আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ৮৪ম জন্মদিন

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 187 দর্শন

 

আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ৮৪ম জন্মদিন আজ।জন্ম দিন উপলক্ষে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সাবেক সিনিয়র সচিব নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও এসডিএফ চেয়ারম্যান মো: আবদুস সামাদ।

১৯৩৯ সালের এই দিনে তিনি কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সংগঠক, টিভি ব্যক্তিত্ব ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। মূলত বইপড়া কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে কাজ করছেন।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের পৈতৃক নিবাস বাগেরহাটের কচুয়া থানার কামারগাতি গ্রামে। তার বাবা আযীমউদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। মায়ের নাম করিমুন্নেসা।

১৯৫৫ সালে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৫৭ সালে বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থকে স্নাতক ও ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৭০-এর দশকে তিনি টিভি উপস্থাপক হিসেবে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন  আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। এজন্য ১৯৭৭ সালে পেয়েছেন ‘জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার’ , ১৯৯৮ সালে পেয়েছেন মাহবুব উল্লাহ ট্রাস্ট পুরস্কার; ১৯৯৯ সালে পেয়েছেন রোটারি সিড পুরস্কার; ২০০০ সালে পেয়েছেন বাংলাদেশ বুক ক্লাব পুরস্কার। ২০০৪ সালে তিনি রোমেন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশে অ-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিস্তারে অবদানের জন্য ২০০৫ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। প্রবন্ধে অবদানের জন্য ২০১২ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৬১ সালে শিক্ষকতা দিয়েই কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। মুন্সিগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে যোগ দেয়ার পর সিলেট মহিলা কলেজ, রাজশাহী কলেজ ও ঢাকায় ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজে (বর্তমানে ঢাকা বিজ্ঞান কলেজ) শিক্ষকতা করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কলেজ ঢাকা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন আহমেদের আমন্ত্রণে সেখানে যোগদান করেন। ঢাকা কলেজেই তিনি তার শিক্ষকতা জীবনের স্বর্ণযুগ অতিবাহিত করেন।

বাংলাদেশে টেলিভিশনের সূচনালগ্ন থেকে বিনোদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় তিনি পথিকৃৎ ও অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব। কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, অনুবাদ, জার্নাল, জীবনীমূলক বই ইত্যাদি মিলিয়ে তার গ্রন্থভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ। ডেঙ্গু প্রতিরোধ আন্দোলন, পরিবেশ দূষণবিরোধী আন্দোলনসহ নানা সামাজিক আন্দোলনে সবসময় সামনের কাতারে তিনি।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ব্যক্তিত্বের সবগুলো দিক সমন্বিত হয়েছে তাঁর “বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের” সংগঠক সত্তায়। তিনি অনুভব করেছেন যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের প্রয়োজন অসংখ্য উচ্চায়ত মানুষ। তাই দেশের আদর্শগত অবক্ষয় দেখে তা থেকে উত্তরণের জন্যে অধ্যাপক সায়ীদ ১৯৭৮ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র গড়ে তোলেন। “আলোকিত মানুষ চাই”- সারা দেশে এই আন্দোলনের অগ্রযাত্রী হিসেবে প্রায় তিন দশক ধরে তিনি রয়েছেন সংগ্রামশীল। একজন মানুষ যাতে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার অধ্যয়ন, মূল্যবোধের চর্চা এবং মানবসভ্যতার যা-কিছু শ্রেয় ও মহান তার ভেতর দিয়ে পরিপূর্ণ মনুষ্যত্বসম্পন্ন হয়ে বেড়ে উঠতে পারে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তেমনই এটি সর্বাঙ্গীণ জীবন-পরিবেশ।”

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ প্রথমদিকে তার তত্ত্বাবধানে মাত্র ২৫ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশ্বের মহান সাহিত্যকর্মগুলো পড়তে ও সেগুলোর উপর আলোচনা করা শুরু করেন। ধীরে ধীরে এই পাঠচক্রে স্কুল-কলেজ ও সাধারণ মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই পাঠচক্রগুলোতে বাংলা ও বিশ্ব সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বইগুলোর পঠন এবং সেগুলোর ওপর প্রাণবন্ত আলোচনা করা হয়।

বর্তমানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৫০০ টি শাখা দেশের মোট ৫৪ টি জেলায় তাদের কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করেছে এবং এর সাথে যুক্ত আছেন বহু স্বেচ্ছাসেবী কর্মী।

বাংলাদেশে পাঠাগারের অপ্রতুলতা অনুধাবন করে  ১৯৯৮ সালে থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি  কার্যক্রম আরম্ভ করে। নরওয়েজীয় সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এই কার্যক্রমে বই-ভর্তি একটি বাস পাঠকের দুয়ারে গিয়ে হাজির হয়। প্রথমদিকে কার্যক্রমটি ঢাকায় আরম্ভ হলেও আজ তা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অধিকাংশ জেলায়।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কার্যক্রমের পাশাপাশি স্যার জড়িত আছেন পরিবেশ দূষণবিরোধী আন্দোলনে, ডেঙ্গু প্রতিরোধ আন্দোলনে এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের আশাবাদ নিয়ে জড়িত হয়েছেন ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল’ এর একজন ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য হিসাবে যুক্ত রয়েছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন