বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির থেকে সামনে আরও ভয়াবহ দিন আসছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সামনে আরও ভয়াবহ দিন আসছে, অর্থ দিয়েও খাবার পাওয়া যাবে না। তাই খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।
বুধবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকে নিজের গ্রামের বাড়ি এবং যে যেখানে বসবাস করে এবং হোস্টেল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমিতে ব্যাপক হারে গাছ লাগাতে ও ফসল উৎপাদন করতে হবে। কারণ বিশ্বে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ অবস্থা হবে। কোনো পয়সা দিয়েও খাবার কেনা যাবে না। সেক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের খাবার নিজেদেরই উৎপাদন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের ছাত্রলীগ যেমন ধান কাটায় সাহায্য করেছে, দরকার হলে তা রোপণেও সাহায্য করবে। জমিতে কোনো একটা ফলের গাছও লাগাতে হবে। কাজেই এভাবে সবাইকে চলতে হবে। আমরা নিজেরা যদি করতে পারি, তাহলে আমাদের- যেটা জাতির পিতা বলেছেন আমার মাটি আছে মানুষ আছে, কাজেই সেটা আমরা করতে পারবো। সে বিশ্বাস আমার আছে।
করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। কোনো মেজরের বাঁশি বাজানোর মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়নি। ছাত্রলীগের ইতিহাস মানেই বাংলাদেশের ইতিহাস।’ বর্তমান প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানানোর জন্য ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
ছাত্রলীগকে সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্রুপ বাড়ানোর জন্য আলতুফালতু লোক ঢুকানো যাবে না। তাতে নিজেদের, দলের ও দেশের বদনাম হয়। আমাদের পেছনেতো লোক লেগেই আছে। লেগেই থাকবে। ছাত্রদল যত অপকর্ম করে গেছে, সেটা নিয়ে কথা নেই। কিন্তু ছাত্রলীগের একটু হলে বড় নিউজ। নিজেদের ঠিক থাকতে হবে।’
আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রকৃত দেশপ্রেমিক হতে হবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা উদ্বুদ্ধ হতে হবে, স্বাধীনতার আদর্শে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গড়ে উঠতে হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নিজেকে গড়ে তুলতে হবে, যেন সঠিক নেতৃত্ব দেওয়া যায়। ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা কাজে লাগে না। করোনার সময় অনেক ধনী মানুষের টাকার পাহাড়ও কিন্তু কাজে লাগেনি। মাথায় রাখতে হবে– এটাই বাস্তবতা, এটাই সত্য।’
তিনি বলেন, ‘চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে ত্যাগ শিকার করে এগোতে পারলে সঠিক নেতা হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলা যায়। গড্ডালিকা প্রবাহের মতো অর্থসম্পদের পেছনে ছুটলে অর্থ সম্পদে ভেসে যেতে হয়। এতে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা থাকে না। দেশকেও কিছু দেওয়া যায় না, মানুষকেও দেওয়া যায় না।’
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পড়াশোনার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার লেখা আমার দেখা নয় চীন, কারাগারের রোজনামচা, অসামাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে। সিক্রেট ডকুমেন্ট সবাইকে পড়ার অনুরোধ করছি। সেটা পড়ে অনেককিছু শেখার আছে, জানার আছে। রাজনীতির অনেক জ্ঞান অর্জন করা যাবে।’
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হবে। দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বলবো, যার যার এলাকা খুঁজে দেখতে হবে। একটি মানুষও যদি গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকে সঙ্গে সঙ্গে সে খবর আমাকে দিতে হবে। আমরা তাদের ঘর তৈরি করে দেবো। জাতির পিতার বাংলাদেশে কোনও মানুষ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না।’