পঞ্চগড়ে গলির রাস্তায় পাওয়া সেই কন্যাশিশুটির মাকে ঠাকুরগাঁওয়ে পাওয়া গেছে। সোমবার সন্ধ্যায় শিশুটির মা এবং নানা-নানী সঙ্গে কথা বলেন জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন এবং পুলিশ সুপার হাম্মদ ইউসুফ আলী। পরে তাদের কাছে শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক। তবে শিশুটিকে আরও দুয়েকদিন হাসপাতালে রেখে পরিচর্যা করা হবে এবং সেখানে শিশুটির মা ও নানা-নানী থাকবেন।

এর আগে শিশুটির মা রিমু আক্তারের সন্ধান পায় পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে আনা হলে তিনি শিশুটিকে কোলে তুলে নেন।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে ঠাকুরগাঁও রেল স্টেশনে চার বছরের শিশুসহ রিমু আক্তারকে কাঁদতে দেখেন আলেমা খাতুন নামের এক গৃহবধূ। এ সময় পরিচয় জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানাননি। এক পর্যায়ে আলেমা তাকে আটোয়ারী উপজেলার মালিগা এলাকায় তার বাসায় নিয়ে যান। তিন দিন রিমু আক্তার সেখানেই ছিলেন। এরই মধ্যে টিভি ও পত্রিকার খবর দেখে ও কান্না করতে দেখে সন্দেহ হলে রিমু আক্তারের কাছে আবারও পরিচয় জানতে চান আলেমা। এক পর্যায়ে সবকিছু স্বীকার করেন রিমু। এরপর তাকে আটোয়ারী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার দুপুরে আটোয়ারী থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে পঞ্চগড় সদর থানায় আনা হয়।

রিমু আক্তার বলেন, সোমবার পর্যন্ত আমার শিশুটির বয়স ১৬ দিন। আমি একাধিক কারণে শিশুটিকে দত্তক দিতে চেয়েছিলাম। কেউ নিতে না চাইলে আমি তাকে ফেলে চলে যাই। এটা আমার ভুল হয়েছে। এখন আমি শিশুটিকে ফিরে পেতে চাই। আমি নিজে তাকে লালন-পালন করবো। আমার সঙ্গে আমার বাবা-মাও রয়েছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, আটোয়ারী থানা পুলিশের সহায়তায় শিশুটির মা রিমু আক্তারকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। তিনিই যে শিশুটির মা এটা নিশ্চিত হওয়া যায়।

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বর্তমান স্বামীর সঙ্গে সাংসারিক টানাপোড়েনের কারণে রিমু আক্তার শিশুটিকে ফেলে যাওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া তার কথাও কিছুটা অসংলগ্ন। তবে তিনিই যে শিশুটির মা, এটা নিশ্চিত হয়েছি। গণমাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কোলে শিশুটির ছবি দেখে তার মাতৃত্ব জেগে উঠেছে। এজন্য তিনি এখন শিশুটিকে ফিরে পেতে চান। আমরা তার কোলেই শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এজন্য আরও দুয়েকদিন হাসপাতালেই শিশুটিকে রেখে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হবে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চগড় শহরের কামাতপাড়া মহল্লার একটি গলি থেকে ফুটফুটে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে তার মা দত্তক দিতে না পেরে সেখানে রেখে পালিয়ে যান বলে জানা যায়। এরপর থেকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রেই রাখা হয় শিশুটিকে। খবর পেয়ে নিঃসন্তান দম্পতিরা শিশুটিকে দত্তক নিতে হাসপাতালে ভিড় করেন। এজন্য অনেকেই পুলিশ সুপারসহ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানান। একই সঙ্গে শিশুটির নানা আইবুল ইসলাম ও নানী শিল্পী বেগমও শিশুটিকে নিজেদের জিম্মায় নিতে তাদের আগ্রহের কথা জানান।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন