মানবিকতা ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাংলাদেশ পুলিশ ক্যাডারের ২৪ তম বিসিএস ও চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। তিনি চুয়াডাঙ্গার আপামর জনসাধারণের হৃদয়ে ইতোমধ্যে জায়গা করে নিয়ে পরিণত হয়েছেন ভালোবাসার পাত্রেও। তার হাতের জাদুর পরশে বদলে বদলে গেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ। মানবিক পুলিশিংয়ের গল্প ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় তার অবদান আজকে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হচ্ছে।
উপলক্ষ চুয়াডাঙ্গাবাসীর সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার ২ বছর পূর্তি। পুলিশ হিসেবে জেলার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তিনি। করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে তার জেলাবাসীর ভালো ভালো পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করার মতো যথেষ্ট সময় পায়নি। আশা করি এবার সেগুলোর বাস্তবায়ন করবেন। ইতোমধ্যে তিনি যে কাজগুলো করেছেন তাতে শুধু চুয়াডাঙ্গা জেলা নয় সারাদেশে প্রশংসায় ভাসছেন।
উইমেনস সাপোর্ট সেন্টার: পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গায় এসে দেখেন- ডিভোর্সে শীর্ষ জেলাগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গার নাম। নারীদের নিয়ে শত আইন থাকলেও সেগুলোর মাধ্যমে বিচার পেতে দীর্ঘ সময়, অর্থ খরচ হয় ও বিভিন্ন কারণে বিচার পেতে বিলম্ব হতো। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাস্যা আপস বা মধ্যস্ততাকারীর অভাবে ডিভোর্সে রূপ নিত। এতে অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়ে তাদের বাবা-মায়ের আদর শৈশবেই হারিয়ে ফেলত। এই সমাস্যাগুলো সমধান করার জন্য মানবিক পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম গড়ে তুললেন উইমেনস সাপোর্ট সেন্টার। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সমাস্যাগ্রস্ত পরিবার ছুটে আসতো তার কাছে – পুলিশ সুপার সেসব সমাস্যাগ্রস্ত পরিবারের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে সমাধান করে এবং তাদের হাতে উপহার ও তুলে দেন। আজ পর্যন্ত ৩৬৪টি পরিবার এই সেবা গ্রহণের জন্য উইমেনস সাপোর্ট সেন্টারে আসেন।
তার সেবা প্রদানের একটি উদাহরণ- একদিন এক ছেলে কোনোভাবেই তার বউকে নেবে না। এসপি ছেলেটার কিছু বাজে অভ্যাসের কথা শুনে বললেন, এটা আমার মেয়ে, এখন তুমি নেবে কিনা বাদ দেবে ভেবে দেখো! তারপর সেই ছেলে তার বউকে নিয়ে যায়।
বাল্যবিয়ে: উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টার খুলে বুঝতে পারেন-ডিভোর্স ও সংসারে অশান্তির অন্যতম কারণ অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে। তারা অল্প বয়সে সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। তাছাড়া এটা আইনের পরিপন্থি কাজ। তাই জেলার সব কাজীদের সাথে মিটিং করলেন। তাদের কঠোর হুঁশিয়ারির সাথে ভালোভাবে বুঝালেন। কাজীরা অভিযোগ করেন- ইউনিয়ন তথ্যসেবা থেকে বয়স বাড়িয়ে মানুষ বিয়ে দেয়- তখন তিনি ইউনিয়ন তথ্যসেবায় কাজ করা উদ্যোক্তাদের সাথেও বসার সিদ্ধান্ত নিলেও করোনা কারণে সম্ভব হয়ে উঠেনি।
ভাঙা সংসার জোড়া: ২৫৮টি ভাঙা সংসার জোড়া দিয়ে এক অন্যান্য পুলিশিং সেবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মানবিক পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। আরও ৬৪টি পরিবারকে আইনি সহয়তা দিয়েছেন।
কন্যা সন্তান হলেই পুরস্কার: সমাজে মেয়েকে ছোট মনে করা হয়। মেয়ে মানেই তাকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে হবে এমন একটি অবস্থা বিরাজ করছে। কন্যা সন্তান অভিশাপ নয় বরং আশীর্বাদস্বরূপ মহানবী সা. সেই চিন্তাধারায় চুয়াডাঙ্গা জেলাব্যাপী কন্যা সন্তান কারো ঘরে জন্ম নিলেই উপহার পাঠিয়ে শুধু জেলা নয়- সারা দেশে প্রশংসিত হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলায় জন্ম নেয়া ৭৭৮টি কন্যা পুলিশ সুপারের দেয়া পুরস্কার পেয়েছেন।
মাদকের বিরুদ্ধে ৫ বাহিনীর যৌথ অভিযান: পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, আনসার বাহিনী চুয়াডাঙ্গা জেলার মাদকের ঘাঁটি দর্শনা থানার আকন্দবাড়িয়ায় অপারেশন আকন্দবাড়িয়া ও রাঙিয়ারপোতা পরিচালনা করেন এবং এই অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। আর এটা জেলা প্রশাসককে নিয়ে নিজে মাঠে অভিযান পরিচালনা করেন। সব বাহিনীর সাথে নিজে যোগাযোগ করে এই অভিযানের উদ্যোগ নেন। কিন্তু করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে তা বন্ধ আছে।
করোনাকালীন খাদ্য সহযোগিতা: করোনার মহামারির সময় লকডাউন চারদিকে কর্মহীন মানুষ। ঘরে ভাত নেই, চিকিৎসার টাকা নেই। চারদিকে হাহাকার। তখন কিছু নেতাকর্মী বাদে অধিকাংশ নেতাকর্মীকে জনগণ খুঁজে পাচ্ছিল না! ঠিক তখনি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান মানবিক পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। খাদ্য সহয়তার জন্য হটলাইন নম্বর চালু করেন। ক্যাম্পে ক্যাম্পে তালিকা ও খাবার চাহিদা চেয়ে পাঠিয়েছেন। শুধু খাদ্য সহয়তাই নয়- বাচ্ছার দুধ নাই, ওষুধ নাই, ফোন দিলেই অসহায়ের সহায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
তিনি ১০ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণ করেন। প্রায় ২৫০ জনকে ওষুধ কিনে দিয়েছেন। তাছাড়া ২৫০ জনকে বস্ত্র দিয়ে সহয়তা করেছেন।
করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা: করোনার সময় তার ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, লিফলেট বিতরণ করেছেন মুক্ত হস্তে। চুয়াডাঙ্গার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েও চুয়াডাঙ্গার মানুষের সেবা করেছেন। ৭০ হাজার মাস্ক বিতরণ, ২৫ হাজার লিফলেট বিতরণ করেন। পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জনগণকে সচেতন করতে মাইকিং করেছেন।
অক্সিজেন সংকটে জেলাবাসীর পাশে ছিলেন: এই তো কিছুদিন আগে করোনা রোগীদের ব্যাপক অক্সিজেন সংকট দেখা যায়। হাসপাতালে আইসিইউ নেই, অক্সিজেন নেই, অক্সিজেনের অভাবে জনগণ যখন আতঙ্কে, সেই সময় বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাশাপাশি তিনি চুয়াডাঙ্গাবাসীর পাশে দাঁড়ান। তিনি সদরে ১০টি বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার, ২টি দামুড়হুদায় এবং ২টি আলমডাঙ্গায় প্রদান করেন।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস: পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের অতীত খুবই খারাপ, ৪-৫ হাজারের নিচে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হতো না। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করতে গিয়ে জনগণ থানায় তদবির, আবার এসবি অফিসে তদবির, থানা থেকে কাগজ দ্রুত ডিএসবি অফিসে পাঠাতে অর্থ লেনদেন হওয়ার কথা শুনে এবং জনগণের হয়রানি কমাতে থানায় যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। এসপি অফিসে চালু করলেন ওয়ান স্টপ সার্ভিস। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করতে কোথাও যাওয়ার দরকার নাই। এসপি অফিসে এসে আবেদন করুন অথবা যেকোনো কম্পিউটারের দোকান থেকে আবেদন করলেই পেয়ে যাবেন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট। পুলিশ আপনার বাড়ি গিয়ে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গিয়ে নিয়ে আসবে।’
প্রতিবন্ধীদের পাশে পুলিশ সুপার: জেলার প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর পাশেও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা মানবিক পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। এক প্রতিবন্ধীর মেয়ের বিয়েতে অর্থ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই হুইল চেয়ার ও আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন করলে বা ফোন করলে পুলিশ সুপার সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আজ পর্যন্ত ৬টি হুইল চেয়ার দিয়েছেন এবং এক প্রতিবন্ধীকে ব্যবসা করতে কিছু মূলধন দেন।
ছাত্রছাত্রীদের পাশে পুলিশ সুপার-স্কুলিং পুলিশ: জেলায় এসেই স্কুলিং পুলিশ চালুর উদ্যোগ নেন পুলিশ সুপার। চুয়াডাঙ্গা জেলার সব জিপিএ-৫ ও ‘এ’ গ্রেড প্রাপ্তদের উৎসাহ দিতে সংবর্ধনার আয়োজন করেন। ৭৭৮ জন ছাত্রছাত্রীকে ফুল, ক্রেস্ট, বই, চারাগাছ দিয়ে সংবর্ধনা জানান। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে নিজ ফান্ড থেকে ১০০০ টাকা ও ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বই বিতরণ করেন। গরিব ছাত্রছাত্রীদের গাইড বই খাতা কিনে দেন। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়ে যখন চিন্তা শুরু করলেন ঠিক তখনি করোনা এসে স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে সব পরিকল্পনা পণ্ড করে দিলো। তিনি এটা নিয়ে নতুন করে শুরু করবেন।
জনগণের দোরগোড়ায় এসপির সেবা: পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গায় এসেই তার মোবাইল নাম্বার হটলাইন নাম্বার হিসেবে লিফলেট করে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। জেলার প্রত্যক এলাকায় তার লোকজন তৈরি হয়ে যায়। এতে পুলিশ ও গোয়েন্দা সবাই চাপে পড়ে যায়। কোথাও কিছু ঘটলে সবার আগে তথ্য পেয়ে যান। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মনের কথা জানতে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার অংশ করতে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে আকস্মিক জেলার এক মসজিদে হাজির হয়ে তাদের কথা শুনা শুরু করেছিলেন কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।
বেকার যুবকদের পাশে পুলিশ সুপার: অনেক বেকার যুবক পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসে বলেছে, স্যার আমার চাকরি নাই, আমার আত্মহত্যা করার মতো অবস্থা। পুলিশ সুপার ঢাকার বিভিন্ন কোম্পানিতে বলে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অনেক মেয়েকে চুয়াডাঙ্গা বিগবাজার, বিভিন্ন শো-রুম, প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য সুপারিশ করেছেন। গরিব মেধাবী ছেলেমেয়েদের চাকরির বা বিসিএসের বই কিনে দিয়েছেন। পাশাপাশি চাকরিপ্রাপ্ত নব্য বিসিএস ক্যাডারদের সংবর্ধনা দিয়েছেন।
জমি জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ সমাধান: চুয়াডাঙ্গা কোর্টে যত মামলা হয় তার অধিকাংশই জমি জায়গা বা জমি নিয়ে মারামারি। মাঝে মাঝে জমি নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি। দীর্ঘদিন আদালত ঘুরে ঘুরে তারা আপস করতে পুলিশ সুপারের দ্বারস্ত হয়। পুলিশ সুপার হাসি মুখে বলেন- জমি জায়গার কেস দেখে এসিল্যান্ড-আদালত দেখে। আমার কাছে কেন? অনেকে বলে স্যার, অনেক বছর ঘুরে ঘুরে হয়রান কিংবা স্যার মামলা চালানোর টাকা নাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে উত্তর যায়ই হোক- তিনি সবার সমাস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলার পরিবেশ রক্ষায় অবদান: চুয়াডাঙ্গা জেলায় এসে দেখলেন চুয়াডাঙ্গা বজ্রপাতে সারা দেশে দ্বিতীয়! প্রতি বছর অসংখ্য কৃষক বজ্রপাতে মারা যায়, অনেক বছর ধরেই এ ঘটনা চলমান কেউ এর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পুলিশ সুপার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় তালগাছ রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন এবং সেটা এখনো চলমান। এখন পর্যন্ত ১০০০ তালবীজ লাগিয়েছেন। আজ থেকে ২০ বছর পরে যখন তালের চারাগুলো আকাশ ছুয়ে যাবে তখন পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম পুলিশের চাকরিতে না থাকলেও তার এই অবদান সগৌরবে মাথা তুলে তার কথা স্মরণ করিয়ে দেবে চুয়াডাঙ্গাবাসীকে। চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের পাখিদের প্রতি ভালোবাসা দেখে তিনি তাকে উৎসাহ প্রদান করেন প্রতিটি থানা ও ক্যাম্পে পাখির বাসা করে দেন।
জেলার প্রত্যন্ত ক্যাম্পে রাত্রিকালে আকস্মিক পরিদর্শন: চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে পুলিশ বিভাগের আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন জেলাবাসীর কাছে পুলিশকে এক নতুন রূপে তুলে ধরেন। তিনি নিজে পুলিশদের বিভিন্ন সমাস্যা ও জনগণের সমাস্যা দেখার জন্য জেলা শহর থেকে দূরবর্তী ক্যাম্পে রাতে হুট করে হাজির হন।
স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনগুলোর ভালো কাজে উৎসাহ: বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবকদের উৎসাহ দিতে কখনো রক্ত দিতে, কখনো তালগাছ লাগাতে কিংবা জেলা শহর থেকে ৫০ কি.মি দূরে জীবননগরের মিনাজপুর বিলের ভেতরে বাঁশের সাঁকো বা ব্রিজ বানাতে তিনি ছুটে গেছেন। চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক ভাষা পরিষদ, অ্যাওয়ারনেস আর্মি, গ্রিন মুভমেন্ট- এই রকম জেলার অনেকগুলো সংগঠনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে তাদের ভালো কাজে পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
প্রশাসনিক কাঠামো উন্নয়নে অবদান: পুলিশ সুপার চুয়াডাঙ্গা যোগদানের পর দেখলেন চুয়াডাঙ্গায় চারটি থানা- যার কারণে প্রশাসনিক বাজেট কম আসে। তখন তিনি দর্শনায় থানা উদ্বোধনের প্রস্তাবে সমর্থন দেন এবং পুলিশিং সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে আলমডাঙ্গার বড় গাংনীতে, সদরের সরোজগঞ্জে, জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়ায় থানা গঠনের প্রস্তাব দেন এবং যার কার্যক্রম চলমান এবং তাছাড়া আলমডাঙ্গার জামজামিতে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন। ইতোমধ্যে দামুড়হুদা, দর্শনা, জীবননগর থানার সার্কেল অফিস দর্শনায় স্থাপন করেন।
কৃষকের পাশে পুলিশ সুপার: গত বছর করোনা মহামারির সময় কৃষকরা অর্থ অভাবে ধান কাটতে পারছিল না। এদিকে বৃষ্টির পানিতে ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মানবিক পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম সব থানা ও ক্যাম্পে কৃষকদের ধান কেটে দেয়ার নির্দেশও দেন। পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা কিছু কৃষকের ভুট্টা কেটে দেয়ার নির্দেশ দেন।
গরিব শীতার্তদের পাশে পুলিশ সুপার: চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়ায় প্রচুর শীত। শীতকালে মাঝেমাঝে দেশের সর্বনিু তপমাত্রা এখানে বিরাজ করে। নিজ উদ্যোগে পুলিশ সুপার গত শীতে প্রায় ৪০০ কম্বল গরিব জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ করেন। তাছাড়া অতিথি হয়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণে করে তাদের উৎসাহ প্রদান করেন।
এতিমের পাশে পুলিশ সুপার: এতিমদের পুলিশে চাকরি দিয়ে এর আগেও অনেক পুলিশ সুপার প্রশংসিত হয়েছেন। পুলিশে নিয়োগের সুযোগ না পেলেও অন্যভাবে এতিমের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। পুলিশ সুপার তার ছেলেমেয়ের জন্মদিন পালন করেন এতিমখানার শিশুদের সাথে। শুধু তাই নয়- বছরে দুই ঈদে সরকারি শিশু পরিবারে এতিমদের মাঝে ইদের পোশাক ও ভালো খাবারের ব্যবস্থা করেন।
সহকর্মী ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা: শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও চুয়াডাঙ্গা নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের মাঝে ঈদ উপহারসামগ্রী প্রদান করেন। করোনায় কোনো পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হলে ফল ও ভালো খাবারের ব্যবস্থা করেন। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রাপ্ত আম বা ফল সব পুলিশ সদস্যদের মাঝে বণ্টন করে দেন। সহকর্মী পুলিশ কনস্টেবলদের চাকরি থেকে অবসরের দিন নিজের গাড়ি ও ফুল দিয়ে সজ্জিত করে তার গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
জেলার অটো ও ভ্যান শ্রমিকের পাশে পুলিশ সুপার: তিনি করোনায় ভ্যান চালকদের খাদ্য সহয়তায় অগ্রাধিকার দেন। ক্যাম্প ও থানা এলাকার সব ভ্যান ও অটো চালকদের নিয়ম করে রাতে ডিউটি করতে হয় যা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। পুলিশ সুপার তাদের ঝড় বৃষ্টিতে ডিউটি করতে দেখে এবং তাদের কথা চিন্তা করে পুলিশের নিজস্ব ডিউটি গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেন। ইতোমধ্যে ১০টি গাড়ি কিনেছেন কিন্তু অটো ও ভ্যানচালকদের এই দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিতে আরও ২৯টি গাড়ি লাগবে- যা কেনার চেষ্টায় আছেন।
মাদক ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহয়তা: মাদক পাচারের মজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলেও মামলা, হয়রানির কারণে ফিরতে পারছিল না। যেসব ব্যবসায়ী পুলিশ সুপারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, তিনি তাদের মাথায় টুপি দিয়ে শপথ করিয়ে ভালো জীবনে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছেন। তারা কি কাজ করে খাবে ভেবে পাচ্ছিল না, তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন কোম্পানি ও সুপার শপে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।
বিট পুলিশিং: পুলিশি সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে চুয়াডাঙ্গা জেলাকে ৫৩টা বিটে ভাগ করেন। প্রতি বিটে একজন থানার এসআইকে নিযুক্ত করেন- যাতে করে মানুষকে থানায় ছুটে আসতে না হয়।
সাইবার পুলিশিং: বাস্তব জগতের চেয়ে বিশাল বড় জগৎ সাইবার জগৎ। এই জগতের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজন সাইবার জগৎ সম্পর্কে জানা দক্ষ পুলিশ। এএসআই রজিবুলকে প্রধান করে সাইবার ক্রাইম কন্ট্রোল বিভাগ ইতোমধ্যে বৃদ্ধ মহিলার বয়স্কভাতা টাকা উদ্ধার, বিকাশ ও রকেট প্রতারণা, হারানো মোবাইল ও ল্যাপটপ উদ্ধারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কেস সমাধান করতে সমর্থ হয়েছে। এই বিভাগের মাধ্যমে জেলায় সাইবার ক্রাইমের ঘটনাও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে পুলিশ সুপার জানান।
ব্যাংক ডাকাতি এবং হত্যামামলার দ্রুত সমাধান: চুয়াডাঙ্গা ছোট জেলা কিন্তু সীমান্তবর্তী বলে এখানে অপরাধ বেশি। এই যুগে এসেও চুয়াডাঙ্গার উথলী সোনালী ব্যাংকে দিনে দুপুরে ডাকাতি হয়, খুব দ্রুত সেই রহস্যময় কেস সমাধান ও আসামি গ্রেপ্তার করেন। তাছাড়া বেশ কিছু আলোচিত হত্যা রহস্য দ্রুত উদঘাটন করেন। দুর্দিনের মহামারি করোনায় নিজের জীবনকে বাজি রেখে চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাগব করেছেন, এখনো রাত-দিন করে চলেছেন। পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের এমন চলমান প্রশংসনীয় উদ্যোগকে স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ সাধুবাদ জানান। এলাকাবাসী আশা করেন, পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামকে সর্বোচ্চ মেধা ও সৃষ্টিশীল কাজ করার পর্যাপ্ত সময় দেবেন। যেন জেলাবাসীর আশার বাতিঘর জেলাকে একটি মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত জেলা হিসেবে গড়ে যেতে পারে।