জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যায় আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একাধিক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তারা জানান, ফাঁসি কার্যকরের সময় শান্ত ছিলেন আবদুল মাজেদ। প্রায় পাঁচ মিনিট ঝুলিয়ে রাখার পর তার লাশ ফাঁসির মঞ্চ থেকে নিচে নামিয়ে আনা হয়।
ফাঁসি কার্যকরের সময় কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা, ঢাকার জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, ঢাকার সিভিল সার্জন আবু হোসেন মো. মাইনুল আহসানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আসামির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রাত দশটার দিকে কারাগারে যান সিভিল সার্জনের একজন প্রতিনিধি। পরে কেরানীগঞ্জ কারা মসজিদের ইমাম আব্দুল মাজেদকে তওবা পড়ান। এসময় চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে তওবা পড়েন মাজেদ।
জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে ১০ জন জল্লাদের একটি দল ফাঁসি কার্যকর করতে উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
মাজেদের মরদেহ নিতে পরিবারের পাঁচজন সদস্য জেলগেটে উপস্থিতি হয়েছেন। সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকারে তারা আসেন। তাদের গাড়ি ঘিরে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বঙ্গবন্ধুর খুনির লাশ ভোলায় নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানেই পারিবারিক করবস্থানে তাকে দাফনের কথা। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে ভোলায় বঙ্গবন্ধুর খুনিকে দাফন করতে দেয়া হবে না।
৪৫ বছর পর গ্রেপ্তার, অতঃপর ফাঁসির রশিতে
দেড় যুগের বেশি সময় ভারতে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর এই আত্মস্বীকৃত খুনিকে গত মঙ্গলবার মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) একটি দল। গত মাসে দেশে ফিরে মাজেদ স্ত্রীর ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকার এক নম্বর রোডের ১০/এ বাড়িতে বসবাস করছিলেন।

পরদিন বুধবার দুপুরে আদালতের নির্দেশে কারা কর্তৃপক্ষ আসামিকে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হেলাল চৌধুরীর আদালতে হাজির করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটররা আসামি গ্রেপ্তার দেখানোসহ আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আসামি আব্দুল মাজেদকে গ্রেপ্তারসহ মৃত্যু পরোয়ানার আবেদন মঞ্জুর করেন।
একই দিন সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেন আব্দুল মাজেদ। আবেদন খারিজের পর নিয়ম অনুযায়ী তার ফাঁসির কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ৩৪ বছর পর ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। খুব ধীরে দীর্ঘ বারো বছরে নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে আইনের প্রতিটি ধাপ স্বচ্ছতার সঙ্গে অতিক্রম করে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে স্বঘোষিত খুনিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে কারাবন্দি পাঁচ আসামির ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ফাঁসি কার্যকর হয়। তারা হলেন- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ছয় আসামি পলাতক ছিলেন। এর মধ্যে আবদুল মাজেদকে অবশেষে ধরা ফাঁসিতে ঝুলানো হলো।
পলাতক বাকি পাঁচজনের মধ্যে লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশিদ (বরখাস্ত) লিবিয়া ও বেলজিয়ামে অবস্থান করছেন। বেশিরভাগ সময় লিবিয়াতে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। লে. কর্নেল (অব.) শরীফুল হক ডালিম (বরখাস্ত) পাকিস্তানে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী (বরখাস্ত) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে, লে. কর্নেল (অব.) এন এইচ এমবি নূর চৌধুরী (বরখাস্ত) কানাডায় রয়েছেন। আর রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ভারতের কারাগারে আটক বলে অনেকে ধারণা করছেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন