শেরপুরের নবাগত পুলিশ সুপারের ১০০ দিনের চ্যালেঞ্জ

দ্বারা Update Satkhira
০ মন্তব্য 204 দর্শন

 

জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কর্মস্থলে যোগদানের অব্যবহিত পর পরই স্বীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে পৃথক পৃথক মতবিনিময় সভা করে থাকেন- এটাই জনপ্রশাসনের চলমান ট্রেডিশন ও নির্দেশনা।

ওই ট্রেডিশনের ধারাবাহিকতায় গত ২২ সেপ্টেম্বর শেরপুরের গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন নবাগত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান রাসেল। তবে ওই মতবিনিময় সভাটি কেবল ধারাবাহিকতা রক্ষার লক্ষ্যেই করা হয়েছে- এমনটি ভাবার কারণ নেই। বরং সেটি ছিল ধারাবাহিকতা ও গতানুগতিকতার উর্ধ্বে এক ব্যতিক্রমী সভা। সভায় গণমাধ্যমকর্মীদের মতামত গ্রহণের পাশাপাশি নবাগত পুলিশ সুপার তার কর্মপরিকল্পনা বিশেষ করে সরকারের ভিশন-মিশন বাস্তবায়নে পুলিশের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং মাঠ পর্যায়ে পরিকল্পনাধীন ও বাস্তবায়নাধীন বিষয়গুলোর পাশাপাশি জেলায় ‘১০০ দিনের পরিকল্পনা’ অবহিতকরণের বিষয়টিই সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে।

গণমাধ্যম জগতে আমার ৩৫ বছরের বিচরণের অভিজ্ঞতা বলে, মতবিনিময় সভায় একজন নবাগত পুলিশ সুপারের ‘১০০ দিনের পরিকল্পনা’ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার ঘোষণা সত্যিই কেবল ব্যতিক্রমই নয়, বরং তা রীতিমত বিস্ময়কর, বিরল, সাহসিকতাপূর্ণ ও প্রশংসনীয় এক দৃষ্টান্ত।

১০০ দিনের সেই পরিকল্পনায় ৭টি বিষয়কে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে….

১. মাদক নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক কার্যক্রম গ্রহণ,

২. সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টিকারী অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ,

৩. স্পেশাল রেসপন্স টিম (এসআরটি) গঠন,

৪. টক টু এসপি সেবা (হট লাইন) চালু,

৫. আপনার এসপি আপনার কাছে কার্যক্রম চালু,

৬. মাসিক পুলিশ বুলেটিন চালু ও

৭. মামলা তদন্তে বিশেষ টিম গঠন।

কাজেই সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও উন্নয়নে নবাগত পুলিশ সুপারের ১০০ দিনের পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করা বিষয়গুলোও নি:সন্দেহে চমৎকার।

‘টক টু এসপি’ কর্মসূচীর আওতায় ইতোমধ্যে সুবিধা পেয়েছে সাইকেল হারানো শিশু স্কুল ছাত্র জুনায়েদ সিদ্দিক হাসিব। শহরের বাগরাকসা এলাকার বাসা থেকে বাইকেল সাইকেল হারিয়ে থানায় অভিযোগ ও জেলা পুলিশের হটলাইনে কল করে তার কান্না জড়িত আবেগ প্রকাশ করেছিল হাসিব। পরে তাকে নবাগত পুলিশ সুপার শুভেচ্ছাস্বরূপ নতুন বাইসাইকেল উপহার দিয়ে তার কান্না থামান। এছাড়া অগ্রাধিকার তালিকার অন্যান্য ক্ষেত্রেও মানুষ সুবিধা পেতে শুরু করেছেন। পুলিশের সার্বিক কর্মকাণ্ডে এসেছে ডিজিটাল বা নতুন গতি।

নবাগত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান রাসেল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করতে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তিনি পুলিশ বিভাগে একজন চৌকস, মেধাবী ও কর্মদ্যোগীসহ স্বপ্নসারথি কর্মকর্তা। কথার চেয়ে কাজে বিশ^াসী। নতুন কিছু করতে বা সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডকেই ভালোবাসেন তিনি। আইন-শৃঙ্খলার দিক দিয়ে শেরপুরকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে কাজ শুরু করেছেন তিনি। যোগদানের পর থেকেই গ্রহণ করেছেন ১০০ দিনের বিশেষ কর্মসূচীর চ্যালেঞ্জ।

২৫তম বিসিএস ক্যাডার নবাগত পুলিশ সুপার শেরপুরে পদায়নের পূর্বে পুলিশ হেডকোয়ার্টাসে মিডিয়া উইংয়ের দায়িত্বে ছিলেন বিধায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকার গুরুত্বারোপ করে মতবিনিমিয় সভায় বার বার তাদের সাথে ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্ক রাখতেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সেই সাথে তিনি তার ১০০ দিনের কর্মসূচীসহ জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাদক, জুয়া, ইভটিজিং, গুজব ও নারী নির্যাতনসহ সার্বিক অপরাধ দমনে পুলিশকে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরাও তার সাথে ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক বজায় রেখে ইতিবাচক সকল কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেও একইভাবে ব্যক্ত করেছেন সংকল্প।

বলাবাহুল্য, নবাগত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান রাসেলের যোগদানের সময়টাতে শেরপুরের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেন জানি অন্যান্য সময়ের চেয়ে কিছুটা ঘোলাটে। কারণ সাম্প্রতিককালে বিশেষ করে গত ২ মাসে জেলায় হত্যা, গুপ্ত হত্যা, আত্মহত্যা, ছিনতাই ও নারীর প্রতি সহিংসতার মতো অপরাধ বেড়ে গেছে। একইভাবে বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। তবে আশার কথা, সদ্য শেষ হওয়া শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তাই সাম্প্রতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে সামাজিক জনসচেতনতার যেমন বিকল্প নেই। তেমনই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়াতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা।

সুতরাং শান্ত শেরপুরকে আইন-শৃঙ্খলার দিক দিয়ে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে নবাগত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান রাসেলের সাহসী চ্যালেঞ্জই আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘মর্নিং শোওজ দ্যা ডে’। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী ও গণমাধ্যম কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় নবাগত পুলিশ সুপারের ১০০ দিনের চ্যালেঞ্জ সফল হোক, সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে শেরপুরের অবস্থান উচ্চতায় হোক অনন্য- এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের। জয়তুঃ ১০০ দিনের চ্যালেঞ্জ, জয়তুঃ নবাগত পুলিশ সুপার।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন