নির্বাচন কমিশনকে যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া না হয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: সুলতানা কামাল

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 148 দর্শন

 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এড. সুলতানা কামাল বলেছেন, সচেতন নাগরিক হিসেবে চাইবো নির্বাচন অবাধ স্ষ্ঠুু ও নিরপেক্ষ হোক। তাহলে সত্যিকার অর্থে মানুষ তার পছন্দের মানুষকে ভোট দিতে পারবে। নমিনেশন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত যেতে হবে। নমিনেশন জমা দেওয়ায় ক্ষেত্রে কোন গোলমাল থাকলে মানুষ তার পছন্দের মানুষকে ভোট দিতে পারবে না। আমাদের না ভোটের একটি আবেদন ছিলো সেটি গৃহীত হয়নি। তারপরও নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী করতে হবে। সংঘাত বন্ধ করতে হবে। সংঘাত কখনো সাধারণ মানুষ করে না। যে কোন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা সংঘাত সৃষ্টি করে। আপনারা যারা নিজেদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দাবী করেন, তারা সংঘাত বন্ধ করুন।
আগামী নির্বাচনে বড় দলগুলোর দ্বিমুখী অবস্থান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারেই সবকিছুর সমাধান তা নয়। আমিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলাম। স্বাধীনভাবে কাজ না করতে দিলে কোনো কিছুই সম্ভব না। নির্বাচন কমিশনকে যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া না হয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।


রোববার (২১ মে) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা এলজিইডি মিলনায়তনে ‘সাতক্ষীরায় মানবাধিকার পরিস্থিতি ও করণীয়’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এড. সুলতানা কামাল আরও বলেন, আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার পরও ২০১০ সালের আগে আমরা পারিবারিক নির্যাতন দমন আইন পাইনি। আমাদের সমাজে যে পরিমান নারী নির্যাতন হয় মামলা হয় তার ১০শতাংশ। বিচার পেয়েছে মাত্র ৩শতাংশ। যে পরিমান ধর্ষণ হয় বিচার হয় তার ৩ ভাগেরও কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় বাদীপক্ষ ন্যায় পায়না।
তিনি আরও বলেন, দখল আর দূষণে আক্রান্ত দেশ। পাহাড় কাটা, পানি দূষণ, নদী দূষণ, পরিবেশ দূষণসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশ। এসব সমস্যা প্রতিকারে জনসচেতনতা জরুরী। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের অপেক্ষায় থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা-বন কাটা চলবে না, পাহাড় কাটা চলবে না, নদী দূষণ করা যাবে না ইত্যাদি। পরিবেশ কর্মী হিসেবে এসব কথা তো আমরাও বলছি। পরিবেশ বাঁচানোর জন্য রীতিমত আন্দোলন করছি। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। কোথায় যেনো রহস্য লুকিয়ে আছে। আমাদের উদ্বেগটা সেখানেই। সর্বোচ্চ নির্বাহী থেকে সাধারণ মানুষ আমরা সবাই যা চাই না তা হয়ে যাচ্ছে এবং নির্বিচারে হয়ে যাচ্ছে। জবাবদিহিতা না থাকায় এবং সুশাসন ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় হয়তো এমনটি হচ্ছে। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা যদি ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করতে চাই তাহলে হয়তো বাসায় ফিরতে পারবো না। তাই ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করতে চাইনা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যেন এখন কথা কম বলার দায়িত্ব বেড়েছে। সবাই যেন কথা বলতে ভয় পায়। তিনি অধ্যাপক রেহমান সোবহানকে দেশের এক নম্বর বুদ্ধিজীবী উল্লেখ করে তার প্রসঙ্গ টেনে ধরে বলেন, অধ্যাপক রেহমান সোবহানের একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন আগে একটি লেখা খুব সহজেই লিখে ফেলতে পারতাম। কিন্তু এখন একটি লেখা লিখতে গেলে ১০ বারেরও বেশি ভাবতে হয়।
সুলতানা কামাল বলেন, আমাদেরও এখন কথা বলতে গেলে অনেক ভাবতে হয়। যেন এখন আমাদের কথা কম বলার দায়িত্ব বেড়েছে। কথা বললেই সমস্যা। এখন কথা বলছি, সভা শেষে দেখা যাবে এখান থেকে কাউকে আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক মন্ত্রী আছেন, তারা ভাবেন আমার সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি কথা হয়। তারাও বলেন আপা আপনি একটু প্রধানমন্ত্রীকে বইলেন।
কিন্তু তারা নিজে প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারাও কথা বলতে ভয় পান।
তিনি বলেন, বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতির মধ্যে আমরা বাস করছি। একটা অনুষ্ঠানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আমাকে বলছিলেন আপা আমরা কিন্তু আপনাকে অ্যারেস্ট করতাম। কিন্তু আপনি এতো হাই প্রোফাইল যে করতে পারিনি। তখন আমি বললাম এই তো আপনাদের সমস্যা। প্রোফাইল ভারী হলে আপনারা কিছুই করতে পারেন না। লো প্রোফাইলের লোকজন হলে ধরে নিয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর প্রতিটি পৃষ্ঠায় মানবাধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার এখন কোথায়? মানবাধিকারের সূত্র হচ্ছে-যেখানে মানবাধিকার বিরাজ করবে সেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করবে, স্বাধীনভাবে চলাচল করবে। সেখানে সুশাসন বিরাজ করবে, মানুষ ন্যায় বিচার পাবে। আমরা এমন একটি দেশ চাই যেখানে সাম্য ও স্বাধীনতা বিরাজ করবে। যেখানে মানুষ মানবিক হবে, সর্বত্র মানবিকতা বিরাজ করবে। আমাদের সংবিধানে পরিস্কার করে বলা আছে, কোন মানুষ যদি অপরাধ করে তাহলে আইন অনুযায়ী সে শাস্তি পাবে। আমরা চাই একটি মানবিক সমাজ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নই ছিলো একটি মানবিক দেশ তথা মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধুর জীবনীর পাতায় পাতায় মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কেননা তিনি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি পর্যায়ে মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু মানুষের মানবিক মর্যাদার কথা বলেছেন। আমরা প্রত্যেকেই মানবিক মর্যাদার সাথে বাঁচতে চাই।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি একজন নাগরিক হিসেবে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও মুক্ত নির্বাচন চাই। যেখানে আমাদের ভোটের অধিকার, নির্বাচনের অধিকার থাকবে। আমরা জবাবদিহি করতে পারবো।
মতবিনিময় সভায় সাতক্ষীরা জেলা হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্কের আহবায়ক ও সিনিয়র সাংবাদিক এড. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ, শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক এডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল, প্রফেসর ড. দিলারা বেগম। বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, নারী নেত্রী এড. শাহানারা পারভীন মিলি, সিনিয়র সাংবাদিক এম কামরুজ্জমান, জাসদ নেতা ইদ্রিস আলী, ফরিদা আক্তার বিউটি, মুনসুর রহমান, ফয়জুল হক বাবু, সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আবুল কালাম, দলিত নেতা গৌরপদ দাশ, জোৎন্সা দত্ত, এড. বদিউজ্জামান, এড. আব্দুল্লাহ হাবিব, এড. ড, দিলিপ কুমার দেব, আলী নুর খান বাবলু, ভিকটিম তামান্না খাতুন, নাজমা পারভীন প্রমুখ।
সভায় সাতক্ষীরা জেলার মানবাধিকার পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সাতক্ষীরা জেলা হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব এড. মুনিরুদ্দীন।

– পত্রদূত নেট।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন