সুদীর্ঘ ৪০ বছর পর পরিবর্তিত পদ্ধতিতে কনস্টেবল নিয়োগ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

দ্বারা Update Satkhira
০ মন্তব্য 287 দর্শন

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি পরিবর্তিত পদ্ধতিতে বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ পাওয়া ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলদেরকে বঙ্গবন্ধুর ‘জনগণের পুলিশ’ হওয়ার শপথ বুকে ধারণ করে দেশ ও জনগণের সেবা নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন।

তিনি আজ (০২ জানুয়ারি ২০২২ খ্রি.) বিকালে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘চাকরি নয়, সেবা’ ট্যগলাইনে পরিবর্তিত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলদের মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্স উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহবান জানান।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)।

বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা, একাডেমির প্রিন্সিপাল অতিরিক্ত আইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) মোঃ মাজহারুল ইসলাম, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। ভিশন ২০৪১ পূরণের মাধ্যমে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে। উন্নত বিশ্বের উপযোগী করে বাংলাদেশ পুলিশকে গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে বিশ্বে গর্ব করি। আমাদের পুলিশ বাহিনীর মান এখন বিশ্বমানের কাছাকাছি।

তিনি বলেন, পরিবর্তিত নিয়মে স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্বের সাথে কনস্টেবল নিয়োগের মাধ্যমে পুলিশের নিয়োগ তথা সরকারি নিয়োগে এক নবযাত্রা সূচিত হয়েছে, রচিত হয়েছে এক নতুন ইতিহাস। ১৯৮০ সালের পর বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগে প্রথম পরিবর্তন এনেছে সরকার। সুদীর্ঘ ৪০ বছর পর পরিবর্তিত পদ্ধতিতে কনস্টেবল নিয়োগ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, দেশের সকল সেক্টরে এখন উন্নয়নের সুবাতাস বইছে। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে ‘চাকরি নয়, সেবা’ শ্লোগানে সৎ, সাহসী, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম তিন হাজার কনস্টেবল নিয়োগ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, নতুন নিয়মে নিয়োগকৃত কনস্টেবলদের মৌলিক প্রশিক্ষণেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাদের জন্য প্রতিটি কক্ষে চারজনের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ হ্যান্ডবুক পরিবর্তন এবং প্রশিক্ষণ প্রায়োগিক ও বাস্তবভিত্তিক করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরিবর্তিত আধুনিক বিশ্বে অপরাধের ধরণে এসেছে আমূল পরিবর্তন। বর্তমানে সাইবার অপরাধ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, ট্রান্সন্যাশনাল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দক্ষ পুলিশের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য কনস্টেবল। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ আসামি গ্রেফতার, টহল, বেআইনি সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ, পরোয়ানা তামিল, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশে পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এক মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশ হব। এই প্রক্রিয়া ধরে রাখতে হলে সবকিছুর মূলে হল সুশাসন। আর সুশাসনের অন্যতম প্রধান নিয়ামক আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন। আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নের মূল কাজ করে পুলিশ। পুলিশ যদি ঠিকভাবে কাজ না করে তবে কোন কিছুই ঠিক থাকবে না।

তিনি মাঠ পর্যায়ে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বলেন, পুলিশে যখন রিক্রুটমেন্ট হতো তখন এসপি সাহেবদের যে কি বিব্রতকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হত তা আমি দেখেছি। আইজিপি মহোদয় এবং তাঁর টিম এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছেন। এজন্য তিনি আইজিপিকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, তোমরা যেভাবে নিয়োগ পেয়েছো, সেভাবে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের হাত দিয়ে জ্ঞাতসারে যেন মানুষের জুলুম না হয়। তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে দেশের জন্য চেষ্টা করতে হবে, সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে অবশ্যই বাংলাদেশ ‘সোনার বাংলা’ হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশে ওয়েবভেইজড স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে চমৎকারভাবে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ করা হয়েছে। আজ বাংলাদেশ পুলিশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

নবনিয়োগকৃত কনস্টেবলদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন পুলিশের কাছে যায়। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত হবে। ২০৪১ সালের উন্নত দেশের স্বপ্নপূরণে তোমাদের সচেষ্ট হতে হবে। সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা সর্বোপরি জনগণের প্রতি ভালোবাসার মাধ্যমে তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মানুষকে সেবা দেওয়া, জনগণকে ভালোবাসার মানসিকতা থাকতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তোমাদের সেভাবে কাজ করে যেতে হবে যেভাবে তোমরা সততার মধ্য দিয়ে চাকরিতে এসেছো; সেভাবেই দেশের মানুষকে সেবা দিতে হবে।

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, নতুন নিয়োগ বিধিতে স্বচ্ছতার সাথে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জব মার্কেট থেকে ‘বেস্ট অব দি বেস্ট’ প্রার্থী নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এর সুফল জনগণ শিগগিরই পাবে। এসআই এবং সার্জেন্ট পদে নিয়োগের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। তিনি বলেন, অধঃস্তন পদের সাথে সঙ্গতি রেখে বিসিএস এর মাধ্যমে এএসপি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

নতুন পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কনস্টেবলদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা ৩৫ থেকে ৪০ বছর চাকরি করবে। যে দক্ষতা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে তোমাদের চাকরি দেয়া হয়েছে তোমরা জনগণকে ‘বেস্ট সার্ভিস’ দিতে পারবে। তোমাদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রায়োগিক সিলেবাস করা হয়েছে। তোমাদের কাছে প্রত্যাশা করবো, যেভাবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে জব মার্কেট থেকে তোমরা দুর্নীতিমুক্তভাবে সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছ দেশের ১৮ কোটি মানুষ এর প্রতিদান চায়। জাতির জন্য তোমাদের প্রতিদান দিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ট্যাগলাইন হলো, ‘চাকরি নয়, সেবা’। তোমরা এ ট্যাগলাইনে বিশ্বাস করো। তোমরা সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছে। গণমানুষকেও তোমরা সততা, যোগ্যতা ও মেধাকে ব্যবহার করে বৈষম্যহীনভাবে সেবা দিতে হবে। তিনি বলেন, আস, আমরা সমাজ থেকে সকল বৈষম্য, বঞ্চনার অবসান ঘটাই।

একাডেমির প্রিন্সিপাল খন্দকার গোলাম ফারুক ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলদের ভাগ্যবান আখ্যায়িত করে বলেন, কনস্টেবলদের কোনো প্রশিক্ষণ কোর্স এভাবে উদ্বোধন হয়নি। আজ তোমরা দেশ ও জনগণের সেবায় যে ওয়াদা করেছ তা রক্ষা করতে হবে।

উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে নবনিয়োগকৃত তিন হাজার কনস্টেবল উপস্থিত ছিলেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন