পুলিশের ভালো কাজ গুলো সাধারণত মানুষের চোখে পড়েনা।পুলিশ ঘুষ খায়, মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা নেয় আরো কতটা কি উপমা আছে।অথচ মানুষের চরম বিপদে কিন্তু সেই পুলিশ ই পাসে দাড়ায়।ধরেন রাস্তায় আপনার কোন আত্মীয় স্বজন ট্রাকে পিষ্ট হয়ে মরে রাস্তায় পড়ে আছে বিভষ্ম অবস্থায়। আপনি রাস্তায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছেন আর অন্যান্য স্বজন দের কে ফোন করে সংবাদ টি দিচ্ছেন।কিন্তু আপনি রাস্তা থেকে ট্রাকে পিষ্ট হওয়া ডেড বডিটি তুলতে যাচ্ছেন না আবার চেষ্টাও করছেন না তোলার।এমতাবস্থায় আপনার পিষ্ট হওয়া আত্মীয়ের ডেড বডিটি কিন্তু সেই তথা কথিত ঘুষ খোর পুলিশ ই রাস্তা থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায় ময়নাতদন্তের জন্য।যাই হোক এবার সাতক্ষীরার তালা থানা পুলিশ একটি মানবিক কাজ করেছেন। চলুন এবার নিউজটা পড়ি…..
আজ শুক্রবার সকাল ৯ টার দিকে মানষিক প্রতিবন্ধী আব্দুল কাদেরকে তার বাড়ী সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের শাহাজাতপুর গ্রামের নির্জন বাগানের গর্ত থেকে শিকল বন্দি অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তালা থানা অফিসার ইনচার্জ মেহেদী রাসেলের নির্দেশে স্থানীয় খেশরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মো: ইসমাইল হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে দুপুর ৩ টার দিকে সেখান থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
প্রায় ৪ বছর যাবৎ শিকল বন্দী গর্তে থাকা একজন শারীরীক ও মানষিক রোগীকে থানা পুলিশ উদ্ধার করে প্রথমে তালা ও পরে খুমেকে পাঠিয়েছে।
প্রসঙ্গত,এম,এম আব্দুল কাদের পাইকগাছার রাড়ুলিস্থ আর.কে.বি.কে হরিশচন্দ্র কলেজিয়েট ইন্সটিটিউট থেকে ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক আর ১৯৮৫ সালে উপজেলার কপিলমুনি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর একই কলেজে স্নাতক শ্রেণীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় আকষ্মিক মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটে। ঐ সময় জমি-জমা সংক্রান্তে পারিবারিক কলহে তার এক চাচাতো ভাই হান্নান মোড়ল তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারাত্নক আহত করে। ঘটনায় কাদের প্রাণে বেঁচে গেলেও আর কখনো পুরোপুরি সুস্থ্য হতে পারেনি।
এক পর্যায়ে সর্বস্ব খুঁইয়ে সেসময়কার চিকিৎসায় সাময়ীক স্বাভাবিকত্ব ফিরে আসার পর স্থানীয়দের পরামর্শে দাম্পত্য জীবনে ঠেলে দিলেও নানা বিয়োগান্তক ঘটনায় বছর চারেক আগে একেবারেই বিগড়ে যায় তার মস্তিষ্ক। সেই থেকে তার ঠাঁই হয় বাড়ির পাশের বাগানের মধ্যে অন্ধকার গর্তে। রাত-দিন ঝড়-বৃষ্টিতে এক হাত ও পায়ে শিকলে বাঁধা পড়ে তার গদ্যময় নিঃসঙ্গ জীবন। সব আশা,আকাংখা,স্বপ্ন-সাধ আটকে যায় আটো-সাটো একটি গর্ত ও তার উপর পড়ে থাকা একটি ছোট মেহগনি গাছের উপর। এভাবেই নির্মম জীবনের সাথে প্রতিটি মূহুর্ত যুদ্ধ করে কোন রকম বেঁচে ছিলেন আব্দুল কাদের। এক সময়ের কলেজের মেধাবী ছাত্র ও দরিদ্র পিতা-মাতার বেঁচে থাকার অবলম্বন তিনি।
সর্বশেষ তার নির্মমভাবে বেঁচে থাকার খবরে বুধবার বিকেলে সরেজমিনে প্রতিবেদনের স্বার্থে ঘটনাস্থল থেকে তুলে আনেন কাদেরের জীবন থেকে নেয়া অজানা অনেক তথ্য। যা বৃহস্পতিবার প্রকাশ পায় প্রতিবেদনে উঠে আসে তার পুরনোকে মনে করে আবেগ আপ্লুত হওয়ার বিষয়। এসময় তিনি তার শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি রোমন্থনে প্রতিবেদকদের কাছে অজানা অনেক প্রশ্ন দাঁনা বাধে যার কিয়দাংশ তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
হৃদয়গ্রাহী প্রতিবেদনে তুলে আনা হয়,কাদেরের বেঁচে থাকা,বাঁচতে চাওয়া এবং তার প্রতিবন্ধকতা সহ করুণ আকূতিময় আবেদন।
সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশে তালা থানা অফিসার ইনচার্জ মেহেদী রাসেলের নির্দেশে স্থানীয় খেশরা পুলিশ ক্যাস্পের পুলিশ তাকে শুক্রবার উদ্ধার করলেও এখন পর্যন্ত সুচিকিৎসা এমনকি ভর্তি পর্যন্ত হতে না পারায় নতুন করে অজানা নানা আশংকা জেঁকে বসেছে কাদেরের সাথে খুমেকে অবস্থানরত স্বজনদের মধ্যে।
এব্যাপারে তালা থানা অফিসার ইনচার্জ মেহেদী রাসেল বলেন,তিনি খবরটি দেখা মাত্র পার্শ্ববর্তী খেশরা পুলিশ ক্যাম্প’র ইনচার্জকে আব্দুল কাদেরকে উদ্ধারপূর্বক হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেন। এমনকি নিজ দায়িত্বে তাকে খুমেকে পাঠানোর ব্যবস্থাও তিনি করেন। আগামীতেও তার সু-চিকিৎসায় সর্ববাত্নক সহযোগীতা করবেন বলেও আশ্বাস দেন তিনি।