম পেরে বাচ্চা দেয়। পুলিশ সুপার পাখি রক্ষায় যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসার। কারণ পাখি ও প্রকৃতি আমাদের পরম বন্ধু।