সুন্দরবনের আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের হুঁশিয়ার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, যারা আবার দুষ্কর্মের চিন্তা করছেন, তারা যেন তা ভুলে যান। কেউ আবার বিপথে গেলে নিরাপত্তা বাহিনী বসে থাকবে না। বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড এখন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম।

আজ সোমবার দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবসের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাগেরহাটে আয়োজিত আত্মসমর্পণ করা ব্যক্তিদের পূনর্বাসন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ হুঁশিয়ারি করেন।


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আত্মসমর্পণ করা ৩২৮ জনের মাঝে র‌্যাবের দেওয়া ১০২টি ঘর, ৯০টি মুদি দোকান (মালামালসহ), ১২টি জাল ও মাছ ধরার নৌকা, ৮টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা এবং ২২৮টি গবাদিপশু (বাছুরসহ) উপহার তুলে দেন।

সাবেক জলদস্যুদের স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবনযাপনের তাগিদ দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বাগেরহাটে এসে শুনেছি, বিশ্বাস করিনি। শুনেছি কেউ কেউ আবার বিপথে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আপনারা এখন কষ্ট করছেন জানি। কিন্তু ভুলেও সে চেষ্টা (দস্যুতা) পুনরায় করবেন না।’

সুন্দরবনে জলদস্যুতা ছেড়ে যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তারা এখন কেমন আছেন, তা প্রধানমন্ত্রী সব সময় খোঁজ-খবর রাখছেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, ‘তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে কি না তাও জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আপনাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দাবি ছিল মামলা প্রত্যাহারের। ধর্ষণ ও খুনের মামলা ছাড়া অবশ্যই পর্যায়ক্রমে সব মামলা তুলে নেয়া হবে।’

আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মামলার বিচারের বিষয়ে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘মামলার কাগজ নিয়ে আসেন। সরকারি অনুদান যাতে উকিল ও মামলা লড়তে খরচ না হয় সেটা আমরা দেখব। মামলা তুলে নেয়ার ব্যবস্থা আমরা করব। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রতিশ্রুতি করেছি।’

আগে পটুয়াখালী থেকে সাতক্ষীরা বাগেরহাট এলাকায় জলদস্যুর কারণে বাসায় থাকা যেত না, মানুষকে আটকে রাখা হতো। মুক্তিপণ দাবি করা হতো, ডাকাতি করা হতো, ডাকাতি কাজে জড়াতে বাধ্য করা হতো। মধু সংগ্রহকারীরাও রেহাই পেত না। আজ সে চিত্র বদলেছে। সবকিছুর সমাধান হয়েছে। সুন্দরবন আজ দস্যুমুক্ত।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য র‌্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প করার জোর প্রচেষ্টা চলছে। যদি কেউ মনে করেন আবার জলদস্যুতা করবেন সে স্বপ্ন যেন ভেঙে যায়।

মোংলা পোর্ট ও এর আশপাশে এলাকায় আমদানি করা পণ্য খোয়া যাচ্ছে বলে খুলনার মেয়র জানিয়েছেন। সে কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখানকার কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। খুলনা কোস্টগার্ড বিষয়টি দেখবেন। প্রয়োজনে নৌ পুলিশের ডিআইজি আছেন তিনিও দেখবেন। আমরা নদীতে কিংবা উপকূলে কোথাও আর কোনো ডাকাতিবৃত্তি দেখতে চাই না।’

এ সময় মন্ত্রী আরও জানান, পাবনায় ৬০১ জন চরমপন্থী ও কক্সবাজারে ১০১ জন মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছে। এর সবই হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায়। জঙ্গি-সন্ত্রাসের ন্যায় মাদকের ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আজ শুধু আমাদের নেতা নন, তিনি বিশ্বনেতা। বঙ্গবন্ধুর সব স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।’

মন্ত্রী ষড়যন্ত্রকারীদের সতর্ক করে বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেখানেও ষড়যন্ত্র চলছে। যারা মনে করেন, নানা ধরনের বিশেষ অবস্থা সৃষ্টি করে দেশকে অরাজকতার দিকে নিয়ে যাবেন, সেটা কোনোভাবেই হতে দেয়া হবে না।’

যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের জীবিকায় অনিশ্চয়তা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তাদের নিশ্চিত জীবিকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে চাই। আমি বিশ্বাস করতে চাই, আপনারা আর ভিন্ন চিন্তা করবেন না। ভাববেন না, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্বল, তারা কিছু জানবে না। আমি বিশ্বাস করি এই এলাকার সবাই মিলেমিশে থাকবেন, বিপদে-আপদে পাশে থাকবেন। এই দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

র‍্যাবের ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে রয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল,খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো: ইসমাইল হোসেন এনডিসি, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড.খ:মহিদ উদ্দিন বিপিএম-বার, র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক লে.কর্ণেল লেফটেন্যান্ট কর্নেল মূহামমদ মোসতাক আহমদ, বি এস পি, পি এস সি,বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক,সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম-বার, খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাবুব হাসান,বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো:আসাদুজ্জামান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন র‌্যাবের অরিতিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদ।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন