শ্রদ্ধা,প্রশংসা ও সহকর্মীর অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় বিদায় নিলেন চুয়াডাঙ্গা’র পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম।
চুয়াডাঙ্গা র সদ্য বিদায়ী পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা, গত ০৯.০৯.২০১৯ খ্রিঃ তারিখে পুলিশ সুপার চুয়াডাঙ্গা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।চুয়াডাঙ্গা জেলায় যোগদান করেই তাঁর কর্মগুনে আলো ছড়িয়ে তিনি জয় করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর মন। তাইতো বিদায় বেলায় ভাসলেন শ্রদ্ধা, প্রশংসা, আবেগ ও ভালোবাসায়, সিক্ত হলেন সহকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায়।
এসপি জাহিদুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্বপালনকালে জেলাবাসীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তিনি কাজ করেছেন একাগ্রচিত্তে।পুলিশি সেবা সাধারণ মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে নিয়েছিলেন বিট পুলিশিংসহ নানামুখী উদ্যোগ। তার সময়ে অনলাইনে নাগরিক সেবা,সিটিজেন ইনফরমেশন রিপোর্ট (CIMS) এ সর্বমোট ৩,৬৬,৭৭৩ জন বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার পুর্ণাঙ্গ তথ্য হালনাগাদকরণ,পজ মেশিনের মাধ্যমে ই-ট্রাফিক ব্যবস্থা, অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদান, অনলাইন জিডির প্রচলন, গঠিত উইমেন সাপোর্ট সেল ও সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল।যার সুফল পাচ্ছে চুয়াডাঙ্গাবাসী।তিনি চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদান করে মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ পুলিশের আইকনিক ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম(বার) এঁর নির্দেশনায় চুয়াডাঙ্গা জেলাকে মাদক ও চোরাচালান মুক্ত করার লক্ষে বিভিন্ন ধরণের প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।ফলশ্রুতিতে বহুসংখ্যক মাদক ব্যবসায়ী মাদক ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।
পুলিশ সুপারের দ্বায়িত্ব পালনকালে অত্র জেলায় মোট মামলা ৩৭৫৪ টি অত্র মামলায় গ্রেফতার ৪০০৩ জন এছাড়াও মামলা নিস্পত্তি ৩৯৫৬ টি,মোট ওয়ারেন্ট প্রাপ্তি ৯৪৩৫ টি, মোট ওয়ারেন্ট নিস্পত্তি ১০৪৫৮ টি,এছাড়াও ১২০৮ টি মাদক ও চোরাচালান মামলায় গ্রেফতার হয় মোট-১৬৪৮ জন আসামী। তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় ট্যাপেন্টা ট্যাবলেট ৫,৪৭৪ পিস, দেশী মদ ১৬ বোতল ১৪০লিটার ৫০০গ্রাম, ভারতীয় মদ ০৯বোতল, ১১লিটার, চোলাইমদ ০৯বোতল,এ্যালকোহল-২৩বোতল, ০১লিটার,বেঙ্গল টাইগার মদ-২৪ বোতল,তাড়ী-১২০লিটার, গাঁজার গাছ-৭৫টি,ফেন্সিডিল-২৪,৬৯৬বোতল, তরল ফেন্সিডিল-০৫লিটার, ইনজেকশন-৯১৫পিচ, হেরোইন-৩২পুরিয়া,ইয়াবা ট্যাবলেট-৭,৬৫৭ পিচ,গাঁজা-৪২২কেজি ৫৫৯ গ্রাম, যাহার সর্বমোট মূল্য অনুমান-৩,৪৫,১৩০,৩৯০টাকা।
অবৈধ্য অস্ত্রগুলি উদ্ধার অভিযানে ২০টি মামলায় গ্রেফতার হয় মোট ২৬জন আসামী। তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় ওয়ান শুটারগান-০৬টি, নাইন এমএম বিদেশী পিস্তল-০৩টি,ককটেল-০২টি, হাতবোমা-০৩টি, লোহার ছুরি-০১টি, রামদা-০৩টি, চাপাতি-০৫টি, খেলনা পিস্তল-০১টি, .২২ বোর রাইফেল-০১টি, কাঠের হাতল তৈরী ছুরি-০৭টি, তলোয়ার-০১টি, হাসুয়া-০১টি, লোহার দা-০১টি ও পরিত্যাক্ত থ্রি নট থ্রি রাইফেল-০১টি, ম্যাগজিন-০২টি, ওয়ান শুটারগানের গুলি-০৬রাউন্ড, পিস্তলের কার্তুজ-৪৭রাউন্ড, থ্রি নট থ্রি রাইফেলের কার্তুজ-৬৬রাউন্ড, .২২ বোর রাইফেলের কার্তুজ-১৩৪রাউন্ড।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ পুলিশ পেশাগত দ্বায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার সামাজিক, মানবিক ও উৎসাহমূলক কার্যক্রমে ভূমিকা রেখেছেন।বিশ্বব্যাপি মহামারী করোনাকালীন সময়ে ৮,২০৫জন অসহায়,দুস্থ্য,কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্য ও ঔষধ সামগ্রী পৌছানো,শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতারণ।এতিম,পথশিশু,অনাথ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের ঈদ সালামী ও নতুন জামা উপহার,প্রতিবন্ধীকে হুইল চেয়ার প্রদান,খাদ্য সামগ্রী উপহার,কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলেই পৌছে যাবে পুরস্কার (উন্নতমানের বেবি সেট, ফুল ও মিষ্টি) পেয়েছে ৮০৯টি পরিবার,৩৮৪টি ভাঙ্গা সংসার জোড়া,মোবাইল উদ্ধার,বিকাশ/নগদ এর টাকা উদ্ধার পূর্বক প্রকৃত মালিকের নিকট হস্তান্তর,সাইবার বুলিং এর শিকার নারী ও শিশুকে সহায়তা প্রদান,GPA-5 প্রাপ্ত JSC কৃতি ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা প্রদান, মহামারী করোনাকালে বিঘ্নিত স্কুল পুলিশিং কার্যক্রম,খাদ্য যাবে বাড়ি,মাদক ও জঙ্গীবাদ বিরোধী মহাসমাবেশ ,ইভটিজিং ,কিশোরগ্যাং, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসহ সামাজিক, মানবিক ও উৎসাহমূলক কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
ইতোমধ্যে তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর নিকট পেয়েছে মানবিক পুলিশ সুপারের স্বীকৃতি।তিনি চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার হিসাবে বার বার চুয়াডাঙ্গা শ্রেষ্ঠ জেলা এবং শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার এর পদক রেঞ্জ ডিআইজি, বাংলাদেশ পুলিশ, খুলনা রেঞ্জ এর নিকট থেকে গ্রহণ করেন। তিনি পুলিশ সপ্তাহ ২০২১ সালে গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচারণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা)পদকে ভূষিত হন।
এসপি জাহিদুল ইসলাম কর্মের মূল্যায়ন হিসেবেই এত প্রশংসা তিনি কুড়িয়েছেন।আপমর জনসাধারণ সবার কাছেই তিনি প্রিয় মানুষ হতে পেরেছেন বলেই তিনি জেলার মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। বদলিজনিত বিদায়ে সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হন বিদায়ী অতিথি। জেলা পুলিশের সকল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের বক্তব্যে কর্মময় জীবনে বিদায়ী অতিথি একজন সৎ, মেধাবী, প্রতিশ্রুতিশীল আগুয়ান, চৌকস, পরিশ্রমী, দক্ষ, গুণী ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন পেশাদার পুলিশ সুপার হিসেবে আলোচিত হন। সহকর্মীরা বিদায়ী অতিথির পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।