উপড়ে ফেলা না পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবেই : ড.বেনজীর আহমেদ

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 324 দর্শন

 

ড. বেনজীর আহমেদ :

১ জুলাই ২০১৬। রমজানের প্রায় শেষের দিকে। ইফতারের পর আমি ও আমার স্ত্রী একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে ধানমন্ডি যাচ্ছিলাম। তখন আমি র‌্যাবের মহাপরিচালক। বাসা থেকে বেরিয়ে যখন কাকরাইলে চিফ জাস্টিসের বাসার ওখানে, তখন র‌্যাবের অতিরিক্ত ডিআইজি লুৎফুল কবির ফোনে জানাল গুলশানে একটা হোটেল দখল করেছে টেরোরিস্টরা। আমি বললাম, তোমাকে কে বলল এটা? তিনি জানান, পশ্চিমা একটি দেশের এম্বাসি থেকে তাকে এখনই ফোন করে বলেছে। প্রিভিয়াস পোস্টিংয়ের কারণে তার সঙ্গে অনেক এম্বাসির যোগাযোগ ছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার ড্রাইভারকে বললাম, গাড়ি ঘোরাও। আই ওয়েন্ট ব্যাক হোম। মুহূর্তের মধ্যে আমি ইউনিফর্ম পড়লাম। সিকিউরিটি ডিটেইলের জন্য অপেক্ষা না করে শুধু ড্রাইভার আর বডিগার্ড নিয়ে রওনা দিলাম গুলশানের দিকে। গাড়িতে বসে প্রথমেই ফোন করলাম আমার এডিজিকে (অপারেশন)।

ঘটনা জানিয়ে তাকে তৎক্ষণাৎ গুলশানে আসতে বললাম। তারপর ফোন করলাম র‌্যাব-১-এর কমান্ডিং অফিসারকে। তাকে র‌্যাবের যত টহল টিম আছে আশপাশে, সবাইকে ওখানে পাঠাতে বললাম। আরও বললাম তুমি অ্যাডিশনাল টু হান্ড্রেড ট্রুপস নিয়ে বিশ মিনিটের মধ্যে ওখানে হাজির হবে। এরপর ফোন করলাম ডিরেক্টর অপারেশনকে। বললাম এক্ষুনি গুলশানে আসো। ফোন করলাম আমার ডিরেক্টর ইন্টেলিজেন্সকে। সে বলল, স্যার, আমি একটা ইফতার পার্টিতে, ক্যান্টনমেন্টে। আমার দশ মিনিট লাগবে। এরপর উচ্চ পর্যায়ে জানানোর আগে আরও ইনফরমেশন ভ্যারিফাই করতে ফোন করলাম ডিসি গুলশানকে। সেখানকার ডিসি, এডিসির ফোন কন্টিনিয়াসলি বিজি। এসি গুলশান বিষয়টি কনফার্ম করল। সে জানাল ঘটনা রোড নম্বর ৭৯-এর শেষ মাথায়। রেস্তোরাঁর নাম হোলি আর্টিজান। নিশ্চিত হলাম ইনসিডেন্ট হোটেলে নয় রেস্তোরাঁয়। তখন আমি শীর্ষ পর্যায়ে জানালাম এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। অ্যান্ড আই অ্যাম অন ওয়ে টু দ্য স্পট।

নিকেতনের পুলিশ চেকপোস্টে পৌঁছে দেখি ওরা দুটো রাস্তাই বন্ধ করে রেখেছে। গাড়ি থেকে নেমে ওদের বললাম, তোমরা দুটো রাস্তাই বন্ধ করে রেখেছ কেন? ইউ মাস্ট অ্যালাও দিজ ভেহিকেল গেটিং আউট ফ্রম গুলশান। কারণ গুলশান খালি করতে হবে। গুলশান থেকে যে গাড়িগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে সেগুলোকে তোমাদের অ্যালাও করতে হবে। গুলশানে গাড়ি ঢুকতে দিবা না, তবে যেগুলো বেরুচ্ছে সেগুলোকে বেরুতে দাও। রাস্তা খুলে দিয়ে আমি জরুরি অবস্থার বিবেচনায় রং সাইড দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলাম। একেবারে ৭৯ নম্বর সড়কের চৌরাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালাম। যেতে যেতে ডিএমপির ট্রাফিক চ্যানেলে গিয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোলকে অনুরূপ আদেশ দিলাম, হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ সংলগ্ন রাস্তার চারপাশে ব্যারিকেড বসানোর নির্দেশ দিলাম। আমার মনে হয় তখন রাত ৯টা ২০। দেখলাম, অনেক লোকজন ঘটনাস্থলে আসছে। এরমধ্যে আমার ডিরেক্টর ইন্টেলিজেন্স সেখানে পৌঁছে গেছে। ডিজিএফআই, এনএসআইয়ের কিছু অফিসার পৌঁছে গেছে। গুলশান থানার কিছু অফিসার ছিল। এদের কাছ থেকে আমি প্রাথমিক ব্রিফিং নিচ্ছিলাম। ওরা আমাকে বলল, স্যার, কয়েকজন ছেলে ঢুকছে ভেতরে। ঢোকার পর গুলি করেছে। প্যাট্রল পুলিশ ঘটনাস্থলের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ওপর গুলি ও একাধিক বোমা নিক্ষেপ করেছে। ওখানে প্রচুর লোক জিম্মি আছে। ওখানে কিছু বিদেশি আছে। জিজ্ঞাসা করলাম কতজন? কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে কেউ সংখ্যা বলতে পারছিল না।

জঙ্গিদের গ্রেপ্তার ও জিম্মি উদ্ধার অপারেশনের জন্য তখন দ্রুত একটা রেকি টিম গঠন করে সে লক্ষ্যে রেকি সম্পন্ন করে আমাকে জানাতে বলি। রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে যারা পালিয়ে আসছিল বা যাদের আমরা তখন উদ্ধার করতে পেরেছিলাম, তারা বলছিল যে, জঙ্গিরা গুলি করেছে কয়েকজনকে, তারপর স্ট্যাব করেছে। কিন্তু কতজন আহত-নিহত হয়েছে উদ্ধারকৃতরা সেটা বলতে পারেননি। অনেক পরে আমরা বুঝতে পারি, কিছু লোক ওখানে কিলড হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে জিম্মি উদ্ধার অপারেশনের জন্য কিন্তু স্পেশালাইজড ইকুইপমেন্ট ও লজিস্টিক প্রয়োজন হয়। র‌্যাবের দায়িত্বের আগে আমি পুলিশ কমিশনার ছিলাম। এ সময়ে আমার পরিকল্পনায় এবং সরকারের সদয় অনুগ্রহ ও সুদৃঢ় সমর্থনে উক্ত প্রতিষ্ঠানে অনেক অত্যাধুনিক টেকনোলজি, ইকুইপমেন্ট ও লজিস্টিক সংগ্রহ করে সংযোজন করি। তাই ডিএমপিতে থাকা ইকুইপমেন্ট ও লজিস্টিকের তালিকা আমার জানা ছিল। ডিএমপির বেতারযোগে এপিসি, সোয়াত টিম ও কিছু প্রয়োজনীয় লজিস্টিক পাঠানোর জন্য বললাম। ইমিডিয়েটলি আই এস্টাবলিশড অ্যা টেমপোরারি কমান্ড পোস্ট, হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ থেকে আনুমানিক ৩০০/৪০০ মিটার দূরে। তারপর ডিএমপির সদস্যদের দিয়ে ওই এলাকাটা সিকিউরড করলাম। নিরাপত্তার জন্য একটি বহির্বেষ্টনী নির্ধারণ করে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েনের ব্যবস্থা করি।

রেস্তোরাঁকে ঘিরে ফেলে আক্রমণের জন্য সম্মুখ পজিশনে র‌্যাব মোতায়েন হয়। দুটি বিষয় সিকিউরড করা হলো পাবলিক এবং কোনো যানবাহন যেন ওই এলাকায় না ঢুকতে পারে; আর জঙ্গিরা যেন পালিয়ে যেতে না পারে। রেস্তোরাঁর পাশে একটা লেক আছে। লেকের পাড় দিয়ে রাস্তা আছে। আমরা ওই ওয়াকওয়েটা দু’পাশ থেকেই বন্ধ করলাম। ওয়াকওয়ের রেস্তোরাঁর ঠিক পেছনের অংশটি জঙ্গিদের ফায়ার রেঞ্জের মধ্যে। সেখানে পর্যাপ্ত আলো ছিল না। কেউ যদি ক্রল করে ঐ ফাঁকা অংশ দিয়ে ওইপাশে গিয়ে পানির মধ্যে পড়ে, তাহলে সাঁতরিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে। ডিএমপিকে নির্দেশনা দিয়ে লেকের ওপারে কিছু ফোর্স মোতায়েন করে লেকের অপর পাড়কেও সিকিউরড করলাম। তারপরও রাতের আঁধারে জঙ্গিদের লেকে ঝাঁপ দেওয়ার সুযোগ থেকেই গেল। মনে হলো যে লেকটা ব্লক করতে হবে। এ সময়েই নেভির এসিএনএসও রিয়ার অ্যাডমিরাল মকবুল হোসেইন সাহেব আমাকে ফোন করে জানতে চাইলেন কোনো হেল্প লাগবে কি না? আমি বললাম, নেভি সোয়াড্স দরকার। উইদিন থার্টি মিনিট নেভি সোয়াড্স চলে এলো। ওরা লেকে অবস্থান নিল।

একটু পর আমাদের রেকি টিম আক্রমণের জন্য একটা হাতে আঁকা অপারেশনাল ম্যাপ তৈরি করে দেখায়। মাথায় তখন একটাই চিন্তা, জিম্মিদের নিরাপত্তা, কত দ্রুত পরিস্থিতির অবসান ঘটানো যায় এবং জঙ্গিদের আটক করা যায়। আমরা মধ্য রাতের পর অ্যাটাকের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। র‌্যাবের রেগুলার ট্রুপসের সঙ্গে তিনটা স্নাইপার টিম প্রস্তুত করি। প্রত্যেক টিমকে ব্রিফ করি। বাই দিস টাইম এক সহকর্মী জানাল আমাদের ট্রুপসের প্রস্তুতি টিভিতে লাইভ দেখানো হচ্ছিল। তাহলে তো টেরোরিস্টরা আমাদের প্রস্তুতি জেনে যাবে। এ পর্যায়ে আমি একটা মিডিয়াতে ব্রিফ করে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করতে অনুরোধ করলাম। ৪টি চ্যানেল বাদে সব চ্যানেলই সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে। মিডিয়া ব্রিফ শেষে গুলশান থানার এক অফিসারকে স্থানীয় ক্যাবল টিভি বন্ধের নির্দেশ দিলাম। এক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আক্রান্ত এলাকায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ করার জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরে জেনেছি আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছার কিছুটা পরই ডিএমপি কমিশনার অকুস্থলে হাজির হয়ে সরাসরি রেস্তোরাঁর পাশের একটা ছয়তলা বিল্ডিংয়ের নিচে অবস্থান নেন। সেখানে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা কমকর্তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য অবস্থান করছিলেন। কমিশনার তাদের সবাইকে নিয়ে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর মেইন গেইটের সামনে উপস্থিত হলে সেখানে ১টি আইইডি বিস্ফোরিত হয়। সবাই দ্রুত ওই ছয়তলা বিল্ডিংয়ের বেজমেন্টে প্রবেশ করেন। এই ঘটনায় র‌্যাবের বেশ কয়েকজন আহত হন। কয়েক মিনিট পর লে. কর্নেল মাসুদ মারাত্মক আহত অবস্থাতেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বেজমেন্ট থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দুজন পুলিশ সহকর্মীকে আহত অবস্থায় দেখেন। তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে দুজন র‌্যাব সদস্যের সহযোগিতায় একজনকে উদ্ধার করেন। ওই দুই পুলিশ সদস্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।

এই পর্যায়ে যৌথভাবে আক্রমণ পরিকল্পনা প্রণয়নের সুবিধার্থে আমি সোয়াতের কয়েকজন সদস্যকে পাঠিয়ে ডিএমপি কমিশনারকে আমার টেম্পরারি কমান্ড পোস্টে নিয়ে আসি। আমাদের সমন্বিত আক্রমণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে ডিএমপি কমিশনার ও সোয়াত টিমের কমান্ডার এডিসি ছানোয়ার হোসেন সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। প্ল্যান তৈরি করে আমরা হাসপাতালের দোতালায় র‌্যাবের স্নাইপার টিমকে পজিশন নিতে পাঠাই। পাশের ওই ছয়তলা বিল্ডিংয়ে র‌্যাবের অপর একটি টিম পজিশন নেয়। রাস্তার এপারেও আরেকটি দল পজিশন নেয়। আমরা তিন দিক থেকে অ্যাটাক করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় সম্মুখ পজিশন নিই।

এই সময় সরকারের তরফে আমাদের অ্যাডভাইজ করা হলো আরও কিছু কাজ করার জন্য। সেগুলোর মধ্যে একটা ছিল নেগোশিয়েট করা। আমাদের সিভিল সার্ভিসের এক ব্যাচমেট, তার এক আত্মীয় ভেতরে ছিল। সে আমাকে ফোন করে তার আত্মীয়ের নম্বরটা দিল। আমি ওই নম্বরে ফোন করলাম। দেখি ফোনটা রিং হয় কিন্তু ওপাশ থেকে কেটে দেয়। কয়েকবার রিং করলাম কিন্তু বারবারই কেটে দিচ্ছে। তখন আমি একটা টেক্সট করলাম যে ‘দিস ইস ডিজি র‌্যাব, প্লিজ টক টু মি’। টেক্সট করার পর আবার রিং করলাম কিন্তু আবার কেটে দেয়। আবার টেক্সট করলাম। আধঘণ্টা চেষ্টা করলাম এভাবে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের। বুঝলাম জঙ্গিরা আমাদের সঙ্গে রেসপন্স করবে না।

রাত ১টার দিকে হোলি আর্টিজানের সিসি ক্যামেরা হ্যাক করতে সক্ষম হয় র‌্যাবের সাইবার টিম। সো উই কুড অলসো সি হোয়াট দে আর ডুয়িং ইনসাইড। দোতলার ক্যামেরাগুলোকে আমরা হ্যাক করতে পেরেছিলাম। মধ্য রাতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ১টি জরুরি সভা আহ্বান করা হয়। আইজিপি, এসবি প্রধান ও ডিএমপি কমিশনারসহ আমরা ওখানে গিয়ে দেখলাম যে সেনাপ্রধানসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আছেন। সিদ্ধান্ত হয় মূল অ্যাসল্টটা করবে সেনাবাহিনীর এক নম্বর প্যারা কমান্ডো ইউনিট। আমরা তাদের রেগুলার ও ইমার্জেন্সি ব্যাকআপ দেব। আমরা তো আগে থেকে চারদিক সিকিউর করেই রেখেছি। ভোরে সিলেট থেকে আসা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের অফিসাররা ঘটনাস্থলে এলে আমি তাদের ব্রিফ করি। আরেকটু আগে সেনাবাহিনীর পরিচালক, মিলিটারি অপারেশন আমাদের কাছে ব্রিফিং গ্রহণ করেন এবং আমাদের পজিশন ও সিকিউরিটি কর্ডনের বিস্তারিত জেনে নেন।

এরপর সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্রিফিং শেষ করে অ্যারাউন্ড সেভেন ও’ক্লক ইন দ্য মর্নিং কমান্ডোরা পূর্ণ আক্রমণ প্রস্তুতি নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। তাদের প্রথম প্ল্যান ছিল, তারা একটা ফাইনাল রেকি করবে। তখন সকাল। রেকি করার জন্য দুজন সিনিয়র কর্মকর্তা সামনে যায়। দিনের আলো ছিল। ভেতর থেকে টেরোরিস্টরা দেখতে পায়। দেখেই ওরা গ্রেনেড ছুড়ে আর গুলি করে। তখন সঙ্গে সঙ্গে অপারেশন শুরু হয়। সেনা কমান্ডোরা ‘এপিসি’ নিয়ে সরাসরি রেস্তোরাঁয় অ্যাটাক করে। ‘এপিসি’ দেখে জঙ্গিরা দৌড়ে বেরিয়ে আসতে গেলে র‌্যাবের স্নাইপাররাও গুলি ছুড়তে শুরু করে। অপারেশন শেষ হওয়ার পর সেনাপ্রধান, আইজিপিসহ বাহিনী প্রধানরা সবাই ভেতরে প্রবেশ করেন। অপারেশন শেষ হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে আমরা ঢুকেছি ভেতরে। ভেতরে গিয়ে আমরা বিদেশিদের ডেডবডিগুলো দেখতে পাই। আমরা ভবনের একেবারে ভেতরে ঢুকিনি কারণ ইট ওয়াজ নট ক্লিয়ার। ভেতরে কোনো ট্র্যাপ কিংবা ‘আইইডি’ থাকতে পারে।

এ-রকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে সেটা সবসময় আমাদের চিন্তায় ছিল। কেননা আশপাশের দেশগুলোতে আর বিশ্বব্যাপীই এ-রকম ঘটনা হচ্ছিল। আমাদের দেশে পাদ্রি, পুরোহিত ও বিদেশিদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ইন্ডিভিজুয়ালি। এতে করে আমাদের মধ্যে ধারণা সৃষ্টি হয় যে দে ক্যান ট্রাই টু ডু সামথিং ইনসাইড ঢাকা সিটি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে আমরা পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও অন্যদের তুলনায় স্বল্পতম সময়ে জিম্মি পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে সক্ষম হই যা বিশ্ববাসী প্রশংসার চোখে দেখেছে। আসলে দেশ থেকে জঙ্গিবাদের সর্বশেষ বীজটি উপড়ে না ফেলা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলবেই।

এ অপারেশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১-প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ও র‌্যাবের সম্মুখ অবস্থানে থাকা সদস্যরা অপরিসীম সাহস, দক্ষতা ও দেশপ্রেমের পরিচয় প্রদান করেন। নেভি সোয়াড্স, পুলিশ ও বিজিবিসহ সব গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ও সদস্যরা খুবই প্রশংসনীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখেন, এদের প্রত্যেকের জন্য জাতি গর্ব অনুভব করতে পারে। জঙ্গিদের রক্তপিপাসার কারণে যে সব নিরীহ প্রাণ অকালে ঝরে যায় তাদের জন্য আমাদের শোক ও পরিবারের জন্য অশেষ সমবেদনা।

 

লেখক : ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম-বার  ,সাবেক সফল ডিএমপি কমিশনার,সাবেক সফল র‌্যাব মহাপরিচালক ও  ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন