ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে সারাদেশে উগ্রপন্থীদের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি পুলিশের

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 172 দর্শন

 

দেশে চলমান ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে উগ্রপন্থী মৌলবাদী গোষ্ঠী দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য সারাদেশে উগ্রপন্থীদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যেখানে যেখানে ভাস্কর্য রয়েছে সেই এলাকায় ভাস্কর্য কেন্দ্রিক নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। দেশের বিশেষ দুটি গোয়েন্দা সংস্থাও এ বিষয়ে কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড.বেনজীর বিপিএম-বার এঁর পক্ষ থেকে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘যারা অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে আমরা তাদের নজরদারি করছি। এজন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানাই। কেউ যেন স্বার্থান্বেষী কোনও গোষ্ঠীর উস্কানির ফাঁদে পা না দেন। কেউ উস্কানির ফাঁদে পা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার চেষ্টা করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

সম্প্রতি রাজধানীর শনির আখড়া এলাকায় সড়কে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একটি প্রতিকৃতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর জের ধরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ যেকোনও ধরনের প্রতিকৃতি স্থাপনের বিরোধিতা করে তা প্রতিহতের ডাক দেন মাওলানা মামুনুল হক। এরপর থেকেই আলেমদের একাংশ একযোগে ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে মাঠে নামে।

এর মধ্যেই দুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের মধুসূদন দত্তের ভাস্কর্যের একটি কান ভেঙে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের হাত ও মুখমণ্ডল ভেঙে ফেলে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে মাঠে নেমেছে ধর্মান্ধ মৌলবাদী একটি গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী কৌশলে সাধারণ মানুষের মনে ভাস্কর্য নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দিয়ে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে মৌলবাদী গোষ্ঠীটি মনগড়া কোরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা দিয়ে চলছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। একদিকে ধর্মীয় বিষয়, আরেক দিকে জাতির জনক বন্ধবন্ধুর প্রতিকৃতি। এ কারণে অনেক সাবধানে বিষয়টি ‘হ্যান্ডেল’ করা হচ্ছে। তবে কেউ ভাস্কর্য বিনষ্ট করার মতো কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও কৌশলে বিষয়টি মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কঠোর আইন প্রয়োগের চাইতে রাজনৈতিকভাবে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন ও প্রগতিশীল ব্যক্তি এবং সংগঠনগুলোকে কাজে লাগানোর নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া ভাস্কর্য ইস্যুতে পেছন থেকে যারা কলকাঠি নাড়ছেন তাদের শনাক্ত করে কৌশলে দমন করার জন্য বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্যদাতাদের তালিকা করছেন তারা। একইসঙ্গে যারা নেপথ্য মদত দিচ্ছেন, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ার কারণে খুবই কৌশলে সবকিছু করা হচ্ছে। একটি পক্ষ ভাস্কর্য ইস্যুকে সামনে রেখে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে। এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পাশাপাশি তাদের শনাক্তের জন্য গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছেন।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চলমান ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আমরা তিনটি উপায়ে কাজ করছি। সাদা পোশাকে আমাদের সদস্যরা অপতৎপরতাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করছে। এছাড়া সারাদেশে র‌্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা পেট্রোলিং করছে। কেউ আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর  ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সাইবার ক্রাইম বিভাগের সদস্যরা অনলাইনে অপতৎপরতাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করছে। অনলাইনে যারা উস্কানিমূলক পোস্ট দিচ্ছে তাদের কঠোর নজরদারি করার পাশাপাশি শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন