শ্যামনগর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে নদীতে অস্বাভাতিক জোয়ার বৃদ্ধিতে উপকূল রক্ষিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে ৫ ইউনিয়ন প্লাবিত। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে পূর্ণিমার পূর্ণ জোয়ারের সময় নদীতে হঠাৎ ৬/৭ ফুট পানি বৃদ্ধি পায় এবং উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, রমজাননগর ও নূরনগর ইউনিয়নের পাউবো বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে মৎস্য ঘের প্লাবিত হয় এবং উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে জোয়ারের পানি পাউবো বেড়ী বাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে। মানুষের মনে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আতাউল হক দোলন প্রতিবেদক কে জানান, সকাল থেকে উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, রমজাননগর, কৈখালী সহ ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শন করি, প্লাবিত মানুষের কাছে ছুটে যায় এবং জনসাধারণকে সাথে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন বেঁড়িবাধ মেরামত করি, ক্ষতিগ্রস্ত এবং আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করি। আমি বাংলাদেশ সরকার তথা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে একটাই দাবি জানাই, উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের এবং উপকূলীয় মানুষের মাঝে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ ন ম আবুজর গিফারী জানান, তাৎক্ষণিকভাবে সরকারী সাহায্য হিসাবে প্রতিটি ইউনিয়নে নগত ২৫ হাজার টাকা ও ২টন করে চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শুকনা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। গাবুরা ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মাস্টার আব্দুর রহিম জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর তাণ্ডবে কপোতাক্ষ নদীতে জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া, গাঁগড়ামারি ৩নং এলাকায় পাউবো বাঁধ ভেঙ্গে পানি ভিতরে প্রবেশ করে। এতে ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম তলিয়ে যায় এবং যাবতীয় মৎস্য ঘের তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। ৯নং সোরা গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ ও রব্বানী সহ অনেকেই জানান, এ অঞ্চলে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় আবহমান কাল ধরে এ অবস্থার সৃষ্টি। পাউবো কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। যেনতেন ভাবে নির্মিত পাউবো বাঁধ অল্প আঘাতেই নদীর পানিতে বিলীন হয়ে যায়। যখনই দূর্যোগ সৃষ্টি হয় তখনই পাউবো কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের। পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান এডঃ এসএম আতাউর রহমান জানান, খোলপেটুয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের ঝাঁপা ও পাতাখালী বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে এবং ইউনিয়নের অধিকাংশ পাউবো বাঁধ ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে যাবতীয় মৎস্য ঘের একাকার হয়ে যায়। জোয়ারের পানি যেভাবে ভিতরে প্রবেশ করছে তাতে পুরো ইউনিয়ন তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল জানান, খোলপেটুয়া নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারে কয়েকটি এলাকার বেঁড়িবাধ ভেঙে যায় এবং অধিকাংশ পাউবো বাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের পানি ভিতরে প্রবেশ করে অধিকাংশ মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে। রমজাননগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আল মামুন জানান, নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাউবো বাঁধ ভেসে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে কয়েকটি গ্রাম আংশিক প্লাবিত হয়েছে। মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের মৎস্য ঘের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
নূরনগর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বখতিয়ার আহমেদ জানান, সীমান্ত কালিন্দি নদীতে ৬/৭ ফুট জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে পাউবো বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে এবং এলাকার কয়েক শত বিঘা মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয় এলাকাবাসী, সিপিপি সদস্য, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ভাঙ্গন কবলিত স্থানটি মেরামত করা হয়েছে। ইউনিয়নের অধিকাংশ পাউবো বেঁড়িবাধ ঝুঁকিপুন্য, যেকোনো মুহূর্তে আবারও ভেঙে প্লাবিত হতে পারে অত্র এলাকা।