এটাও ঠিক আমার নিজেরই এই ক্যাডারে অনেক অসহায় মনে হয়েছে : সিভিল সার্জন ডা: হুসাইন শাফায়াত

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 291 দর্শন

 

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ তৈয়ুবুর রহমান গালিবের সাথে ঔষধের দোকানদারের  অপ্রিতীকর ঘটনা নিয়ে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন শাফায়াত এক আবেগঘন স্টাটাস দিয়েছেন। স্টাটাসটি নিচে হুবাহু তুলে ধরা হলো………

Regarding Dr. Tayebur Rahman Galib and incident at Satkhira District Hospital on 08//05/2020:
———————–আজ বিকালে কর্তব্য পালনের সময় সদর হাসপাতাল, সাতক্ষীরার Medical Officer, Dr. Tayebur Rahman Galib এর সাথে এক ওষুধের দোকানদারের অপ্রিতীকর ঘটনা ঘটে।সেটা ছিল একটি ওষুধ পরিবর্তন নিয়ে।ডাক্তার সাহেব ভাল মন নিয়েই নাকি ফার্মেসীতে গিয়েছিল গরীব লোকটির ওষুধ পাল্টে আসল ওষুধটা দিয়ে দিতে। কিন্তু তাকে নাকি দোকানদার ঠেলা ধাক্কা দিয়েছে যাতে তার শার্ট ছিড়ে যায়। এবং সে কথাটি সাথে সাথে আমাকে ফোনে জানায়। আমি তৎক্ষনাৎ বি.এম,এ-র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মনোয়ার হোসেনকে এটা অবহিত করি।তারপর সিভিল সার্জনের প্রতিনিধী হিসাবে ডাঃ কাফি ও ডাঃ জয়ন্তকে বিস্তারিত খোজ খবর নিতে বলি। এর সাথে ডাঃ গালিব আমাকে ওষুধ বিক্রেতা সমিতির সভাপতির যে নাম্বারটি দিয়েছিল সেই নাম্বারে যোগাযোগ করে সভাপতির সাথে কথা বলি। সভাপতি তৎক্ষনাৎ বলেন অবশ্যই এটা কাঙ্খিত নয় এবং তিনি খোজ নিয়ে জানাচ্ছেন বললেন।
*এর মধ্যে ডাঃ গালিব আমাকে বললেন যে আজ তার নাইট আছে তাই সাড়ে আটটার মধ্যে কোন ব্যবস্থা না নিলে তিনি এমার্জেন্সী নাইট করবেন না। ইতোমধ্যে ডাঃ কাফি বিষয়টির একটি সম্মানযোগ্য সমাধানের জন্য ডাঃ গালিবের সাথে কথা বলতে যান কিন্তু ডাঃ গালিব তাকে বেশ রূঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।তার পর ডাঃ মনোয়ারের প্রতিনিধীও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমাকে অবহিত করেন।ততক্ষনে ওষুধ বিক্রেতা সমিতির সভাপতিও আমাকে কল ব্যাক করে বিনীতভাবে বললেন যে এখন রমজান মাস সকলকে একসাথে ডেকে বসা কঠিন হচ্ছে আমরা কাল বসতে পারি কিনা। কথাটি যুক্তিযুক্ত। তাই কাল বসার কথা বললাম।এর মধ্যে খবর পেলাম যে ঐ ব্যক্তির এমন খারাপ ব্যাবহার করার ইতিহাস আছে এবং তার নামে মামলাও আছে এবং সে নাকি জামিনে আছে। ডাঃ গালিবের সাথে কথা হলে তাকে ধৈর্য ধরতে বললাম অভিযুক্তের ব্যাকগ্রাউন্ড বললাম। তখন তার কথা হল পুলিশ হলে উক্ত ব্যক্তিকে নাকি গুম করে ফেলত,আমি সিভিল সার্জন সেটা পারছিনা।
*এই প্রসঙ্গে বলা উচিৎ এই অপরাধের জন্য কি পেনাল কোডে কাউকে গুম করে ফেলা যায় বা উচিৎ? আর এই অপরাধের পেনাল কোডে কি বিচার হতে পারে?
*আমি প্রশাসনের সাথেও কথা বলেছি। প্রথমে আমাকে বলা হল যে ডাক্তার সাহেব তার কর্ম এলাকা Satkhira District Hospital এর বাইরে কেন গেল?

আবার এটাও ঠিক বর্তমানে বিদ্যমান অবস্থায় অনেক স্থানেই ডাক্তারদেরকে অন্যায় ভাবে হেনস্তা করা হয় তারই কি কোন বিচার হয়? এই লোক কোর্টের জামিনে আছে পুলিশ কি তাকে সহজে গ্রেপ্তার করবে কিনা? আমি নিজেও ই.এম.ও. ছিলাম আমি দেখেছি ওষুধ বিক্রেতাদের দৌরাত্ম্য এমনও হয়েছে যে দালালদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য ডিউটি শেষে রাতে বাসায় যাবার সময় ডাক্তারকে লাঞ্ছিত করেছে দালালেরা।এরূপ রগচটা অপরাধপ্রবণ লোকের সাথে ডিলিং করতে হলে্ একটু হিসাব করেই এগোতে হবে। আবার অন্তর্গতভাবে প্রশাসন বা পুলিশের মতো এমবিডেড সিকিউরিটি কিন্তু আমাদের নেই। তাই আমাদেরকে পুলিশ বা প্রশাসনের ওপর নির্ভর করতে হয়। এমন কি কোন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট করতে হলেও আমাদেরকে প্রশাসনের মাধ্যমেই করতে হয়। এজন্য এই ব্যাপারটার সম্মানযোগ্য সমাধানের জন্য একটু সময় লাগবে। তাছাড়া অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে এত যে ডাক্তার মার খাচ্ছে তার কি কোন গ্রহনযোগ্য সমাধান হয়েছে? এই সিস্টেমএ কে আমাদের সাহায্য করবে? তারপর এই লাঞ্ছনার ঘটনায় আসলে পেনাল কোড অনুযায়ী কতটুকু শাস্তি হতে পারে এবং শাস্তি আরোপের পদ্ধতিটিও একদম সহজ নয়(Procecution)।অনেক ক্ষেত্রে পেটোয়া বাহিনী দ্বারা পেটালে ডাক্তারদের দাবী পূরণ হবে কিন্তু আমরা এরূপ করতে পারি কি? তারপরও ডাঃ গালিবের দাবী অনুযায়ী সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।

এর মধ্যে ডাঃ গালিব বিনা অনুমতিতে জরুরী বিভাগ ত্যাগ করেছে। এবং অন্যান্য ডাক্তারগনও এমার্জেন্সী ডিউটি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ডাক্তারদের সেবা অত্যবশ্যকীয়। আমরা এরূপ করতে পারি কি না? আমি নিজে জরুরী বিভাগে গিয়ে একটি রোগী ভর্তি করেছি। এখন রোগীদের তো কোন দোষ নেই।

এর মধে ডাঃ গালিব তার ফেসবুকে সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়েছে এছাড়া ক্লোজড গ্রুপে রিতীমতো গালাগালী চলছে। আসলে চাকুরী বিধী অনুযায়ী আমরা এটা করতে পারি কিনা?আইসিটি আইন এটা পারমিট করে কিনা?

এটাও ঠিক আমার নিজেরই এই ক্যাডারে অনেক অসহায় মনে হয়েছে। কিন্তু আমাদেরও অনেক অন্তর্গত দুর্বলতা আছে,যেমন কমিশন নেয়া, কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত না থাকা, স্বাস্থ্য প্রশাসনে থাকা ব্যক্তিদের অযোগ্যতা ও দূর্নিতী ইত্যাদী।এর ফলে আমরা ক্যাডার হিসাবে মর্যাদা অনেকটাই হরিয়েছি আবার আমরা অনেক ক্ষেত্রে অবহেলিত। এবং দাবী আদায়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ ও সিস্টেমেটিক নই।শুধুমাত্র আন্দোলন করলেই দাবী আদায় করা যায়না এর জন্য লবিং ও দেনদরবারও লাগে।

বর্তমানে আমরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এসকল ৩৯ বি.সি.এস-এর ডাক্তারগণ প্রশংসার সাথেই লড়াই করছে। কিন্তু চেইন আফ কমান্ড কর্মক্ষেত্রে অনেক জরুরী যা আমাদের মধ্যে অত্যন্ত কম। একজন প্রশাসন ক্যাডার বা পুলিশ ক্যাডার কিন্তু এরূপ পোস্ট দিতে পারত না। আমরা কিন্তু ব্যবস্থা নিয়েছি । তবে এখনই এভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে এটা কি পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং আমাদের ক্ষমতার প্রেক্ষিতে সম্ভব। আর পুলিশ, প্রশাসন বলা মাত্রই আমরা যা চাই তা তৎক্ষনাৎ করে দিবে? লিগ্যাল স্টেপ অনেক দীর্ঘসুত্রি ও কষ্ট ও ব্যায় সাধ্য। আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি কিন্তু বাস্তবতা অনেক Frustrating।এর জন্য সিস্টেম দায়ী। এজন্য আমাদের গালি দিয়ে খুব কি লাভ হবে?

আরও অনেক রথী মহারথী আছেন যাদের অনেক ক্ষমতা তারা একটি টেকসই সিস্টেম ডেভেলপ করার চেষ্টা না করে কেন শুধু সাময়িক মাঠ গরম করেন? এর সমাধান কি সম্মানিত সিনিয়র এবং বিজ্ঞ জনেরা দিতে পারবেন?
(Dr. Md. Hussain Safayet,Civil Surgeon,Satkhira,09/05/2020)





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন